বশেমুরবিপ্রবি টুডেঃ করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে গোপালগঞ্জে চোরের উৎপাত বেড়েই চলেছে। মেস ফাঁকা থাকার সুযোগে চুরির ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে ৷
এখন পর্যন্ত গত এক মাসে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ছয়টি ছাত্রাবাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে ৷ এ সকল ছাত্রাবাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকেন। একের এক চুরির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা ৷ অনেকে চুরির ভয়ে মেস ছেড়েও দিচ্ছেন ৷
সর্বশেষ গোপালগঞ্জের নবীনবাগের এক মেসের গ্রীল কেটে নগদ ১২ হাজার টাকা চুরি করা হয় ৷ এছাড়াও মেসে মূল্যবান মালামাল থাকলেও তা চুরি হয়নি বলে জানান তারা ৷
এ বিষয়ে নবীনবাগে চুরি হওয়া মেসে বসবাসকারী বশেমুরবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ মুরাদ জানায়, “হঠাৎ করে ছুটির ঘোষণার কারনে আমরা আমাদের সেমিস্টার ফি’র টাকা লকারে সাবধানে রেখে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু আজ বাসা ছাড়ার জন্য এসে চুরির ঘটনার শিকার হই ৷ ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো দেখে অবাক হই, অতঃপর বাসার মালিকের সহিত দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ এর পর দেখি সব ছড়ানো ছিটানো। এমতাবস্থায় আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো। এভাবে এই পরিস্থিতি এমন একের পর এক চুরি সত্যিই দুঃখজনক ৷”
এ ব্যাপারে বাড়ির মালিকের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে বার বার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি ৷
এছাড়াও নবীনবাগে একদিন আগেই আরেক মেসে চুরির ঘটনা ঘটে ৷ সেখান থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা, একটি DSLR ক্যামেরা, একটি ল্যাপটপ এবং দুটি ফোনসহ প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়।
এ বিষয়ে ওই মেসে ভুক্তভোগী বশেমুরবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ ইমতিয়াজ আকাশ বলেন, “লকডাউন এতদিন দীর্ঘ হবে আমরা বুঝিনি তাই অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে এসেছিলাম। পরবর্তীতে গত ১৩ জুন জানতে পারি মেসে চুরি হয়েছে এবং মেসে যাওয়ার পর দেখতে পাই প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছুটির সময়টায় কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ছাত্রাবাসগুলোতে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের একটি তদন্ত করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক থাকা উচিত, মূল্যবান জিনিসপত্র মেসে রেখে আসা উচিত নয়।”
এর আগে গোপালগঞ্জের গোবরা এলাকায় দুটি এবং চৌরঙ্গী সংলগ্ন এলাকায় একটি মেসে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
গোবরা এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, “আমাদের রুম থেকে কম্পিউটার সিপিইউ, স্যামসাং টিভি মনিটর, লজিটেক হেড ফোন, সাউন্ড বক্স, ফ্যান, একটি ফোন এবং পিসির হেডফোন চুরি হয়েছে।”
এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা চাই বাড়িওয়ালারা আরো দায়িত্বশীল হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুরির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করুক এবং অনিরাপদ মেস পরিচালনার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রশাসন আমাদের সহায়তা করুক। এর সাথে সাথে আরো প্রত্যাশা করি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দ্রুত আবাসন সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিবে।”
চুরির ঘটনা উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আরেক বশেমুরবিপ্রবি পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আহাদ বলেন, “আমার মেস ভার্সিটি সংলগ্ন গোবরা এলাকায়, গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব জিনিস বাসায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি, আর সাধারণ ছুটি এত দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে সেটিও কল্পনাতিত ছিল। পরবর্তীতে ৪ জুন জানতে পারি আমার রুমে চুরি হয়েছে। আমার রুম থেকে একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার, একটি মোবাইল ফোন, একটি ফ্যান ও সাউন্ড সিস্টেম চুরি হয়।”
বাড়ির মালিকের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে আহাদ বলেন, “আশ্চর্যজনক বিষয় হলো আমাদের এ চুরির বিষয়ে মালিক কর্তৃপক্ষ কোন কিছুই জানায় নি। চুরির প্রায় ৪/৫ দিন পর বাড়ির কেয়ারটেকারের কাছ থেকে চুরির ঘটনা জানতে পারি। চুরির সময়ে কেয়ারটেকার বাড়িতে ছিলেন না এবং বাড়িটি অরক্ষিত ছিলো। আমার মনেহয় বাড়ির মালিকদের দ্বায়িত্বহীনতা এবং অসতর্কতার কারণেও প্রতিনিয়ত এমন ঘটনাগুলো ঘটছে।”
চুরির ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, “কেউ মামলা করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া প্রত্যেকের নিজের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। কারণ ছাত্রাবাসগুলো বিভিন্ন অলি গলিতে অবস্থিত, স্বল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে সকল ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”