টিউশনির টাকায় কেনা বাইক বিক্রি করে অসহায়দের পাশে ফেনী ইউনিভার্সিটির ছাত্র

| ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক | Avatar

ক্যাটাগরি :

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক: টিউশনির টাকায় কেনা শখের মোটরবাইক বিক্রি করে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন শুভ।

বন্ধুদের নিয়ে ফেনী শহরের বনানী পাড়া ও বারাহীপুর এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে তুলে দিয়েছেন ‘ভালোবাসার উপহার’।

ফেনী ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র মোজাম্মেল হোসেন শুভ।

করোনা পরিস্থিতিতে ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফেনী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন শুভ।

চাহিদার তুলনায় ত্রাণের অপর্যাপ্ততা ভাবিয়ে তুলে পঁচিশ বছরের যুবক শুভকে। এ পরিস্থিতিতে নিজে কিছু করার তাগিদ পিছু নেয় তার। এজন্য তিনি

গত ২২ এপ্রিল তার আরেক বন্ধু মোশাররফ হোসেন মোটরসাইকেল কিনতে চাইলে তার কাছে শখের মোটরসাইকেলটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন শুভ।

সেই টাকা থেকে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২৪ এপ্রিল শুক্রবার তার নিজ এলাকা বনানীপাড়ায় ২৫ পরিবারের হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী। পরে ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ওই টাকা থেকে শহরের বরাহীপুর এলাকায় ৩৫ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন খাদ্যসামগ্রী। কিছু টাকা বন্ধুদের নিয়ে গড়া ২০১১-১৩ ব্যাচের চ্যারিটি ফান্ডে দিয়েছেন শুভ এবং বাকি টাকা দিয়ে ঈদে অসহায়দের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা তার।

শুভর সঙ্গে নানা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নেন তার বন্ধু বাপ্পি, তানভির, আমজাদ, শুভ, জাকির, সৈকত ও মিল্লাত। এ কার্যক্রমেও বন্ধুরা তার পাশে থেকে সহযোগিতা করছে।

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজ পানুয়া এলাকায় শুভদের পৌত্রিক বাড়ি হলেও ছোটবেলা থেকে শহরের বনানীপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন তারা।

সৌদি ফেরত মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও পারভিন আক্তারের ছোট ছেলে মোজাম্মেল হোসেন শুভ। তার একমাত্র বড় বোন সাবিনা ইয়াসমিন লিজা বিবাহিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন শুভ জানান, মোটরসাইকেলের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক আমার। টিউশনির টাকা জমিয়ে এর আগে বেশ কয়েকটি পুরাতন মোটরসাইকেল কিনেছি।

সর্বশেষ গত তিন/চার মাস আগে অনলাইন প্লাটফর্ম ইভ্যালি থেকে অফারে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে (টিভিএস-আরটিআর) মডেলের নতুন মোটরসাইকেলটি কিনি।

তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহারের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণে যাই। আমরা আড়াইশ-তিনশ ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে যাই কিন্তু সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত হয়। মানুষের অসহায় মুখ দেখে নিজে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। সে চিন্তা থেকে বন্ধুর কাছে আমার মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেই।

শুভ আরও জানান, জীবনে বেঁচে থাকলে আরও মোটরসাইকেল কিনতে পারবো কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়তো আর পাবো না। সে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে অসহায়, কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, করোনা মহামারীতে সরকারের পাশাপাশি যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ালে মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। শুভর মতো সবাইকে এ পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহার জানান, অত্যন্ত মানবিক একটা ছেলে শুভ। যে কোনো সেবামূলক কাজে তাকে সব সময় পাশে পাই। করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণেও আমার সাথে নিয়মিত অংশ নেয় শুভ। তবে নিজের শখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে মানবতার সেবায় কাজ করছে শুনে আমি আবেগাপ্লুত হয়েছি।

তিনি বলেন, শুভর মতো করে আমরা যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে করোনা আমাদের হারাতে পারবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet