‘গল্প জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম প্রয়াণ দিবস আজ’

‘গল্প জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম প্রয়াণ দিবস আজ’

 

এক ঝুড়ি গল্পের জাদুকর তিনি। গল্প দিয়েই মানুষের মনকে আলোড়িত করেছেন। মিসির আলী ও হিমুর লজিক-এন্টি লজিক, মধ্যবিত্তের সুখ-দুঃখ, এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বা ইতিহাসের বাদশা নামদাররাও স্থান পেয়েছে তার সে গল্পের ঝুড়িতে। আর এতেই তিনি পেয়েছেন সাধারণের অসংখ্য ভালোবাসা। তিনি হুমায়ূন আহমেদ; আজ রবিবার তার অষ্টম প্রয়াণ দিবস।

তাকে হারানোর শোক আজো ভুলতে পারেনি বাংলা সাহিত্যের অনুরাগীরা। এমনকি নাটক-সিনেমার আঙিনাও। হুমায়ূন আহমেদ গল্পে গল্পে জীবনের কথা বলেছেন, আনন্দ-বিষাদে ভাসিয়েছেন। তিনি বেখেয়ালি আবার দারুণ খেয়ালি বাঙালি মধ্যবিত্তের মুগ্ধতাকে, আনন্দ অশ্রুকে নতুন রূপ দিয়েছেন। অনাবিষ্কৃত বা অকথিত জীবনের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। আর এতেই তিনি বাঙালি পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন ভালোবাসার প্রিয় মানুষ।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক ২০১২ সালে ১৯ জুলাই রাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। বর্ষা ও জোছনা প্রিয় মানুষটি নির্জন প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসতেন। নাগরিক কোলাহল ছেড়ে তাই সবুজ ভালোবাসায় গড়ে তুলেছিলেন নুহাশ পল্লী। পরিবার-পরিজন, পাঠক, ভক্ত, ও শুভানুধ্যায়ীদের অশ্রুধারায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের সেই নুহাশ পল্লীতেই।
জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরই ছড়িয়ে পড়েছিল তার খ্যাতি। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’। শব্দের খেলা দেখিয়ে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন এই গল্পের জাদুকর। সহজ কথাতো আছেই, খুব কঠিন কথাও সহজে বলার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। প্রচণ্ড রসবোধ আর মানবচরিত্র চিত্রনে হুমায়ূন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের হিউমার মাস্টার। গল্প, উপন্যাস, টেলিভিশন নাটক অথবা চলচ্চিত্র- যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। হিমু, মিসির আলি কিংবা বাকের ভাইয়ের মতো আলোড়ন তোলা অনেক অমর চরিত্রের স্রষ্টা তিনি।
তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। তিনি তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। শব্দের খেলায় কিংবা সেলুলয়েডের পর্দায় ভালোবাসাময় হৃদয়ে এঁকেছেন বাঙালি মধ্যবিত্তের টানাপড়েন আর সংগ্রামী জীবন। জীবদ্দশাতেই পান একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা। আজ মৃত্যুর আট বছর পরও বাঙালির প্রাণের মানুষ হয়ে আছেন গল্পের এই জাদুকর।
যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এই বাঙালিদের মনে প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ স্যারও থাকবে।

লেখকঃ তাসফীর ইসলাম (ইমরান)
শিক্ষার্থীঃ বাংলাদেশ সার্ভে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *