আবুল বাশার রিপন খলিফা
যিনাʾ (زِنَاء) বা জিনা (زِنًى বা زِنًا) হল অবিবাহিত দুইজন মানুষের মধ্যে যৌনক্রিয়া। ব্যুৎপত্তিগতভাবে: যিনা হল ইসলামি বৈবাহিক নিয়ম অনুযায়ী পরস্পর অবিবাহিত একাধিক মুসলিমের মাঝে অবৈধ যৌন সম্পর্ক বিষয়ক একটি ইসলামি নিষেধাজ্ঞা। বিবাহোত্তর যৌনতা এবং বিবাহপূর্ব যৌনতা, যেমনঃ
● ধর্ষণ (জোরপূর্বক অবৈবাহিক যৌনসঙ্গম) এর অন্তর্ভুক্ত (ধর্ষণ বলতে বোঝায় সম্মতি ব্যতিরেকে কিংবা ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা প্রতারণা করে সম্মতি আদায় করে যৌন আক্রমণ।)
● পরকীইয়া (পারস্পারিক সম্মতিতে বিবাহিতের অবৈবাহিক যৌন সম্পর্ক),
● ব্যভিচার (দুজন অবিবাহিতের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌনসঙ্গম অথবা দুজন অবিবাহিত ব্যক্তির মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন। স্থাপন অথবা একজন বিবাহিত, আরেকজন অবিবাহিতও হতে পারে। তবে এখানে সাধারণত উভয়ের সম্মতি থাকে)।
● পতিতাবৃত্তি (অর্থের বিনিমইয়ে যৌনসঙ্গম),
● সমকামিতা (সমলিঙ্গীয় ব্যক্তিদ্বইয়ের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক)
● সডোমি (পায়ুসঙ্গম ও মুখমৈথুন),
● অজাচার (পরিবারের সদস্য বা অবিবাহযোগ্য রক্তসম্পর্কের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম),
● পশুকামিতা (অমানব পশুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম)।
সাধারণ ভাষায় ‘ধর্ষণ’ হচ্ছে এক ধরনের যৌন আক্রমণ। একজন ব্যক্তির ইচ্ছা এবং অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইলিং কিংবা ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যেকোন অবস্থায় যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত।
ইসলামে যিনা একটি শাস্তিযোগ্য পাপ এবং আল্লাহর বিরুদ্ধাচারকারী একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য। কুরআন এবং হাদিসসমূহে এটি উল্লেখিত রয়েছে। কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যে কোন প্রকারের যৌন ক্রিয়াকলাপ যা বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত সম্পাদিত হয় সেগুলো যিনা বলে গণ্য হবে এবং তা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য সমানভাবে শাস্তিযোগ্য। কুরআনের বেশ কয়েকটি জায়গায় যিনা সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রথমটি হল কুরআনের সাধারণ নিয়ম যেখানে মুসলিমদের যিনায় লিপ্ত না হতে আদেশ দেয়া হয়েছে: ‘তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেয়ো না: কারণ এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট ’ কর্ম, যা অন্যান্য নিকৃষ্ট ’ কর্মের পথ খুলে দেয়’। (সূরা বনি ইস্রাঈল, আয়াত: ৩২)।
কুরআনের পর ইসলামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হাদিসে যিনাকে সঙ্গায়িত করা হয়েছে সকল প্রকারের বিবাহবহির্ভূত যৌনসঙ্গম হিসেবে। আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত সুত্রে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন: ‘আদম সন্তানের উপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু-চোখের যিনা হল নিষিদ্ধ যৌনতার প্রতি দৃষ্টিপাত করা, দু’কানের যিনা হল শ্রবণ করা, রসনার যিনা হল কথোপকথন করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওয়া, অন্তরের যিনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করা।(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
কুরআনে সর্বপ্রথম সূরা নিসায় যিনার শাস্তি সম্পর্কিত সাময়িক অস্থায়ী নির্দেশনা অবতীর্ণ করা হয়। ‘আর নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন। তোমাদের মধ্যে যে দুজন সেই ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, অতঃপর তারা যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু’। (সূরা নিসা, আয়াত: ১৫-১৬)।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে ইসলাম ও বাংলাদেশের আইন
ইসলাম ও বাংলাদেশের আইনের তুলনামূলক আলোচনা ক্ষেত্রে কথা বলা যায় যে সার্বিক অর্থে এদের মাঝখানে কোন বিরোধ নেই, বৈপরীত্য নেই আবার একেবারে পুরোপুরি একও নয় মিলেও যায় না। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন। ’
ইসলামের সঙ্গে এই সংজ্ঞার তেমন কোনো বিরোধ নেই। তবে এতে কিছুটা অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ইসলাম সম্মতি-অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশীয় এ আইনে কেবল অসম্মতির ক্ষেত্রে অপরাধ বলা হয়েছে। পার্থক্য এইটুকুই।
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির স্বরূপ
ধর্ষণের ক্ষেত্রে যেহেতু একপক্ষ নির্যাতন করে আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। পার্থিব জীবনে ও নয় এবং পারোলৌকিক জীবনেও হবে না। কেবল অত্যাচারি ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে দু’টো বিষয় অবধারিতভাবে সংঘঠিত হয়। এক. যৌনসঙ্গম দুই. বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন। প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ। পরেরটির জন্য ইসলামি আইনজ্ঞদের এক অংশ বলেন, ‘মুহারাবা’র শাস্তি হবে। মুহারাবা হলো, পথে কিংবা অন্য কোথাও অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়া ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবল সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার উভয়টিই হতে পারে।
কোন কোন ইসলামিক আইনজ্ঞ ‘মুহারাবা’র সংজ্ঞায় সম্ভ্রম হননের বিষয়টি যোগ করেছেন। তবে সব ইসলামি স্কলারই ‘মুহারাবা’ বলতে পৃথিবীতে অনাচার, নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ ও ত্রাস সৃষ্টি ইত্যাদি অর্থে উল্লেখ করেছেন।
মুহারাবার শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলিতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো- তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্চনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৩)।
এখানে হত্যা করলে হত্যার মাধ্যমে শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেওয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করার ব্যাখ্যা ইসলামী আইনজ্ঞরা দিয়েছেন। আবার এরচেয়ে লঘু অপরাধ হলে, দেশান্তরের শাস্তি দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। মোটকথা, হাঙ্গামা ও ত্রাস সৃষ্টির অপরাধের শাস্তি ত্রাস ও হাঙ্গামাহীন অপরাধের শাস্তি থেকে গুরুতর।
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ইসলামে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে, প্রথমে ধর্ষক ব্যভিচারের শাস্তি পেয়ে পরে হত্যার শাস্তি পাবে। যদি অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়, তাহলে ‘কিসাস’ বা মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণের সঙ্গে যদি আরও কিছু অপরাধ সংশ্লিষ্ট রয়েছে। যেমন, অশ্লীল ভিডিওধারণ করা। ওই ধরনের ভিডিও প্রচার করা ইত্যাদি। যদি এসব অপরাধ পাওয়া যায়, তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরো দীর্ঘ হবে।
ব্যাভিচারের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ
ইসলামে ব্যভিচারের মতো ধর্ষণও কবিরা গোনাহের শামিল। সে কারণে যে কোনো ব্যক্তির ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক। ধর্ষণ থেকে বাঁচতে যদি ধর্ষণকারীকে হত্যা করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়, তাতেও সমর্থন দিয়েছে ইসলাম। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহিদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)।হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আর সে প্রতিরোধে হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে তাতেও কোনো দোষ নেই। কেননা সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে যদি প্রতিরোধকারী নিহত হয় তবে সে পাবে শাহাদাতের মর্যাদা।
ইসলামে ধর্ষিতার সামাজিক মর্যাদা
সমাজে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে বাঁকা চোখে দেখে। তার প্রতি অবহেলা ও নানান কটুক্তি করে থাকে মানুষ। যা কোনোভাবে কাম্য নয়। কেননা ধর্ষনের শিকার হওয়া ব্যক্তি বল প্রয়াগকারী বা ক্ষমতাধর ব্যক্তির অত্যাচারের শিকার। ইসলামের আলোকে এ ব্যক্তি মাজলুম।তাই যে ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাকে ধর্ষণ হওয়ার কারণে যেমন অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা যাবে না তেমনি তাকে বাঁকা চোখে দেখা কিংবা কটুক্তিও করা যাবে না। পক্ষান্তরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগে যদি কোনো ব্যক্তির প্রতি ঘৃণ্য এ অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয় তবে এ কারণে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তির কোনো পাপও হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ এবং বল প্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (ইবনে মাজাহ)। ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তি মাজলুম বা অত্যাচারিত। আর ইসলামে মাজলুমের কোনো শাস্তি নেই। এক্ষেত্রে শাস্তি হবে শুধু ধর্ষণকারীর। ইসলামে এ সব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রয়োগের সুস্পষ্ট বিধান রেখেছে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সংঘঠিত হয়। আর তাহলো-
১)যিনা যার একটি অর্থ ব্যভিচার। ২)বল প্রয়োগে সম্ভ্রম লুণ্ঠন
যিনা বা ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে দুই ধরনের হয়ে থাকে। ব্যভিচারী যদি অবিবাহিত হয় তবে এক ধরণের শাস্তি। আর যদি বিবাহিত হয় তবে ভিন্ন শাস্তি।
অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি
ব্যভিচারী যদি অবিবাহিত হয় তবে তাদের প্রকাশ্য বিচারালয়ে ১০০ বেত্রাঘাত করা। বেত্রাঘাতের সময় হদ বাস্তবায়নকারীর অন্তরে কোনো মায়া বা ভালোবাসা পোষণ করা যাবে না।
বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি
ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তবে তাদের প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা।
ধর্ষকের শাস্তি
বল প্রয়োগে যে ব্যভিচার সংঘঠিত হয় তাই ধর্ষণ। এক্ষেত্রে যে বল প্রয়োগ করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করবে তার শাস্তি হবে। আর যে বল প্রয়োগের শিকার হবে তার কোনো শাস্তি হবে না। তবে ধর্ষকের শাস্তি প্রয়োগে একাধিক মত রয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-১.ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ ও আহমদ ইবনে হাম্বাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম-এর মত হলো- ‘ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।’ অর্থাৎ ধর্ষক অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা। ২.ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহির মত- ‘ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তি প্রইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের নীতিমালা। ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামে দুইটি বিষয়ের কোনো একটি জরুরি। এক. সাক্ষী, দুই. ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।
সাক্ষী না পাওয়া গেলে
অনেক ইসলামিক স্কলারই তাদের মতামত প্রকাশ করছেন যে যদি কোনো সাক্ষী না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে, কৃত অপরাধ স্বীকারে চাপ প্রয়োগ দেওয়া জরুরি। স্বীকারোক্তি মিললে ধর্ষকের ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যতটুকু শাস্তি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা রাষ্টপক্ষের দায়িত্ব। শাস্তি প্রয়োগে নানাবিধ বিলম্ব করা ও রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক কোনো চাপের কারণে ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত।
অনেক সময় ধর্ষিতাকে একঘরে করে রাখা হয়। তাকে সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। ইসলাম কোনোভাবেই এসব সমর্থন করে না।ধর্ষণের যেসব শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে, তা কেবল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের অনুমোদনপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রয়োগ করবে, ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ নয়।
তাই সমাজে যখন ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করে তখন সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে উৎপাটন করতে (মুহারাবার) মতো ভয়াবহ শাস্তি প্রয়োগ করাও জরুরি।
ইসলামের প্রথম যুগের জোরপূর্বক ব্যভিচার তথা ধর্ষণের কিছু বিচারের বর্ণনা
হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধর্ষককে হদের (ব্যভিচারের) শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ) (কুরআন-হাদিসে বহু অপরাধের ওপর শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কুরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত তাকে হদ বলে।)হজরত নাফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, ‘(হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে) এক ব্যক্তি এক কুমারী মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। লোকজন ধর্ষণকারীকে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উপস্থিত করলে সে (ধর্ষক) ব্যভিচারের কথা অকপটে স্বীকার করে। লোকটি ছিল অবিবাহিত। তাই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশ মোতাবেক লোকটিকে বেত্রাঘাত করা হলো। এরপর তাকে মদিনা থেকে ফাদাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।’ (মুয়াত্তা মালিক)। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে সরকারি মালিকানাধীন (কাজে নিযুক্ত) এক গোলাম এক দাসির সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে ওই দাসির কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ওই গোলামকে কষাঘাত (বেত্রাঘাত) করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিকে কোনো শাস্তি প্রদান করেননি।’ (বুখারি)।
ইসলামে যিনাকারীর মর্যাদা
এক মহিলা সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি জিনা (ব্যভিচার) করেছি। জিনার কারণে গর্ভবর্তী হয়েছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি চলে যাও। সন্তান হলে এবং তার দুধ পান করানোর সময় অতিবাহিত হলে এসো। যখন তার সন্তানের দুধ পানের মেয়াদ শেষ হলো, তখন সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে উপস্থিত হলো। তিনি বললেন, তোমার এ সন্তানকে কারো দায়িত্বে দিয়ে দাও। যখন সে সন্তানকে অন্য একজনের দায়িত্বে রেখে এলো। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দেয়া হলো। তার জন্য বুক সমান গভীর এক গর্ত খুঁড়া হলো এবং তাকে সেখানে দাঁড় করিয়ে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজার নামাজ পড়ালেন। হজরত ওমর আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তার জানাজা নামাজ পড়ালেন? এতো ব্যভিচারিনী। তিনি বললেন, এ মহিলা এমন তাওবা করেছে তা যদি পৃথিবীবাসীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে। এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে যে, সে (আল্লাহর ভয়ে) নিজের জীবন দিয়ে দিল।
ভিকটিম ব্লেমিং কি?
ভিকটিমকে দোষারোপ করা একটি অবমূল্যায়নকারী কাজ যা ঘটে যখন কোনো অপরাধের শিকার(রা) দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় – সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে – যে অপরাধগুলি হয়েছে ।তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই দোষ নেতিবাচক সামাজিক আকারে প্রদর্শিত হতে পারে। আইনি, চিকিৎসা, এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া, সেইসাথে থেকে মিডিয়া এবং তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য পরিচিতদের। অপরাধের শিকার কিছু ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় সমাজ থেকে বেশি সহানুভূতি পায়। প্রায়ই, অপরাধের শিকারদের প্রতি প্রতিক্রিয়া অন্যদের ভুল বোঝাবুঝির উপর ভিত্তি করে। এই ভুল বোঝাবুঝি তাদের বিশ্বাস করতে পারে যে শিকারের প্রাপ্য ছিল।
বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ
ফওজিয়া মোসলেম সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা নারী নির্যাতনের বিশেষ কিছু ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্ত হতে দেখেছি। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, হত্যা, পারিবারিক সহিংসতা। এই সব কটিরই মূলে রয়েছে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব। নারীকে শুধু নারী হিসেবে মূল্যায়িত হতে দেখতে চাই না। যেকোনো দুর্ঘটনার পর আমরা প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অসততা, দুর্বলতা, অদক্ষতা ও জবাবদিহির অভাব দেখি। নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মনোভাব। এই মনোভাব চাই না। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। অপরাধীদের যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের জবাবদিহি, প্রয়োজনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত ধর্ষণ আইনটি আমূল সংস্কার করতে হবে। ধর্ষণের মামলার যে দীর্ঘসূত্রতা, তা চাই না। বাংলাদেশ পুলিশ: গত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং ৮১৫টি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭২৭টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি। পুলিশের হিসাব বলছে, গত বছর ধর্ষণের কারণে ১২ শিশু এবং ২৬ জন নারী মারা যান। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১ নারী ও ১৪ শিশু। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): আসকের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ৭৩২।মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন: গত বছর ৯০২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৫৬।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম: ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন বেড়েছে ৭০ শতাংশ। গত বছর যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১ হাজার ৩৮৩ শিশু। ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর শিশু ধর্ষণ ৭৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে। বুধবার হাইকোর্টে দাখিল করা পুলিশ সদর দফতরের প্রতিবেদন অনুসারে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে মোট ২৭০০০টি ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ অপরাধ শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৭৬৬টি এবং ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ৬ হাজার ২২০টি ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, আদালত সারা দেশে গত পাঁচ বছরে দায়ের করা ২৬,৬৯৫ টি ধর্ষণের মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে সংস্থাটি ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে।
জবাবদিহির সীমাবদ্ধতা
জবাবদিহির সীমাবদ্ধতার ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিরপেক্ষতার অভাব, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও হতাশা ব্যাপকভাবে বিদ্যমান; অপর দিকে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, অদক্ষতা, তোষামোদ, কাজে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নিয়মশৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ যেমন তার দায়দায়িত্বের জন্য পরকালে জিজ্ঞাসিত হবে, ঠিক তেমনি একজন ধর্মপ্রাণ বান্দাও তার নির্ধারিত কাজের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। পরিবারের রক্ষক ও অভিভাবক পুরুষকে যেমন তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তেমনি সংসারের কর্ত্রী স্ত্রীকেও তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তানসন্ততিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোনো লোকের চাকর বা শ্রমিককে তার কর্তব্য তথা মালিকের বা সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে প্রত্যেকেই তার অধীনস্থ ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি দায়িত্বশীল রয়েছে এবং সবাই ভালোমন্দ কাজের জন্য দায়বদ্ধ হবে। তাই সমানভাবে বিচারের জন্য তাদের স্বীয় অধীনস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
পরকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান ও মর্যাদা প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আত্মসচেতন, কর্তব্যপরায়ণ ও কর্মতৎপর হতে হবে। নিজেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মনে ইমানি চেতনায় মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। স্বচ্ছতার ফলে অধীনস্থ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সম্মান পাওয়া যায়। মানবজীবন জবাবদিহির একটি নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। এটি ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ বয়ে আনে। এ জন্য সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, নিরপেক্ষতার সঙ্গে সবাইকে সমাজজীবনে যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বচ্ছতা অবশ্যই একটি উত্তম প্রক্রিয়া। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সর্বমহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি বেড়ে যায়। তাই জাতীয় জীবনে প্রত্যেক মানুষকে লোভ-লালসা ও ভোগ-বিলাসিতার মাধ্যমে নয়, বরং ন্যায়নিষ্ঠা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন।
মূল কথা হলো
জন্ম থেকেই পৃথিবী তার রূপ বদলাচ্ছে। কালের পরতে পরতে বিভিন্ন রূপে আমরা পৃথিবীর ইতিহাস দেখতে পাই। কখনো ভালো, কখনো মন্দ। আবার কখনো ভালো-মন্দের মিশেল। এ হলো জগতের সাধারণ ও স্বাভাবিক রীতি। তবে এর উল্টো চিত্রও পৃথিবী তার গর্ভে ধারণ করেছে।আমাদের সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয় নিকষ আঁধারে ঢেকে গেছে চারিদিক। যারা নষ্ট দুর্গন্ধযুক্ত কলুষিত নর্দমার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে তারাও ভাল থাকতে চায়। বাংলাদেশ নামের ছোট এই দেশটিতে আমাদের জন্ম। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে সরকারী অথবা বেসরকারী চাকরী পেয়ে আমরা প্রতিদিন কোন না কোন অসৎ কাজ করছি অথবা এর নীরব সমর্থন করছি। ধর্ষণ, ঘুষ, দুর্নিতীকে আমরা রীতি বানিয়ে ফেলেছি। ইসলাম যদিও মানব সমাজকে যিনা-ব্যভিচারের আশঙ্কা থেকে বাঁচানো জন্য দণ্ডবিধি আইনের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি নিছক বিচারের শেষ উপায়। এ বিধান নাজিলের উদ্দেশ্য এটি নয় যে, মানুষ অপরাধ করে যেতে থাকবে আর ইসলাম হদ প্রয়োগ তথা বেত্রাঘাত, হত্যা বা দেশান্তরিত করতে থাকবে। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, লোকেরা যেন এ অপরাধ না করে এবং কাউকে শাস্তি দেয়া বা কারো উপর জোর-জবরদস্তি করার সুযোগই না পায়। তাই অপরাধমুক্ত মানব সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি মানুষে মনে আল্লাহর ভয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে সে দুনিয়ার যাবতীয় অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে। আর ঈমানের অপরিহার্য দাবিও হচ্ছে মানুষ অপরাধমুক্ত জীবন প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অপরাধ ছেড়ে দেবে। দুনিয়া মানুষের কর্মক্ষেত্র। দুনিয়ার এ জীবনে যারা জবাবদিহিতামূলক কর্মকাণ্ডে অতিবাহিত করবে তাদের দুনিয়া ও পরকাল উভয়টাই নিরাপদ।
লেখক- আবুল বাশার রিপন খলিফা
সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ই-মেইলঃ [email protected]