বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের পাঁচ অনুরোধ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পাঁচ অনুরোধ জানিয়েছে আহতরা।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহতদের পক্ষে এমন অনুরোধ জানান সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী মো. সালমান হোসেন।

তিনি বলেন, নিটোরে এখনও প্রায় ১০০ জন চিকিৎসাধীন। তাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, কারও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। সরকারকে এ দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সালমান হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল নিহতদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তাদের শহীদের মর্যাদা দিতে হবে এবং সকল নিহতদের পরিবারকে এককালীন ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি টাকা প্রদান করতে হবে।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক রোগী আছে যাদের অবস্থা আশংকাজনক তাদেরকে যেন অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।

আন্দোলনে আহতদেরকে এককালীন ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আহত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে এবং আহত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করতে হবে।

১০ দূতাবাসের কর্মকর্তার তথ্য চেয়েছে দুদক

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১০ দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুদককে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ১০ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা আজকের পত্রিকায় আমি প্রথম দেখলাম। এখানে কিছু কনফিউশান থাকতে পারে, সেগুলো আমরা দূর করবো। অডিট অবজেকশন এবং দুর্নীতি এক জিনিস না। একটি ছোট উদাহরণ দেই। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন কলকাতা মিশনের একটি গাড়ি কেনা হয়। এর চেয়ে অনেক ছোট গাড়ি দিল্লিতে কম দামে কেনা গেছে। অ্যাডভান্স দেওয়া হয়েছে এজেন্টকে, এজেন্ট মানে দালাল। আসলে গাড়ির কোম্পানির এজেন্ট ওরা। অভিযোগ এসেছে যে দালালকে দেওয়া হয়েছে চার লাখ টাকা সেটা আদায়যোগ্য। অবজেকশনটা আমার বিরুদ্ধে। এটা আমি কেন দিলাম, আমার কাছ থেকে নাকি এ টাকা আদায়যোগ্য হবে। মিশন অডিটের ডিজিকে বললাম গাড়ি কিনতে হলে বুকিং দিতে হয়, সেজন্য আগাম কিছু টাকা দিতে হয়। অডিট অবজেকশন অনেকসময় এরকম হয়। সেগুলোকে দুর্নীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে কি না দেখতে হবে। কারণ অভিযোগের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এগুলো অনেকগুলো অডিট অবজেকশনের ফলাফল। অডিট অবজেকশন আর দুর্নীতি এক জিনিস না। আমরা দেখবো।’

দুদককে সহযোগিতা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সহযোগিতা তো অবশ্যই করবো। আমরা তো চাই না কোনো দুর্নীতি হোক। কাজেই যেটুকু সহযোগিতা চাইবে আমরা করবো, দেখতে হবে দুর্নীতি হয়েছে কি না। সেটা দেখে সেভাবে সহযোগিতা করবো।’

সময়ের সাথে সাথে চাপ বাড়ছে নেতানিয়াহুর

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করে পণবন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করার দাবিতে তৃতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল। তেল আভিভের এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চাপে ফেলেছে।

যদিও নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় তিনি কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না।

কয়েকদিন আগে গাজায় ইসরায়েলের সেনা পৌঁছানোর কয়েকঘণ্টা আগে ছয়জন পণবন্দির দেহ উদ্ধার করা হয়। তানিয়ে ইসরায়েলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, সময় দ্রুত কমে আসছে। বাকি যে সব পণবন্দি গাজায় আছেন, তাদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক। গাজায় এখনো একশ জনের মতো পণবন্দি আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে। মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্যে তারা এই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘গাজায় ছয়জন পণবন্দির হত্যা একটা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে পারব।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘একটা চুক্তি করার সময় এসেছে। মিশর ও কাতারের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র আগামী দিনে সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।’

মিলার বলেছেন, ‘প্রচুর পণবন্দি এখনো গাজায় আছেন। তারা এই চুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন। ইসরায়েলের মানুষও আর অপেক্ষা করতে রাজি নন। ফিলিস্তিনিরা এই যুদ্ধের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের জন্যও দ্রুত এই চুক্তি হওয়া দরকার।’

কিরবি ও মিলারের এই প্রতিক্রিয়া নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পরে এসেছে। নেতানিয়াহু সোমবার এটাও বলেছিলেন, ইসরায়েলের সেনা কিছুতেই গাজা ও মিশরের সীমান্ত থেকে সরবে না। হামাস জানিয়েছে, যে কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনার পূর্বশর্ত হলো, এই সেনা সরাতে হবে।

নেতানিয়াহু কি বন্দিবিনময়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছেন, এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুধু বলেছেন, ‘না’।

জাতিসংঘে স্লোভানিয়ার দূত এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল জুবোগার বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে তাদের ধৈর্য শেষ হয়ে আসছে। তিনি বলেছেন, যদি কোনো যুদ্ধবিরতি না হয়, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাববে।

তিনি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ মনে করছে, হয় এই চুক্তি হোক, তারপর পরিষদ তা বিচার করবে অথবা পরিষদ এই চুক্তির জন্য যা করার করবে। তিনি জানিয়েছেন, ‘যাই হোক না কেন, তা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। আমরা চাইছি বলে হবে তা নয়। আসল কারণ, ধৈর্য শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

৩০ হাজার মেট্রিক টন সার কিনবে সরকার

সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বিতীয় ক্রয় কমিটির বৈঠক।

কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈঠকে সার, এলএনজি এবং মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অতএব অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লাক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ৩৪৩ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার।

আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সভায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকেও ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই সার কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩০ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।

এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে সার কেনা সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

হাজী সেলিম ৫ দিনের রিমান্ডে

ঢাকা-৭ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।

এর আগে, আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যার ঘটনায় লালবাগ থানায় করা মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।

অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার রাত পৌনে ১টার দিকে তাকে রাজধানীর বংশাল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুদকে ৯৪ জনের পদোন্নতি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিভিন্ন বিভাগ ও পদে ৯৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক দাউদ হোসেন চৌধুরীর সই করা পৃথক পৃথক অফিস আদেশে এসব পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৫ বছর পর এই প্রথম একসঙ্গে এত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, সোমবার পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উপসহকারী পরিচালক থেকে সহকারী পরিচালক পদে ৬ জন ও প্রধান সহকারী থেকে উপ-সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ৪০ জন।

তিনি আরো বলেন, উচ্চমান সহকারী থেকে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ৬ জন, উচ্চমান সহকারী থেকে সহকারী পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২১ জন, ডাটা অপারেটর থেকে উচ্চমান সহকারী পদে ২ জন, অফিস সহায়ক থেকে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে ৬ জন এবং কনস্টেবল থেকে কোর্ট সহকারী (এএসআই) পদে ১৩ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।

এর আগে, গত ২৯ আগস্ট ৯ জনকে উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

অভিভাবকহীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ দিন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৬ দিন ধরে উপাচার্যবিহীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি ওঠে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। ফলে আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছিলেন, তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা।

গত ৭ আগস্ট ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম পদত্যাগ করেন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হাসানও পদত্যাগ করেন।

গত ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ পদত্যাগ করেন এবং গত ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক, একাডেমিক জটিলতা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদান-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন না থাকায় সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী, যারা এখনো সনদ উত্তোলন করেননি।

এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেশন-জটের আশঙ্কা করছেন, তারা বলছেন, যত দ্রুত উপাচার্যসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রদান করবে, তত দ্রুত একাডেমিক অন্যান্য কাজে সচলতা আসবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, উপাচার্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। অভিভাবক ছাড়া যেমন একটা পরিবার চলতে পারে না, অনিরাপদ ও অনিশ্চয়তায় ভোগে, ঠিক আমরা অনিশ্চয়তায় ভুগতেছি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একজন যোগ্য, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ করবেন।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার জন্য উপাচার্য থাকা আবশ্যক। এ ছাড়া উপাচার্যবিহীন একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্য অনিরাপদ।

তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫৩তম আবর্তনে অনেকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে এবং ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো ক্লাস শুরু করতে পারেনি। এতে তারা শিক্ষাজীবন থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তাই আমি আশা করব, সরকার দ্রুত একজন দক্ষ উপাচার্য নিয়োগ দেবে।

এটি সর্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাবির নতুন ভিসি

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পূর্ণ মাত্রায় চালু করার আশা প্রকাশ করেছেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে একশ ভাগ নিখুঁত পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছি না। যতটুকু পারি শুরু করব।’

বুধবার দুপুরে উপাচার্য কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ বলেন, ‘আমার টিম এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমরা ক্রমাগত অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। সবার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে চালু করার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ আবাসিক হল থেকে শুরু করে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক যায়গায় অচলাবস্থা আছে। আমি সব মহলে কথা বলার চেষ্টা করছি। এটি সর্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি আমি খুব আন্তরিকভাবে মনে করি। আমার টিম এখনো পুরোপুরি কার্যভার নেননি। তাদের সহযোগিতার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।’, যোগ করেন উপাচার্য।

জবিতে বহিরাগত উপাচার্যদের জন্য ‘গেইটলক’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যতীত অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য হতে যদি উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ‘বহিরাগত উপাচার্যদের জন্য গেইটলক’ নামে একটি ব্যানার টানানো হয়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত ৯ টার দিকে এ ব্যানার টানানো হয়। এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জবির শিক্ষকদের মধ্য হতে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে চতুর্থ দিনের মত বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য হতে উপাচার্য নিয়োগের দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এখানে বিগত দিনে যত উপাচার্য এসেছে তারা শুধু নিজেদের রুটিন দায়িত্বই পালন করে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা সমাধানের দিকে তাদের কোন নজর থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতেই বছরের পর বছর লেগে যেত পূর্বের উপাচার্যদের। পরবর্তীতে সমস্যা সমাধানের নাম করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে চলে গেছে। আমরা আর কোন বহিরাগত উপাচার্য চাই না। যিনি আমাদের উপাচার্য হবেন তার মেয়াদ শেষ হলে আমরা যেন তাকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে পারি সেজন্য হলেও আমাদের শিক্ষকদের মধ্য হতে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, আমাদের দাবি একটাই যিনি আমাদের উপাচার্য হবেন তাকে অবশ্যই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হবে। বিগত দিনে আমাদের এখানে যারাই উপাচার্য হয়ে নিয়োগ পেয়েছেন তারা আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মৌলিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ কীভাবে লুট করা হয়েছে উপাচার্যদের মাধ্যমে তা আমার সাবেক উপাচার্যদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। আমরা এই নতুন বাংলাদেশে সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে চাই। আমাদের উপাচার্য যদি আমাদের শিক্ষকদের মধ্য হতে হয় তাহলে তার মেয়াদ শেষ হলেও তাকে তার কাজের জন্য জবাবদিহিতা আওতায় নিয়ে আসতে পারবো৷ তার থেকেও বড় কথা হলো আমাদের শিক্ষকেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যা সম্পর্কে অবিহিত। উপাচার্য হওয়ার পরই সে আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, বিগত ১৬ বছরের আমার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্য থেকে উপাচার্য দিতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা ‍ও কর্মচারীবৃন্দ মানবেনা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য হতে উপাচার্যের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে আসছে শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পাশাপাশি প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষক শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর করে তা শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠান গত ২৬ আগস্ট।

কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ ঢাবির নতুন প্রক্টর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদূর রহমান ও পুরো প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগের পর দীর্ঘদিন প্রক্টরহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেলেন শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দীন।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা-২) স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাবি উপাচার্য সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীনকে কাজে যোগদানের তারিখ থেকে প্রচলিত শর্তে পুনরাদেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এ জন্য তিনি বিধি মোতাবেক ভাতা ও সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। এ নিয়োগ অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন সময়ে এ নিয়োগ বাতিল করা যাবে।