‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের আয় মাসে ৩০ হাজার টাকা
করোনা সংকট সময়ে অনেক শিক্ষার্থী যেখানে অর্থকষ্টে জর্জরিত, আবার কেউ বা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে
অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অসিত মন্ডল।
অসিত মন্ডল করোনার এই অবসরে কাছের এক সহপাঠীর বড় ভাইয়ের পরামর্শে চীনা প্রজাতির বেইজিং হাঁস পালন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এখন সে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালিক এবং মাসিক আয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার।
বেইজিং হাঁস পালনে সফলতা নিয়ে অসিত মন্ডলের সাথে কথা বলেছেন দ্য ক্যাম্পাস টুডের স্টাফ রিপোর্টার সাগর দে।
করোনার এই সময়ে হঠাৎ কি ভেবে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন?
আমি এই হাঁস সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় মার্চের প্রথম সপ্তাহে এই হাঁস পালন শুরু করি যাতে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে পারি।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে হাঁস পালনে পরিবার থেকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল?
প্রতিবন্ধকতা তো ছিলোই। যখন আমি উদ্যোগের কথা পরিবারকে প্রথমে জানাই তখন বলছিলো- ‘অল্প বয়স তোর, তুই পারবি না’। এই প্রজাতির হাঁসের চল আমাদের এদিকে নাই। যদি হাঁসের বাচ্চা বাঁচাতে না পারিস? ডিম ফোটাতে পারিস না একেবারে নতুন কি দিয়ে কি হবে তার থেকে এসব বাদ দে। কিন্তু এসব কথা না শুনে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে হাঁস পালন করি। শুধু বলেছিলাম আমি বিস্তারিত শুনেছি এক বড় ভাইয়ের থেকে দেখি কি হয়!
প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অনুপ্রেরণা পেলেন কিভাবে?
ওই যে বললাম এক ভাই। তিনি আমার এক বন্ধুর বড় ভাই। বন্ধুর মুখে শোনা আর তার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে।
বেইজিং হাঁস কোথায় পেলেন, প্রথমে কত হাঁস নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু ?
ওই বড় ভাইয়ের থেকে প্রথমে ২০০ হাঁস কিনে খামারের যাত্রা শুরু। যার দাম প্রায় ২০০০০ টাকা।
শুরুতে এতগুলো টাকা কিভাবে পেয়েছিলেন?
আমার সঞ্চয়ের কিছু টাকা আর বাকি টাকা পরিবার থেকে দিয়ে ছিল।
বেইজিং হাঁস সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
বেইজিং হাঁসকে অনেকে রাণী হাঁস বলে। ৫ মাস পর বড় হলে এর ওজন প্রায় ৩-৩.৫ কেজি এবং ৬ মাস পর এরা ডিম পারা শুরু করে।প্রতিটি ডিমের দাম ২০ টাকা। এর মাংস খেতেও অনেক সুস্বাদু এবং মাংসের কেজি ৩৫০ টাকা। এছাড়া ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করলে প্রতি পিস হাঁসের দাম ১০০ টাকা।
এখন আপনার মাসিক ইনকাম কত?
শুধু ডিম বিক্রি করলে মাসে ১৫ হাজার মতো থাকে তবে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করলে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে বর্তমানে খামারে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার হাঁস আছে।
ডিম কি তা দিয়ে ফুটান না মেশিন আছে?
প্রথমে তা দিয়ে ফুটাতাম। যখন আমি সফল হলাম তখন আমার অনির্বাণ মামা খুশি হয়ে ফ্রি একটি মেশিন বানিয়ে দেন যার দাম প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এই মেশিনে একসাথে প্রায় ৫০০০ ডিম ফুটানো যায়।
ভবিষ্যৎ খামার নিয়ে পরিকল্পনা কি?
সফল হওয়ার পর পরিবার থেকে এখন বলছে বড় আকারে করতে।আমার ইচ্ছেও এই খামার বড় পরিসরে করার। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বড় করে খামার ঘর করবো বাড়ির আঙিনায়।
শেষ প্রশ্ন, প্রতিবন্ধকতার পেরিয়ে আজ আপনি সফল উদ্যোক্তা, এব্যাপারে আপনার অভিমত?
আজ আমি সফল হতে পেরে অনেক খুশি। আরও বেশি ভালো লাগে যখন আমার সহপাঠীরা এব্যাপারে আগ্রহী হয়, আমার কাছে পরামর্শ নেয়। শুধু পরামর্শ বা সহপাঠী নয় আগে এলাকার যারা সমালোচনা করতো তারও এটা করতে আগ্রহী।
ইতিমধ্যে পরিচিতদের মধ্যে অনেক ৭০০ থেকে ৮০০ হাঁসের অর্ডার পেয়েছি। আর শেষে এটাই বলবো অনেকে আছে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পায় না, বেকার থাকে। তাদের উদ্দেশ্য বলবো কোন কাজই ছোট নয়, শুধু চাকরির পিছনে না দৌড়াদৌড়ি করে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলে যে কেউ সফল হতে পারবে।