করোনা প্রতিরোধ মিটিংয়ে কর্মকর্তার দ্বারা ইবি শিক্ষক লাঞ্চিত

ঐতিহ্য ও গৌরবের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি: করোনা প্রতিরোধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এক শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেছে। আবাসিক কমিটির সভাপতি ও এক কর্মকর্তা দ্বারা এ লাঞ্চিতের শিকার হন তিনি।

শনিবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আবাসিক এলাকার পার্কে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সিনিয়র ওই শিক্ষকের অপমানের ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা অন্যান্য শিক্ষকরা। অভিযুক্তদের বিচারের জোর দাবি জানিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় অবস্থানরত হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের প্রভাষক জাফর আলীর করোনা পজিটিভ আসে। তবে তার এ আক্রান্তের খবর প্রকাশ হয় পরদিন শুক্রবার। পরে বিষয়টি সর্বমহলে জানাজানি হলে আবাসিক এলাকায় করোনা সচেতনতা বৃদ্ধিতে শনিবার আবাসিক এলাকায় আবাসিক কমিটির মিটিং করা হয়।

মিটিংয়ে বক্তব্য প্রদানের এক পর্যায়ে আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, শিক্ষক জাফর আলী তার করোনার বিষয়টি ওই দিন নিশ্চিত না করায় তার সাথে অনেকে দেখা করেন। যা অনেকের স্বাস্থ্যঝঁকি বাড়িয়েছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে আবাসিক কমিটির সভাপতি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম আগে থেকেই অবগত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ড. এয়াকুব। সেই সাথে তারা বিষয়টি গোপন রেখেছেন বলেও জানান তিনি।

তার এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাদের উভয়ের মধ্যে বাগবিতান্ডা শুরু হয়। বাগবিতান্ডার এক পর্যায়ে আবাসিক কমিটির সভাপতি ড. মামুন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম একযোগে অধ্যাপক এয়াকুবের উপর চড়াও হন। পরে ড. মামুন তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। একইসাথে কর্মকর্তা সেলিম ড. এয়াকুবকে ইট নিয়ে মারতে যান বলে অভিযোগ করেন সভায় উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকেরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ড. এয়াকুব আলী জানান, মিটিং চলাকালে কর্মকর্তা সেলিমসহ কয়েকজন আমাকে মারতে উদ্যোত হয়। সেখানে উপস্থিত সিনিয়র শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে তারা তা করতে পারেনি। তবে মিটিং শেষে তারা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তারা যেহেতু বয়সে ছোট তাই আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষককে প্রকাশ্যে লাঞ্চিতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক শিক্ষক। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিচারেরও জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে কর্মকর্তা আবদুস সালাম সেলিম বলেন, আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। চাইলে বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমি ইট নিয়ে কাউকে মারতে যাইনি। বরং করোনা আক্রান্ত স্যারকে সহযোগিতা করার কথা বলেছি সবার আগে।

এ বিষয়ে আবাসিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. মামুনুর রহমান বলেন, “করোনা পজিটিভের বিষয়টা আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় জানতে পেরেছি তাও অন্য মাধ্যমে। আমি ভেবেছি আমার মত অন্যরাও বিষয়টি জেনে গেছে।

মিটিং চলাকালে ড. এয়াকুবকে লাঞ্ছনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মিটিং চলাকালে সবার মত এক হবে না এটা স্বাভাবিক। সভাপতি হিসেবে আমি সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবে কেউ ইট নিয়ে তাকে মারতে উদ্যোত হয়েছে এটা আমি স্বচক্ষে দেখিনি।”

এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, “ড. এয়াকুব করোনা বিষয়টি সর্বপ্রথম আমাকে জানিয়েছিল। করোনা পজিটিভ হয়েছে বিষয়টি যারা জানতেন তাদের উচিত ছিল তা অন্যদেরকে জানানো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment