কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তা ‘স্থানীয় সাংসদ’
কুবি টুডেঃ প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যাল (কুবি) ১ম সমাবর্তনের আয়োজন করছে। আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তন। দেশের এ উচ্চ শিক্ষালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীদের আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী প্রদানের এ অনুষ্ঠান বেশ কাঙ্খিত।
তবে ডিগ্রীধারীদের উৎসাহ ও উদ্দিপনায় পানি ঢেলেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। তৈরী হচ্ছে ক্ষোভ। সমাবর্তনে কোন নোবেল লরিয়েট’কে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আনার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের রাজনীতিকে পাকাপোক্ত করতে স্থানীয় সাংসদকে এ সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে মনোনিত করেছেন।
এমন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হলেও শিক্ষার্থীদের রোষাণলে পড়ার ভয়ে সমাবর্তন বক্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে জানা যায়। অন্যদিকে সমাবর্তনে নিবন্ধনের জন্য ধার্যকৃত অর্থের পরিমাণ কমানোর দাবিও করছেন ডিগ্রীধারীরা।
জানা যায়, অনুষ্ঠিতব্য সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য মো. আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এ সমাবর্তনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে সমাবর্তন বক্তার জন্য মনোনীত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা, সমালোচনা, ক্ষোভ ও অপ্রাপ্তির সুর।
সমাবর্তনে যাদেরকে আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী দেওয়া হবে এমন সাবেক অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, সমাবর্তন হলো আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী প্রদানের এক মহাউৎসব। শিক্ষা জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
এ সময় সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনের গতিকে দৃঢ় করেন। বিশ্বে কীর্তিমান ব্যক্তিদেরকে সমাবর্তনের বক্তা করার রেওয়াজ রয়েছে। যারা সমাজকে মেরামত করেন এমন প্রখ্যাত ব্যক্তিদেরই এ অবস্থানের আসীন করা হয়।
কিন্তু ভিসি বা প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে স্থানীয় সাংসদকে সমাবর্তন বক্তার জন্য চূড়ান্ত করেছেন। স্থানীয় ঐ সাংসদ এমন অবস্থান পেতে পারেন কিনা সে বিতর্ক কেউ করছেন না। তবে দেশে বিদেশে অনেক শিক্ষাবিদই রয়েছেন যাদের বক্তব্য শুনতেই চাইবেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা এ শিক্ষার্থী বলেন ‘ঐ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে বান কি মুনকে বক্তা করা হয়েছে। এটা আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছি। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি এটি একটি নীরব প্রতিবাদের প্রতীক।’
ভিসিকে ‘ডায়নামিক’ আখ্যা দিয়ে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভিসি যতটা না শিক্ষাবিদ তারচেয়ে বেশি রাজনীতিবিদ। উনি মন্ত্রী সাহেবকে খুশি করার জন্যই এমনটি করেছেন।’
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমাবর্তন বক্তা নির্ধারণ না করায় প্রতারণাও বলছেন কেউ কেউ। এদিকে সমাবর্তনে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের জন্য ৩৫৫০ টাকা এবং স্নাতক ও একই সঙ্গে স্নাতকোত্তরধারীদের (দুই ডিগ্রী) জন্য ৪০৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে পূর্বে সমাবর্তন কমিটির আহবায়ক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ কে এম রায়হান উদ্দিনকে করা হলেও তাকে সরিয়ে দিয়ে ভিসি নিজেই আহ্বায়ক পদে আসীন হয়েছেন এবং রেজিষ্ট্রার ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে করেছেন সদস্য সচিব। ড. রায়হানকে আহ্বায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি প্রশাসন।
জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে সমাবর্তনের জন্য নিবন্ধনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও এর পূর্বেই শুরু করা হয় নিবন্ধন কার্যক্রম। সমাবর্তন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে স্পষ্ট বিবরণ প্রকাশ করাও হয়নি। একই সঙ্গে সমাবর্তনে অংশ না নিলেও সকল ডিগ্রীধারীকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে মূল সনদ নিতে হবে বলে প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে ‘গোঁয়ারতামি’ বলছেন শিক্ষার্থীরা। এক সূত্রে জানা যায়, নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর গত বুধবার পর্যন্ত ১৬ দিনে নিবন্ধন করেছেন ১ শত জনেরও কম।
সমাবর্তনের এসকল বিষয় ও সমাবর্তন বক্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সংসদকে সমার্বন বক্তার জন্য প্রস্তাব করেছি ওনি এখনও কোন কিছু জানানি ।’
তবে সকল কিছু ছাপিয়ে একটি প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী বান্ধব সমাবর্তন উপহার দেয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা এমনটাই দেখার প্রতিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ প্রেরক দ্য ক্যাম্পাস টুডের কুবি প্রতিনিধি মুহাম্মদ ইকবাল মুনাওয়ার ।