নিজস্ব প্রতিবেদক, দ্য ক্যাম্পাস টুডে
বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করছে। দেশ একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে। এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বেশি ও বড় ভূমিকা যারা রাখতে পারেন তারা হলেন গবেষকগণ। পলিসি মেকিং ও বৃহত্তর প্রকল্পে গবেষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে উন্নয়ন হবে আরও গতিশীল ও টেকসই। বাংলাদেশের ঔষধশিল্পের উন্নয়ন তেমনি অতীতের কিছু ভাল সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়নে দেশের ফার্মেসী শিক্ষা ও গবেষণায় দেশের সেরা মেধাবী গবেষক শিক্ষকগণের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলাফল।
দেশের গৌরবোজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ এক পা দু’পা করে সামিল হচ্ছে সেই যাত্রায়। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে নিরলস ভাবে যে ক’জন শিক্ষক কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অন্যতম হলেন ডঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম।
ডঃ মোঃ তরিকুল ইসলামের জন্ম যশোর জেলার এক সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবাকে মাঠে খাবার দিয়ে মাঠে কাজ করে বাড়ি ফিরে আবার রওয়ানা করতেন স্কুলে। কৃষি কাজের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়, মনের মধ্যে সৃষ্টি হয় নানা প্রশ্ন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় নিজের অবস্থান করে নেন ঢাকা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে শুরু করেন তার স্নাতক যাত্রা এবং যা সম্পন্ন করেন খুবই ভালো ফলাফল নিয়ে।
স্নাতক শেষেই যুক্ত হন পড়ানো ও গবেষণার যাত্রায়, প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবনের শুরু সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, এক দিকে বি. ফার্ম. কোর্স পড়ানো অন্যদিকে নিজে পড়া এভাবেই এক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এম. ফার্ম. (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। গবেষণায় ঝোঁকটা তৈরি হয় এখান থেকেই। প্রকাশিত হয় বেশ কিছু গবেষণা কর্ম। একদিন হঠাৎ করে ই-মেইল পান দক্ষিণ আমেরিকার একজন প্রফেসরের, অফার পান ফুল ফান্ডেড পিএইচডি স্কলারশিপের। অফার গ্রহণ করে পাড়ি দেন ব্রাজিলে। ২০১৭ সালে ভূষিত হন ডক্টরেট ডিগ্রী তে। এরপরে পোস্ট-ডক্টরেট সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন দেশে ফার্মেসী শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের একরাশ স্বপ্ন। দেশে ফিরে ২০১৮ সালে তিনি প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)-এর ফার্মেসী বিভাগে এবং বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে, নিয়মিত বিভিন্ন (সরাসরি ও অনলাইন) কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছেন এই শিক্ষক। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারেও গবেষণা প্রশিক্ষণ প্রদানে অংশগ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্নাতক শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে নিজেকে নিয়জিত করেছেন বেশ কিছু পাঠ্যবই রচনায়। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- Pharmacognosy in natural product and drug Discovery, Introduction to Research and Project Management।
গবেষণা শেখা ও শেখানোর এই যাত্রায় তার প্রোফাইলে যুক্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক প্রকাশিত গবেষণাপত্র যেগুলো বিশ্বের অসংখ্য গবেষক দ্বারা সাইটেড হয়েছে পাঁচ হাজারেরও অধিকবার।
সপ্তাহের প্রতিটি কর্মদিবসে তিনি ব্যয় করেন ক্লাস নিয়ে ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা শিখাতে। প্রচার বিমুখ এই গবেষক কাজ করে জান নিভৃতে। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক সন্তানের জনক এবং খুব সাধারণ জীবনবোধ লালন করেন। অবসর সময় কাটান ছেলের খেলার সঙ্গী হয়ে, রিসার্চ মডেল ডিজাইন, পত্রিকায় কলাম, রিসার্চ পেপার ও বই লিখে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন সম্মাননায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
2023: Asia Research Awards ASTRA 2023
2021: ISSN Golden Research Award 2021, India.
2021: International Scientist Awards on Engineering, Science and Medicine 2021. by VDGOOD Technology and Factory.
2017: XIII Congresso da Mutagen-Brazil, 2017. Ribeirao Preto-SP, Brazil
2016: Brazilian Journal of Biodiversity and Biotechnology Award 2016, Brazil. (Abstract)
2016: Isaac Newton Research Award 2016 in Genetics & Lifetime Membership at Photon Foundations (International Agency for Standards and Ratings)
2016: Best Poster presentation award (Brazilian Congress on Nutritional Oncology of INCA 2016), Brazil.
2015: Best poster presentation award (EECF II International Symposium 2015), Brazil
2004-2008: Merit Scholarship (Khulna University)
1995-1996: Secondary School Government Scholarship
একজন গবেষক ও কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে ইতিপূর্বে খন্ডকালিন কাজ করেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
এছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী প্রোক্টর ও শিক্ষক সমিতির সদস্য হিসেবে। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অধিকাংশ জায়গা জুড়েই রয়েছে তার শিক্ষার্থীরা, তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ও পরামর্শ দেন দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেকে তৈরি করতে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে বিশ্ব মানের হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- “বিশ্ববিদ্যালয় হল উচ্চতর লেখাপড়ার তীর্থস্থান; গবেষণা এর মূল ভিত্তি। শুধু দক্ষ কর্মজীবী শিক্ষার্থী গড়া নয়, নিত্য-নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেগুলোর যথাযথ বিকাশ করাই বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমুহে পর্যাপ্ত গবেষক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরী। ফলে পর্যাপ্ত গবেষণামূলক উচ্চতর পড়ালেখা, যেমন এমফিল, পিএইচডি, পোস্টডক্টরেট প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব হবে। এতে করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সরাসরি গবেষণামূখর পরিবেশের সাথে নিজেদের পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবে। তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ স্কলার শিক্ষার্থী। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ বিশেষ কর্মক্ষেত্রে গবেষকদের নিয়োগের ব্যাপারে প্রাধান্যতা দিতে হবে। মূলকথা, গবেষক ও গবেষণার কদর আরও একধাপ বাড়িয়ে দিলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত গবেষণার পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যাবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ মিলে গবেষণা কর্মকাণ্ড (যেমন- ল্যাবওয়ার্ক, প্রকাশনা, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদি) বাড়িয়ে দিলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ বিশ্ব মানের হয়ে উঠতে পারে। তবে এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমুহে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি সহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত গবেষণাফান্ড ও বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।”
ভালো গবেষক হতে কি কি করনীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন- “গবেষণায় প্রবল ইচ্ছাশক্তি, কঠোর অধ্যবসায় ও নিত্য-নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বলিত লেখাপড়ার সাথে লেগে থাকা অত্যাবশ্যকীয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রত্যেক গবেষক শিক্ষার্থীর উচিৎ তার চতুর্থ সেমিস্টার শেষে এক বা একাধিক পছন্দের বিষয়াবলী থেকে কিছু টপিক বেঁছে নেয়া যে বিষয়ে তার আরও গভীরতর জ্ঞান লাভ করতে ইচ্ছা করে। তারপর সে বিষয়ে গবেষণা করছে এমন এক বা একাধিক অভিজ্ঞ গবেষক শিক্ষকের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করা, গবেষণার বিষয়াবলী আলোচনা-পর্যালোচনা করা, ও উক্ত বিষয়ক গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের সহিত সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা।”
আপনার নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ এর গবেষণার মানোন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা বা পরামর্শ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- “জাতির পিতার পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জে অবস্থিত বশেমুরবিপ্রবি বাংলাদেশের একটি অন্যতম নতুন ও উঠতি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি একটি ইয়ং ও কর্মঠ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দের পদচারণ মুখর উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বল্প জায়গায় এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত বিভাগ ও ফ্যাকাল্টি। বর্তমানে উন্নত ও মানসম্মত গবেষণায় কোলাবরেশনের কোন বিকল্প নেই। তাই প্রয়োজনবোধে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ সহজেই গবেষণার আইডিয়া শেয়ার ও গবেষণাকাজে একে অপরের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারবে। পর্যাপ্ত গবেষক শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি প্রদান, সর্বোপরি দেখভাল করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অভিজ্ঞ ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে পারলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উভয়ই গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ পাবে।”