মোহাম্মদ রাজিব, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নতুন ৩ টি বাস ক্রয় করে পরিবহন পুলে যুক্ত করা হয়। কিন্তু বাস কেনার ২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন ড্রাইভার নিয়োগ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে কোটি টাকা ব্যয়ে বাস কেনা হলেও ড্রাইভার সংকটের কারনে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে পরিবহন পুলের তিনটি বাস। ফলস্রুতিতে সুষ্ঠ পরিবহন সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী একাডেমিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে বাসে যাতায়াত করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে ৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ৫ টি এবং বিআরটিসির ৯টি বাসের মাধ্যমে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে কুবি পরিবহন পুল। এতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের চিত্র বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উঠে আসলেও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পূর্বে শুক্রবার ও শনিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় ক্যাম্পাস থেকে শহরে এবং রাত সাড়ে ৮ টায় শহর থেকে ক্যাম্পাসমুখে একটি বাস চলাচলের অনুমতি দিলেও বর্তমানে ছুটির এ দুইদিনে কোন বাস চলাচল করে না। এমনকি নতুন করে প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সশরীরে সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বাস চলাচল করে না। এতে বিভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। যেসকল শিক্ষার্থীরা টিউশন করিয়ে নিজের খরচ বহন করেন তাদের ভোগান্তি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, শুক্রবার ও শনিবারের বাস সেবা বন্ধ থাকায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে দ্বিগুন। বর্তমানে ৪ দিন ক্লাস-পরীক্ষা থাকার কারনে মাঝে মাঝেই টিউশন অফ করতে বাধ্য হই। শুক্র শনিবার ছুটি থাকায় আগে এইদিন গুলোতে সেটি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন ছুটির দিনে যাতায়াত করতে গেলে গাড়ি ভাড়া অনেক চলে যায়।
বৃহস্পতিবার বাস বন্ধ থাকার বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমা বিনতে আফসার বলেন, শহরের টিউশনগুলো বেশিরভাগ রাতের বেলায় হওয়ার কারণে আমাদের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। সিএনজি বা অটোতে করে রাতে ঝুঁকি নিয়ে শহর হতে ক্যাম্পাসে আসতে হয়।
বাংলা বিভাগের সাইদুল আলম নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যে কোন কাজ বা টিউশনের জন্য শহরে যেতে হয়। পূর্বে ৫ দিন বাস চলায় তা স্বস্তির। কিন্তু নতুন নিয়মে ৪ দিন বাসের সিডিউল করায় রাতের ফিরতি বাসে শিক্ষার্থীদের চাপ খুবই বেশি। প্রতি দুই সিটে তিনজন করে বসেও বাসে পা রাখার মতোও জায়গা থাকে না। আবার অনেকে জায়গা না পেয়ে লোকাল যানবাহনে করে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। সপ্তাহে ৫ দিন বাস শিডিউল করা এবং রাত সাড়ে ৮ টায় অন্তত আরেকটি বাস বৃদ্ধি করলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে পরিবহন প্রশাসক ড.স্বপন চন্দ্র মজুমদার জানান, পরিবহন সেবা আগের তুলনায় অনেক ভালো।তবে যে ৩ টি নীল বাস এখনো ড্রাইভার সংকটের কারনে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। সে বিষয়ে উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। আশাকরি খুব দ্রত এর সমাধান হবে।