অ্যালকোহল ও হুজুগে বিজ্ঞানী
ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
অ্যালকোহল দিয়ে করোনাভাইরাস মারার নতুন পদ্ধতি নাকি আবিষ্কার করছেন। অ্যালকোহল যদি জীবাণুনাশ বা ভাইরাস না মারত তাহলে কেন আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার কথা বলি।
স্যানিটাইজারেতো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল বা ইথানল থাকে। ৭০% ইথানল তো স্বাভাবিকভাবেই জীবাণুনাশক। তিনি (গবেষক) আবার বললেন সরকার বললে তিনি গবেষণা শুরু করবেন। হায়রে গবেষণা, আর হায়রে গবেষক!! ইনকজেক পুশ করার আগে কি কখনই ডা. বা নার্স অ্যালকোহল দিয়ে আপনার হাত পরিষ্কার করেনি?
১৩৬৩ সাল থেকেই অ্যলকোহল এন্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। অথচ নতুন আবিষ্কার বলে জাতীয় টেলিভিশন গুলোও তা প্রচার করছে। সাংবাদিকরাও আর নিউজ পায়না। পশ্চিমা দেশ গুলোতো তো অ্যালকোহল পানই করে। তাদের কেন এত করোনা ইনফেকশন হয় বা করোনায় মারা যাচ্ছে?
তবে চায়নাতে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া অনেক লোকই বলেছেন তারা গরম পানির বাষ্প নিয়েছেন যা নিয়োমোনিয়া বা শ্বাস কষ্ট লাঘব করে। আর করোনা ফুসফুসে আক্রমণ করে বিধায় সাধারণ উপসর্গ জ্বর ও কাশির সাথে সাথে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাটিই মূলত ভোগায়। তাই গরম পানির বাষ্প হয়তো সুফল বয়ে আনে।
এছাড়া বাংলাদেশে যেখানে ভেজাল যুক্ত মদ খেয়ে অনেক লোক মারা যায়, সেখানে ভেজাল মুক্ত অ্যালকোহল পাওয়া খুবই দুষ্কর। যারা মলিকিউলার বায়োলজির গবেষণা করেন তারা বিশুদ্ধ অ্যালকোহলের দুষ্প্রাপ্যতা সম্পর্কে ভালো জানবেন। তাই শেষে দেখা যাবে ভেজালযুক্ত অ্যালকোহলের বাষ্প নিয়ে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
ধন্যবাদ ড.হাসানুজ্জামান কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে প্রকাশিত একটি দূর্বল আর্টিকেল কমেন্টে যুক্ত করার জন্য, যেটি আমাদের গবেষক কপি করে বড় বিজ্ঞানী হবার চেষ্টা করছেন। উলেখ্য যে, এটি কোন জার্নাল না। ফলে এটার পিয়ার রিভিউ নেই। এটা অনলাইন রিপোজিটরি। সবশেষে বলে রাখি, ইরানে কিন্তু করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য অ্যলকোহলের গুজব শোনে ভেজাল মদ খেয়ে ইতিমধ্যে ৭৩ মতান্তরে ১০০ বা ৬০০ লোক মারা গেছে।
মনে রাখবেন, অ্যালকোহল লিভার ড্যামেজ ও ক্যান্সার সহ প্রায় ২০০ ধরনের রোগ আপনার শরীরে সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যালকোহল থেকে এর বাষ্প বেশি ক্ষতিকর। কারণ এটি সরাসরি ব্রেইনে চলে যায়। ফলে নেশা তীব্র হয় এবং এটি ফুসফুসকে ড্যামেজ করে। আর যা ফুসফুসের ড্যামেজ করে তা কি করে করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়? করোনা ভাইরাসও তো ফুসফুসের ক্ষতি করে। আপনারা কি করবেন? বিষয়টি ভেবে দেখেন।
লেখকঃ অধ্যাপক, ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ফার্মেসি বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।