আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী
প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা
আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী। বাবা-মা’র কনিষ্ঠতম সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদা দেবী। রবীন্দ্রনাথকে মনে করা হয় বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক।
তিনি ছিলেন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীত স্রষ্টা, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু, বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।
মৃত্যুর সাত দিন আগেও রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯১৫টি গান রচনা করেন এবং ২০০০ এর অধিক ছবি এঁকেছেন।
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song offerings’ এর জন্য নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি আমেরিকার বোস্টন এবং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আমন্ত্রণে বক্তব্য প্রদান করেন। রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করেন। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরী, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, গ্রীস, মিশর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইরান, ইরাক, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা এর মধ্যে অন্যতম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
পারিবারিক জীবন
কবিগুরু ১৮৮৩ সালে ২২ বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮৮৬ সালে তঁাদের ঘর আলোকিত করে প্রথম কন্যা সন্তান মাধুরীলতার জন্ম হয়। ১৮৮৮ সালে জন্ম হয় তঁার প্রথম পুত্র রথীন্দ্রনাথের। ১৮৯০ সালে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান রেনুকার পিতা হন। ১৮৯৪ সালে তৃতীয় কন্যা সন্তান মীরা এবং ১৮৯৬ সালে পুত্র শমীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করে।
পারিবারিক জীবনে তাঁর বিয়োগব্যথাও কম নয়, ১৯০২ সালে কবিগুরুর স্ত্রী মারা যান। এর ৬মাস পরে মারা যায় দ্বিতীয় কন্যাসন্তান রেনুকা। ১৯০৫ সালে মারা যান বাবা দেবেন্দ্রনাথ, ১৯০৭ সালে শমী মারা যায়। ১৯১৮ সালে মারা যায় প্রথম সন্তান। তঁার জীবনে কষ্ট ছিলো, দুঃখ ছিলো, ছিলো বেদনা কিন্তু তাঁর সৃষ্টিশীল কাজ কখনো থেমে থাকেনি।
রবীন্দ্রনাথের জীবনে দু-একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেষ করবো। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে মহাত্মা গান্ধী ‘ঈশ্বরের রোষ’ বলেছিলেন, কবিগুরু গান্ধিজীর এ বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন। প্রেম সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন- প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না। তিনি এও বলেছিলেন- আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না।
বিশ্বকবি ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট ৮০ বছর বয়সে কিডনি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১৫৯তম জন্মজয়ন্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি জানাই আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখকঃ উপ-উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।