পুরো পৃথিবী আজ একটি ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে। মানবজাতি আজ মৃত্যুভয়ে যার যার ঘরে স্বেচ্ছায় বন্দী জীবনযাপন করছে।পুরোপৃথিবীর অর্থনীতির চাঁকায় আজ যেন মরচে ধরে গেছে।সকল অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো আজ ভুতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
অফুরন্ত এক অবসর যেন শেষ হবার কোন লক্ষণ নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলা যায়ঃ- "সামনে যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায়,ছুটি ধূ ধূ করিতেছে; পরীক্ষা নাই, উমেদরি নাই, চাকরি নাই।"
এই অবকাশের মরুভূমির মধ্যে সবার হৃদয় আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।যতটুকু সম্ভব ঘরে বসে কাজ করতে হবে।এই অফুরন্ত অবসরকে নষ্ট না করে বরং সময়টাকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হিসেবে তৈরি করতে হবে।বিশেষ করে যারা পিএসসি, জেএসসি/জেডিসি, এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম এবং এডমিশন টেস্ট দিবে তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই লিখাটি। অনেকেই হয়ত অবাক হচ্ছো, আবার অনেকে হয়ত বিরক্ত। তবে হ্যাঁ, কিভাবে এই সময়কে সবচাইতে মূল্যবান করে তোলা যায় তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা।
২. একটা রুটিন তৈরি করে নাওঃ প্রতিদিন তুমি কি কি পড়বে সেটা আগের দিন রাতেই লিস্ট করে ফেলো। (যে বিষয়গুলোতে দুর্বল সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিবে) এবং প্রতিটি সাবজেক্টকে সময় অনুযায়ী ভাগ করবে।
৩.অসমাপ্ত পড়ার লিস্ট তৈরি করোঃ একই সাথে আজকে কোন পড়াগুলো তুমি পড়তে পারোনি সেগুলোও প্রতিদিন লিস্ট করে নাও।এতে নিজের মধ্যে খারাপ লাগা জন্ম নেবেনা এবং না পড়তে পারা পড়ার হারও দিন দিন কমে যাবে।
৪. পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখোঃ যখন তুমি পড়ছো তখন যদি একটু পর পর ফেইসবুক,ইমেইল কিংবা টেক্সট আসার শব্দ তোমার কানে বাজে তাহলে পড়ায় বিঘ্ন ঘটাবে তাই পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রেখো।
৫. ফেইসবুকের যথাযথ ব্যবহার করোঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক আমাদের অনেক কাজে লাগে।কিন্তু এটাও চরম সত্য যে ফেইসবুকের কারণে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া ফেইসবুক থেকে দূরে থাকো।
৬. ভালো ভালো মুভি দেখোঃ অনেকেই হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় নষ্ট করছো।এগুলোতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই।আবার অনেকে ফ্রি-ফায়ার,পাবজিতে ডুবে গেছো। এগুলো বাদ দিয়ে ইংরেজি, তুর্কি, ইরাণী বিখ্যাত মুভিগুলো ইংরেজি সাবটাইটেল সহকারে দেখতে পারো।এতে করে ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে পারবে পাশাপাশি ভেতর থেকে প্রেশার ও রিলিজ হবে এবং অনেক কিছুই শিখতে পারবে।
৭. প্রেসার নিয়ে কাজ করবেনাঃ যদি একটানা ১২ ঘন্টা পড়াশোনা করে সব শেষ করার পরিকল্পনা করো তাহলে বলবো এটা পরিহার করো। আমার মতে পড়াটাকে ছোট ছোট সময়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নাও।ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়ো।এতে বিশ্রাম ও হবে এবং পড়ার প্রতি মনযোগ ও বাড়বে।
৯.আর্টসের শিক্ষার্থীরা বাংলা,ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রিপারেশন নাও। মেডিকেলে যারা পরীক্ষা দিবে ভাবছো তারা মেডিকেলের পাশাপাশি বাংলা টাও পড়ে নাও এই সুযোগে। তাহলে মেডিকেলে যদি নাও হয় তবু্ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ইউনিট তোমাদের জন্য খোলা রয়েছে। অন্যান্য গ্রুপের যারা আছো তারাও নিজেদের লক্ষ্য স্থির করে সে অনুযায়ী এডমিশনের প্রিপারেশন নাও।
১০.তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছো যারা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অথবা কারো অনেক সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। কেউ ভালো ছবি আঁকতে পারো, কেউ বা ক্রাফটিং করতে পছন্দ করো সর্বোপরি যে যে বিষয়ে পারদর্শী বা পারদর্শীতা অর্জন করতে চাও তাদের জন্য কিন্তু এই সময়টা বেস্ট সময় নিজেকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
তোমরা চাইলেই এই সময়টাকে অর্থবহ করে তুলতে পারো।ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরী করতে পারো। মনে রাখবেঃ- "সময়=জীবন।তাই সময় নষ্ট মানে জীবনের অংশ নষ্ট করা।সময়কে কাজে লাগাও।জীবনও অর্থপূর্ণ হবে।"--এ্যালান লাকেইন।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।