বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি : ক্রীড়াঙ্গনে দেশের অন্যান্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এক যুগ কেটে গেলেও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন কোন নজর কাড়তে পারিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গন। তবে এর জন্য খেলাধুলার তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকার পাশাপাশি ক্রীড়া সরঞ্জমাদি পর্যাপ্ত না থাকাকে দায়ী করছেন খেলাধুলা প্রিয় শিক্ষার্থীরা।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধতা নয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলার দিক থেকে পিছিয়ে এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন একজন ক্রীড়া শিক্ষক ও পার্ট টাইমার একজন ইন্সট্রাক্টর।
শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তঃবিভাগের মৌসুম ভেদে যেকোনো খেলা যথাসময়ে না হওয়া। পাশাপাশি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও প্রশাসনের অনীহা থাকাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে ভঙ্গুর অবস্থা এ নিয়ে কথা বলার কোন ভাষা নেই। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসেও নিজেদের মাঠের পিচ বানিয়ে খেলা লাগে। প্রশাসন বা ক্রিয়া শিক্ষকের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কোন সমাধান মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র ব্যাডমিন্টন খেলায় অংশগ্রহণ করি আমরা। কিন্তু ক্রিকেট ফুটবল সহ অন্যান্য কোন খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারিনা আমরা। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনীহা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সংগঠনের অনুমোদিত থাকলেও কেন্দ্রীয় ক্রিয়া কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়না। এবিষয়ে তারা ক্রীড়া শিক্ষক সহ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ক্রিড়া ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে
মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া নিলয় বলেন,
মৌসুম ভিত্তিক খেলা গুলো যথাসময়ে না হওয়া এবং একই সাথে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ না করাকে দায়ী করছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে ক্রীড়া শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনীহা থাকার জন্য আমরা ক্রীড়া ক্ষেত্রে এতো পিছিয়ে। ইতিপূর্বে আমাদের মাঠের সংকট ছিলো। এখন মাঠ থাকায় নিয়মিত অনুশীলন করি। আশা করি এবার জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে পারলে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গত ছয় বছরে আমরা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারিনি । একইসাথে জিমনেসিয়াম না থাকা, ইনডোর আউটডোর গেমে অংশগ্রহণ করতে না পারা,স্পোর্টস ইনস্ট্রাক্টর না থাকা এর জন্য অবশ্যই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী। যদিও একজন পার্টটাইমার ইনস্ট্রাক্টর আছে যা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আশা করি এবার থেকে প্রতিটি টুর্নামেন্টে যথাসময়ে অংশগ্রহণ করতে পারবো আমরা। ভবিষ্যতে যেন কোন শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলতে না পারে আমরা জাতীয় পর্যায়ে বা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারিনা দীর্ঘদিন।
এ বিষয়ে ক্রীড়া শিক্ষক বাবুল মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন থেকে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের গাফিলতি হবে না বলে কথা দেন তিনি। এবার নভেম্বরে টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবো আমরা। অন্তঃবিভাগের টুর্নামেন্টে গুলো যথা সময়ে না হওয়ার পেছনে করোনা করোনাকালকে দায়ী করছেন তিনি। তবে এবার থেকে সকল খেলা যথাসময়ে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কোন টুর্নামেন্ট বা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের কখনো হোস্ট না হওয়ার পেছনে দায়ী করছেন তত্কালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। তবে তিনি আশাবাদী বর্তমান প্রশাসন এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এক যুগ কেটে গেলেও তেমন কোন সাফল্য না থাকার পেছনে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ না করাকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। তবে তিনি আশাবাদী দ্রুতই এ অচলায়তন ভেঙে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনডোর আউটডোর গেম নিয়ে বাবুল মন্ডল আরও জানান, এগুলো না হওয়ার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিমনেসিয়াম না থাকার ফল। জিমনেসিয়াম না থাকায় শিক্ষার্থীদের ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে না পারার ব্যর্থতাও শিকার করেছেন তিনি।