মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

কুবিতে শিক্ষক নিয়োগ: নির্দিষ্ট প্রার্থীকেই নিয়োগ দিচ্ছেন উপাচার্য

  • আপডেট টাইম বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩, ১০.০৬ পিএম
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন

মোহাম্মদ রাজিব, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতিটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম করে আসছেন।এর আগে রেজিস্ট্রার নিয়োগেও তার পছন্দ অনুযায়ী লোক পাননি বিধায় ওই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে গড়িমসি করেছেন। ওই পদে প্রায় ৫ মাস পর নিয়োগ (ভারপ্রাপ্ত) দিয়েছেন।

এবার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়ম লঙ্ঘন করে পছন্দের প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ এফ এম আবদুল মঈন। আইন ভঙ্গের বিষয়ে সংশ্নিষ্ট কমিটি থেকে অভিযোগ এলেও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। এসব নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। তবে উপাচার্য বলছেন, সবকিছু নিয়ম মেনেই হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে উপাচার্য ও সংশ্নিষ্ট কমিটি একমত হতে না পারলে উপাচার্য কমিটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত দিতে পারবেন। এর পরও কমিটি একমত না হলে বিষয়টি আচার্য তথা রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানোর কথা। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। কিন্তু উপাচার্য এসব না মেনেই নিজের মতো করে নিয়োগ দিয়েই যাচ্ছেন।

গত নভেম্বরে সাতটি বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে ১১ জনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনটি বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, ‘নির্দিষ্ট প্রার্থী’কে নিয়োগ দিতে নীতিমালাবহির্ভূত অনুবিধি যুক্ত করে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী অথবা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে ফলাফলের যোগ্যতায় শিথিলতার কথা বলা হয়।

কয়েকজন শিক্ষক বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করতে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেন। উপাচার্য চিঠি গ্রহণ না করলে শিক্ষকরা আদালতে রিট করেন। আদালত বিষয়টি সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন। কিন্তু উপাচার্য দায়সারাভাবে ব্যাখ্যা দিয়েই চিঠি পাঠিয়ে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

উপাচার্যের ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে একমত হতে পারেননি বিভিন্ন বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সদস্যরাও। ইংরেজি বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সদস্যরা একমত হননি। তাঁরা প্রার্থীদের আবেদনপত্র রেজিস্ট্রার দপ্তরে ফেরত পাঠান। রেজিস্ট্রার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করে ‘বৈধ’ প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা হয়েছে, ‘বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি শিক্ষক, অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের সুপারিশ করবেন।’ সে ক্ষেত্রে আবেদন যাচাই করে সুপারিশ করার কথা রয়েছে। অর্থাৎ কমিটির সুপারিশ ছাড়া কেউ নিয়োগ পাবেন না। তবে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সদস্যদের সুপারিশ বাদ দিয়েই ১৮ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইংরেজি বোর্ডে মনোনয়ন পাওয়া ওই প্রার্থী আরেকটি বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপকের স্ত্রী। তাঁর স্নাতকের ফলও কুবি নির্ধারিত মানের চেয়ে নিচে।

একই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রার্থীদের কাগজপত্র যাচাই করে রেজিস্ট্রার দপ্তরে ২২ জনের তালিকা পাঠিয়েছিল মার্কেটিং বিভাগ। কিন্তু রেজিস্ট্রার আইন লঙ্ঘন করে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ করা তালিকায় আরও দু’জনের নাম যুক্ত করেন। আইনের তোয়াক্কা না করে ১৭ জানুয়ারি মার্কেটিং বিভাগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্যকে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার বিষয়টিই বলে দেয় এখানে হীন কোনো উদ্দেশ্য আছে।

তবে উপাচার্য আবদুল মঈন বলেন, পরিকল্পনা কমিটি বিজ্ঞপ্তির আলোকে আবেদনপত্র যাচাই করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যাদের নাম বাদ যায়, প্রশাসন তাদের নাম যুক্ত করেছে। ইউজিসির নির্দেশিকার আলোকেই তা করা হয়েছে।

ইউজিসির নির্দেশিকা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস করানো হয়নি। তার আগেই সে নির্দেশিকা অনুসরণ কতটুকু যুক্তিযুক্ত- এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, এ প্রক্রিয়া এখনও চলমান আছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আগেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্দেশিকা পাস-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি।

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today