জাবি প্রতিনিধিঃ সারাদেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ১৭ই এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মোহাম্মদ জুয়েলকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগরের ৫টি কলেজ, ২টি মহানগর ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠিত হয় এবং ইতিমধ্যে ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের তোরজোর জোরেশোরে শুরু হয়েছে। ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আসন্ন কমিটিকে সামনে রেখে গ্রুপ-উপগ্রুপ এবং অঞ্চল ভিত্তিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দদের তৎপরতা তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এতে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বর্তমানদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক নেতারা। লবিং-গ্রুপিং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন সাবেক নেতারা কারো কারো পক্ষ থেকে সুপারিশ করছেন বর্তমান নেতারা। একপক্ষে সাবেক লোকাল গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি অপরদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির এক নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত জাবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ- সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জাকির ও জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ ভূইয়া নিজেদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাবি করলেও ক্যাম্পাস রাজনীতিতে তারা অভি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে সুপরিচিত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিগত কমিটিগুলোর মতো একটা মোটা অংকের অর্থ ভাগ পাওয়ার লক্ষ্যে সাবেক নেতৃবৃন্দরা উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজ অনুসারীদের পদ বাগিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনেকে মনে করে থাকেন। যার কারণে ত্যাগী ও পরিশ্রমী ছাত্রদলের কর্মীদের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বিগত সময়ে আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীরা খোকন-শ্যামলের অনুসারী হওয়ায় আলোচনা থেকে ছিটকে পড়েছেন। গ্রুপের নীতিনির্ধারকেরা গ্রুপের প্রার্থী বাছাই-এ প্রার্থীদের স্থায়ী নিবাসকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে জানা যায়। সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগরীর কলেজ ও মহানগর সমূহে বিশেষ অঞ্চলের প্রাধান্য পাওয়ার কারণে অঞ্চলের প্রার্থীদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন অনেক নেতারা।আবার চূড়ান্ত ফলাফল নিজের গ্রুপের প্রার্থীদের পক্ষে আনার জন্য লোকালদেরকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন উপ-গ্রুপের নেতারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রুপের পছন্দের তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানরা।
আসন্ন কমিটিকে ঘিরে সভাপতি হিসেবে আলোচনায় আছেন
আব্দুর রহিম সৈকতঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, স্থায়ী নিবাস চাঁদপুর জেলা। জাবি ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিগত কমিটির সভাপতি সোহেল রানা দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরে সে সংগঠনকে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। যদিও তিনি বিভিন্ন সময়ে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন।
এস এম ফয়সাল হোসাইনঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, জাবি ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি। স্থায়ী নিবাস বরিশাল হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছেন বলে তিনি বিভিন্ন মহলে প্রচার করে থাকেন। তার অবশ্য হামলা-মামলা-নির্যাতন নেই। বরিশাল নিবাসী প্রভাবশালী একজন সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস তার খালু এবং উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামের আস্থাভাজন হিসেবে তার নাম সভাপতি পদে ব্যাপকভাবে আলোচিত। ঢাকার মোহাম্মদপুরের স্থায়ী নিবাসী। নাজমুল হাসান অভির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার পক্ষে জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের সমর্থন জালিয়াতি ও মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
নবীনুর রহমান নবীনঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, পোষ্য সন্তান। বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হওয়ার সুবাদে আশুলিয়া নিবাসী। জাবি ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি। তার মামলা-হামলা-নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জাকিরের অনুসারী হিসেবে তিনি পরিচিত।
জহির উদ্দীন মোঃ বাবরঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, স্থানীয় নিবাস কুমিল্লা। জাবি ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক।হামলা-মামলা-নির্যাতনের স্বীকার। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ও উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয়।
উল্লেখযোগ্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীসমূহ
মোঃ আফফান আলীঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, স্থায়ী নিবাস কুষ্টিয়া। হল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। মামলা-হামলা-নির্যাতনের স্বীকার। ছাত্রলীগের হামলার স্বীকার হয়ে দীর্ঘদিন কিডনি সমস্যায় ভুগেছে। জাবি ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া এবং উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
ইব্রাহীম খলীল বিপ্লবঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি ২০০৭, স্থায়ী নিবাস লক্ষীপুর। পারিবারিকভাবে সাভার পৌর নিবাসী। জাবি ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি। হামলা-মামলা-নির্যাতনের স্বীকার। ছাত্রলীগের নির্যাতনে স্বীকার হয়ে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের অনুসারী এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন এ্যানীর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
ইসরাফিল চৌধুরী সোহেলঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৭, স্থানীয় নিবাস, নোয়াখালী। পোষ্য সন্তান। সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। মামলা-হামলা-নির্যাতন আছে। অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। অভি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
সাইফুল ইসলাম সাগরঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৬, পোষ্য সন্তান। স্থায়ী নিবাস মানিকগঞ্জ একাধিক মামলার স্বীকার।প্রথম বর্ষে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। হল কমিটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক। জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের পরিচয় দিয়ে থাকে। রাজনীতিতে অনেকটা নিস্ক্রিয়।
সেলিম রেজাঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৮, স্থানীয় নিবাস ঈশ্বরদী। হল কমিটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক। আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়। মামলা-হামলা-নির্যাতন উল্লেখযোগ্য নেই। জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
আব্দুল কাদির মার্জুকঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৭, স্থানীয় নিবাস টাংগাইল। সাবেক হল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। মামলা-হামলা-নির্যাতন উল্লেখযোগ্য নেই। সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
হুমায়ুন হাবীব হিরনঃ শিক্ষাবর্ষঃ এসএসসি-২০০৭, স্থানীয় নিবাস রাজশাহী। সাবেক হল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি খোকনের অনুসারী। মামলা-হামলা-নির্যাতন নেই। আসন্ন কমিটিকে কেন্দ্র করে সক্রিয়।কেন্দ্রীয় বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের প্রার্থী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে থাকে।
এছাড়াও আলোচনায় আছেন অনিক, রোমান, শুভ, ইকবাল, তমাল, জোবায়ের, রাজু,জুয়েল সহ অনেকে। কমিটিকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক নেতারা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গ্রুপ-উপগ্রুপের সংখ্যাকে প্রাধান্য না দিয়ে ত্যাগী-যোগ্য-সৎ ও সক্রিয় কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন।