আর কত নারী ধর্ষণ?

আর কত নারী ধর্ষণ?

আরিফ হোসাইন হিয়া


সবুজ ঘাসে রক্তের আল্পনা। বিধ্বস্ত জীবন। হায়েনার অট্টহাসিতে ভীত নারী। একের পর এক ঘটছে ধর্ষণ-নির্যাতন। কোন অবস্থায় যেন রেহাই পাচ্ছেনা নারীরা। নারীদের প্রতি মাত্রা ছাড়া নির্মমতায় বিবেকবান মানুষ হতবাক হচ্ছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের জন্য কতিপয় একটা চক্রীয়মহল দায়ী।

আমার মনের হয় কোন স্বার্থনেস্বী গোষ্ঠীর প্রভাবে ও অর্থ আদায়ে লোভে পড়ে এমন ধরনের যঘন্য কাজ সংঘটিত করে আসছে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে নারীদের। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের নির্মম নিষ্ঠুরতা ঘটছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও নেতিবাচক সামাজিক মনোভাবের কারণে একের পর এক নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক নৃশংসতার ঘটনাই আলোচিত হচ্ছে বেশি।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিচারহীনতায় দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ। গত ১১ মাসে খুন হয়েছে ২৪৫ শিশু। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩২৮ জন নারী। এসিডে ঝলসে গেছে ৩৩ নারী-শিশুর মুখ। এছাড়া যৌন হয়রানি এবং অন্যান্য নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন অনেকে। (দৈনিক যুগান্তর ২০২০) ধরে দেয়া সময়ের মধ্যে বিচার না হওয়া এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নারীদের প্রতি আরো নৃশংসতা বাড়ছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারলে এসব ঘটনা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন।

এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে ন্যায্য বিচার না পাওয়ার কারণে নারীর ওপর হামলা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। চোখের সামনে নারী নির্যাতন হলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। এতে করে এক ধরনের ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো নারী যদি তার ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সমাজ তাকে নানাভাবে হেয় করে। নারী নির্যাতনে বিচারকার্য বিলম্বিত করতে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তার করা হয়। আর ন্যায্য বিচার না হওয়ায় বিভিন্ন কৌশলে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাচ্ছি যে, নারীর যেমন প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়ছে ঠিক অন্যদিকে নারী সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আমাদের প্রশ্ন জাগে আমরা এমনই সমাজে বসবাস করছি? যেখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে নারী ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন এমনকি নানান সহিংসতা। আর আমরা মিড়িয়ার মাধ্যমে অবজারভ করছি নীরব দর্শক হয়ে। এভাবে আর চলতে পারেনা। আমাদের উচিত হবে এরকম সকল অন্যায়মুলক প্রতিটি ঘটনার ন্যায় বিচার আদায় করে নেওয়া।

এছাড়া এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য বিভিন্ন ধরণের কৌশল প্রয়োগ করা। চলন্ত বাসে আমরা নারীদেরকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও নির্যাতিত হতে দেখেছি । এইসব আর কত দেখতে হবে আমাদের? এখান থেকে কি কোন সুরহা নেই?এরপরেও নারীদের সাথে অপ্রীতিকর কোন আচরণ করলে সরকারের উচিত হবে আইনের নজরদারি বাড়ানো এবং যথেষ্ট শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রনয়ণ করা এবং সেই আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

আইন থেকে যদি সে আইনের কোন প্রয়োগ না হয় তাহলে কি এ ধরনের অকেজো আইনের কোন দরকার আছে? এই জন্য নারী পুরুষ উভয়ে মিলে আন্দোলন করতে হবে। শুধু মিড়িয়া পাড়ার প্রচার ও নীরব প্রতিরোধ দেখে বসে থাকা যাবেনা। আমরা কোন নারীর সাথে নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের মত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা দেখতে চায়না। দেখতে চায়না কোন জীবনের অপমৃত্যু। আমরা নিরাপত্তা চাই, সকল বৈষম্য ভুলে গিয়ে স্বাধীনভাবে বাচঁতে চাই।

লেখক: আরিফ হোসাইন হিয়া
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *