সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

করোনা চিকিৎসায় সাশ্রয়ী মূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরি করলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র (ভিডিও)

  • আপডেট টাইম শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ৭.২৬ পিএম

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


করোনা বিস্তার ঠেকাতে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। এছাড়াও যে কোন রোগে আক্রান্তদের অবস্থা আশঙ্কা জনক হলে লাইফ সাপোর্ট এর জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ লাইফ সাপোর্ট। যে সাপোর্ট মানুষের নিশ্বাস নিতে সহায়তা করে ভেন্টিলেটর।

ভেন্টিলেটর সাহায্য অক্সিজেন নিয়ে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানো হয়। সেই  ভেন্টিলেটর এর সংকট আমাদের বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেক কম।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ হাজার ২৫০টি (সরকারি হাসপাতালে ৫০০টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫০টি) ভেন্টিলেটর রয়েছে। এসব ভেন্টিলেটরের বাজারমূল্যও বেশি।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য সানি জুবায়ের দেশে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটরের যোগান দিতে সাশ্রয়ী মূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরি করলেন।

তিনি নিজের তৈরি ভেন্টিলেটর সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা বাইরের দেশ থেকে যে ভেন্টিলেটর আনি এগুলোর দাম অনেক বেশি। ভেন্টিলেটর বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। শুধু যে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ তেমন না, অনেক ক্যাটাগরি থাকে। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো ভেন্টিলেটরের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করা। আর এই কাজটা করা হয় মেকানিক্যালভাবে। আমার তৈরি ভেন্টিলেটর এই কাজটা পুরোপুরি করতে সক্ষম।’

তিনি বলেন, ‘ভেন্টিলেটরের নলটা যখন শ্বাসযন্ত্রে ঢোকানো হবে তখন নির্দিষ্ট সময়ে বাতাসের প্রেসার, শ্বাস-প্রশ্বাসের রেট সিলেক্ট করে দেয়া যাবে। আর রোগীর ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমি যদি রেস্পিরেটরি রেট ২৪ করে দেই তাহলে প্রতি মিনিটে ফুসফুস ২৪ বার খুলবে ও বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই করবে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করবে।’

আরও বলেন, ‘আমি আমার সিস্টেমটাকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে সক্ষম। তবে এটার কাজ হবে শুধুমাত্র শ্বাসক্রিয়াকে যান্ত্রিকভাবে চালনা করা।’

করেনায় আক্রান্ত রোগীদের শুধুমাত্র শ্বাসক্রিয়া চালানোর কাজে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এই ভেন্টিলেটরটি শুধুমাত্র এই কাজটাই করতে সক্ষম। তাই এটি ব্যবহার করলে সহজলভ্য এবং অনেক করোনা রোগীকে সেভ করা সম্ভব। আমি এটার উপর কাজ করে যাচ্ছি। রোগীর ওপর পরীক্ষা চালানোর পর সফল হলে সরকারিভাবে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব।’

সানি জুবায়েরের তৈরি ভেন্টিলেটরটির মূল কাজ যেহেতু অক্সিজেন প্রবেশ করানো আর কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসা, তাই এটাকে সম্পূর্ণভাবে একটা কন্ট্রোলার এবং রাজবেরি পাই নামক একটি সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। বিদ্যুৎ চলে গেলে ভেন্টিলেটরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য এটিতে আইপিএস ব্যবহার করা যাবে।

এমন একটি ভেন্টিলেটর মাত্র ৭ হাজার টাকা খরচে তৈরি করা সম্ভব বলে জানালেন ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থী। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আরও উন্নত করা যাবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ আরও কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন জুবায়ের।

ভেন্টিলেটর তৈরির সময় করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে চাহিদা অনুযায়ী এই ভেন্টিলেটর তৈরি করেছেন বলে জানিয়ে জুবায়ের বলেন, কীভাবে ভেন্টিলেটরটি কাজ করছে তার একটা ভিডিও আমি ওই চিকিৎসককে পাঠিয়েছি। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, ঠিক আছে। এভাবেই ভেন্টিলেটর কাজ করে।

‘টিম অ্যাটলাস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সানি জুবায়ের । তার নেতৃত্বে মেক্সেলারেশন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আয়োজিত টেকনিভ্যাল ২০১৮-তে চ্যাম্পিয়ন এবং ন্যাশনাল রোবটিক ফেস্টিভাল ২০১৭-তে চ্যাম্পিয়ন হন।

ন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াড ২০১৯-এ স্বর্ণ জয়, ইন্ট্যারন্যাশলান রোবট অলিম্পিয়াড ২০১৯-এ ব্রোঞ্জ জয়। এছাড়া সানি জুবায়ের নেতৃত্বে ২০১৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১৩ তম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ।

ভিডিওটি দেখুনঃ 

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today