করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ইবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

টুডে ডেস্ক Avatar

ক্যাটাগরি : ,
করোনায় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ইবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ বর্তমান বিশ্বের মানুষের জীবনের গতিধারা পাল্টে দিয়েছে। সবকিছুর সাথে আমূল পরিবর্তন এসেছে শিক্ষাদান ব্যবস্থায়ও। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি পাঠদান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন।

প্রথম পর্যায়ে সরকার ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর আর চালু হয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে ২০২১ সালের ৩১ ই জানুয়ারি পর্যন্ত এ বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্লাস কার্যক্রম বা পরীক্ষা সবকিছুই হচ্ছে এখন অনলাইনে। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনের পর্দাতেই চলছে শিক্ষার কার্যক্রম।

এ অনলাইন পদ্ধতি সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ দান চালু থাকলেও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজট নামক অভিশাপ নিয়ে গভীর উদ্বিগ্নে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীর এ অবস্থায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মতামত জানিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানাচ্ছেন মোঃ সোহানুর রহমান।

“শিক্ষা ব্যবস্থায় সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা প্রয়োজন”
মোঃ রবিউস সোহাগ, ফার্মেসী বিভাগ।

যদিও ২০২০ সালটি আমাদের জন্য বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য খুব একটা ভালো ছিল না, এই মহামারী তে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রথম থেকে সচেতন থাকলেও নিরাপত্তার চিন্তা মাথায় রেখে খুব বেশি কিছু করাও যাচ্ছিলো না। অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম এর মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব এই ক্ষতিটুকু পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু যে ক্ষতিটা ইতিমধ্যে হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অনার্স ফাইনাল এবং মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীদের যারা তাদের ক্যারিয়ারেও একটা বছর পিছিয়ে গেল।

চাকরির পরীক্ষাগুলোতে আবেদন করা যাচ্ছে না কারণ পরীক্ষা আটকে আছে, সার্বিকভাবে চিন্তা করলে আসলে কোনো শিক্ষার্থীই এই ক্ষতির বাইরে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন ক্যারিয়ার এ একটুখানি পিছিয়ে গেল, তেমনি দীর্ঘদিন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার জন্য এ প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবেও, উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত, মহামারীর প্রতিক্রিয়ায় স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে বর্তমানে প্রায় 1.077 বিলিয়ন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়াও অনলাইনে ক্লাসে উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম, অনেকের দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং ডিভাইস না থাকায় ক্লাসে উপস্থিতি কম ছিল। পরিশেষে, মহামারী দ্বারা সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়াতে সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীর সাথে শিক্ষার বিষয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নিবে সেই আশাই করছি।

“শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে”
আরোশি আঁখি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট।

করোনা মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত আমার মনে হয় শিক্ষা খাত। করোনার কবলে থমকে গেছে শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা পার করছে সর্বোচ্চতম উদ্বেগ এর সময়। তবে এক্ষেত্রে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান ভাবে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করতে সক্ষম হয়নি। শহরের নাম করা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত চলছে অনলাইন ক্লাস। এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মফস্বলের ছেলেমেয়েরা। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ঝুঁকে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন গেমের কবলে যা অনেকটা নেশার মত ঝাপটে ধরছে। আরেকটা অংশ গল্পের বই এবং মুভিতেই ব্যস্ত।

তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মানসিক অবসাদে ভুগছে অনেকে সুইসাইড এর মতো ভয়াবহ পথ বেছে নিয়েছে। করোনার ফলে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সবাইকে অত্যধিক মাত্রায় স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। সকল প্রতিষ্ঠান কে শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে হবে। সরকারিভাবে ডিভাইস ক্রয়ের সফট লোন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যথাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের আগের অবস্থান ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

“যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার”
মোঃ সনেট শেখ, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট

কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় শতভাগ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে আর সেই জায়গায় স্থান করে নিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল এই ব্যবস্থা কি আদতেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কে পুনরুজ্জীবিত রাখতে পারবে ? কারণ বিভিন্ন দেশে জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় , শিশুরা যত বেশি স্কুল থেকে দূরে থাকে ,তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা তত কমে যায়। আবার নেটওয়ার্কিং সহ অর্থনৈতিক নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আসা সম্ভব নয়।

একই সাথে শিক্ষকদের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির বাহিরে এসব অনলাইন প্লাটফর্মে শিক্ষা দিতে তারা খুব একটা অভ্যস্ত নন, যে কারণে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হচ্ছে । অন্যদিকে এই মহামারী দুর্যোগ আর শিক্ষাখাতের অচল অবস্থার যদি স্থায়ী হয় তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের চাকরি বা পরবর্তী ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর। তাই ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগে শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই । আর বর্তমান সরকার এ বিষয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আমার বিশ্বাস।

“ডিভাইসের অপ্রতুলতা, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক প্রধান সমস্যা”
মোঃ আসরাফুল ইসলাম, ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ।

করোনা মহামারী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উন্নত দেশ গুলো এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে অনেকাংশ সফল হলেও পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ গুলো। আমাদের দেশেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও সবাই অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এর প্রধান কারন হচ্ছে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা, ইন্টারনেট প্যাক বা ডাটার অত্যাধিক দাম ও ডিভাইসের অপ্রতুলতা। শিক্ষাব্যবস্থা তরান্বিত করতে হলে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ ও উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড থাকে এমন মাধ্যমে ক্লাস নিতে হবে যাতে করে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা পরে ক্লাস টা করে নিতে পারে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষাব্যবস্থায় যে ক্ষতি হয়েছে সেটা ধীরে ধীরে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

“সেশনজট মুক্ত শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে”
হাসিব আক্তার , হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি।

বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খুলবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষাব্যবস্হা এর আগে কখনো এমন স্থবির পরিস্থিতিতে পড়েনি যা করোনাকালীন সময়ে সৃষ্টি হয়েছে। কবে এই স্থবিরতা কেটে যাবে তা পুরোই অনিশ্চিত। এর মাঝে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাসগুলোয় পরীক্ষা বিহীন পরের ক্লাসে উত্তীর্ণকরনের পথ বেছে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশনজট মুক্ত শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পরে গিয়েছে করোনাকালীন সময়ে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet