ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত এবং দুই লাখ মা – বোনের ইজ্জতের বিনিময় পেয়েছি আমাদের প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার জন্য ৭ কোটি বাঙালিকে বেছে নিতে হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ।
মুক্তিসংগ্রামে অকুতোভয় সেনানী ছিল বাংলার দামাল তরুণরা। তরুণেরা আজও আছে। স্বাধীনতা দিবস এ প্রজন্মের তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। সামনে নিয়ে আসে পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের মহিমা। স্বাধীনতার এত বছর পর এসে সেই স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদের।
স্বাধীনতার ৪৯ তম বর্ষে এসে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কি ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে তাদের ভাবনা তুলে ধরছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ ফাহাদ হোসেন হৃদয়।
“স্বাধীনতার মাসটা যতই না জম কালো ভাবে পালন করা হয়, তা কেবল এই মাসটায় সীমাবদ্ধ। বাংলা স্বাধীনতা চেতনায় অতটা বলীয়ান না। এর মূলে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা এবং মূল্যবোধের অভাব। এই যুগে দেশের কিছু মানুষ কেবল নিজ স্বার্থ চিন্তায় ব্যস্ত। নিজ গন্ডি থেকে বের হয়ে, সমাজে অবদান রাখার জো নেই। তাই আজ স্বাধীনতার এতকাল পরেও পালটায়-নি দেশের চিত্র।
দেশের স্বাধীনতা উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া,দেশকে অনুভব করা। এর জন্য দরকার মানুষের চিন্তা ধারার আমূল পরিবর্তন। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ধারণা দিতে হবে,মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। তবুও এখনো কিছু কিছু মানুষ আছে যারা একাত্তরের যোদ্ধার মত দেশের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছে। সকলের মধ্যে এই মনোভাব কাম্য।আশা করি নতুন প্রজন্মের হাতে দেশ এগিয়ে যাবে।”
আইনুল আজিম জাহিন, তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ, বুয়েট।
একটি রাষ্ট্র, একটি ভুখন্ড আর স্বাধীনতা একই সূত্রে গাথা। স্বাধীনতা শব্দটি বস্তুত একটি জাতিস্বত্বার চিত্রায়ণ। সে জাতিস্বত্বার চিত্রায়ণে স্থান, কাল পাত্রভেদে জায়গা নেয় সে দেশের ইতিহাস, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা। ১৯ মার্চ ১৯৭১বেলা ১১টায় মুজিব -ইয়াহিয়া বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “সবচাইতে ভালো কিছুর আশা করছি এবং সবচাইতে খারাপের জন্য প্রস্তত রয়েছি।”
সেদিনই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ইঙ্গিত দেন যা ২৬ শে মার্চ এর হাত ধরে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবন কে মহিমান্বিত করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট আমাদের বিবেক স্বাধীনতা নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলে ;সত্যিকার অর্থেই কী আমরা স্বাধীন? আমরা কী আদৌ দুঃখ-দৈন্য, নিয়ম -অনিয়ম, প্রাকৃতিক মহামারী , অত্যাচার -শোষণের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি? দেশের অবকাঠামো ও মানুষের জীবনযাত্রা সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়।
তবুও এতো কিছুর পরে আশার বাণী তরুণ প্রজন্ম। যে তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে স্বাধীনতা তার রুপ ফিরে পেয়েছে, সে তরুণ প্রজন্মই পারে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের হার না মানার মানসিকতা নিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে।
ইফতিয়া জাহিন রাইদাহ, অর্থনীতি বিভাগ,নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
“শিল্পী হায়দার হোসেনের ‘৩০ বছর’ গানটার ১৮ বছর এবং আমাদের স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও; আজও যেন আমরা স্বাধীনতা নামক পাখি হিসেবে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারি না। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি শোষণের পর ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের ফলে অর্জিত স্বাধীনতা যেন সবসময়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থকরণ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক দলসমূহের পারষ্পরিক দোষারোপ এবং বহিঃবিশ্বের প্রভাবের বেড়াজালে আটকে রয়েছে।
এসবের ফলে তরুণ প্রজন্ম তার শিকড় সম্পর্কে জানা হতে দূরে সরে যাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার যে মহান সফলতা, নিজস্ব স্বকীয়তা ও জাতীয়তা নিয়ে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এসব হতে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে দেশ। তাই বর্তমান ইতিহাস সচেতন তরুণদের উচিত মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা এবং দেশকে নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করা।
তারুণ্যের শক্তিই পারে দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা লালন করে বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিতে স্ব-স্ব অবস্থান হতে ভূমিকা রাখলেই তবে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে কেনা স্বাধীনতা অর্থবহ হবে।”
মাজহারুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
“১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাত্রির পরে ২৬ শে মার্চ ১ম প্রহরে যখন স্বাধীনতার ঘোষণা আসে,সেই থেকে এই দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পরিচিত।এই দিনটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতীব গুরুত্বপূর্ন।২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর বাঙালি নব উদ্যম ও প্রেরণায় ঝাপিয়ে পড়ে পাক-হানাদার বাহিনীর উপর।সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে।
ঌ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর আমরা পাই আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা।এই যে এতো ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, এর মূল্য আমাদের রাখতে হবে।মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা বেশি কঠিন।
এই সার্বভৌমত্বের মূল্য আমাদের রাখতে হবে।তাই দেশের সকল নাগরিকের কাছে অনুরোধ রইলো,এই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যাতে বিফলে না যায়।আমরা সবাই হাতে হাত রেখে,কাধে কাধ মিলিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ।”
আব্দুল্লাহ জুন্নুন, রসায়ন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
“স্বাধীনতার সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখিনি অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য ও হয়নি। তবে স্বাধীনতা রক্ষায় একজন তরুন হিসাবে আমি সর্বদাই তৎপর। স্বাধীনতার প্রায় সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে এসে সে সংগ্রামী ইতিহাস থেকে পাওয়া শিক্ষা বুকে ধারন করে এখনো রাজপথে দাঁড়িয়ে নিজের অধিকার আদায় করতে জানি আমরা।
আমরা তরুণপ্রজন্ম পেরেছি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন কে একটি সফল আন্দোলন হিসাবে রুপ দিতে পেরেছি, স্বাধীনতার মাসে একটি বিষয় খুব গর্ব করে বলা যায় বর্তমান সরকার বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে নানাবিধ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তবে এটি বাস্তব রুপে ধারণ করতে না পারলে বর্তমানের চেয়েও বেশি বেকারত্ব সমস্যা সংকটে পরবে দেশ। আমরা তরুণ প্রজন্ম আশা হারিয়ে ফেলবো,বর্তমান তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার যে প্রবণতা বেড়েছে, সরকারের সাপোর্ট পেলে এই ক্ষেত্রে আমরা একজন উদ্যোক্তা হিসাবে সফল হতো পারবো ইনশাআল্লাহ।”
মাজহারুল ইসলাম রাকিব, রসায়ন বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
“স্বাধীনতা নিয়ে যখনই কিছু বলতে হয় তখনই উঠে আসে পরাধীনতার কথা। আমরা বাংলাদেশিরা ২৬ মার্চ ই শুধু স্বাধীনতার কথা বলি বছরের বাকি ৩৬৪ দিন যেনো আমরা ভুলে যাই। একটা দেশের স্বাধীনতা বিচার করতে হয় সেই দেশ তার স্বাধীনতা অর্জনে কতটা রক্ত ঝরিয়েছে সেটা দেখে নয় বরং স্বাধীনতা অর্জনের পর ওই স্বাধীন দেশের মানুষরা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে তাদের লেখনি শক্তিটুকু প্রকাশ করতে পারছে কিনা সেটা দেখে।তাই তো বলা হয়ে থাকে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন ‘।
বাংলাদেশে তার স্বাধীনতার ৪৯ এ পা রাখলেও আজও এই দেশের সীমান্তে ফেলানীর মত নিরীহ বাঙালির লাশ দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেনো প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তাই আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুল দায়িত্ব যাদের হাতে সেই সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি কে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা দরকার। তা না হলে বাংলার এই স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে পড়তে আর বেশি সময় লাগবে না।”
ইফতেখার উদ্দিন কাফী, রসায়ন বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।