সুপর্না রহমান টুছি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
ছেলে মেয়েদের প্রিয় নানী। প্রায় এক যুগ ধরে মিটিয়ে আসছেন তাদের সব বায়না। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে ঢু মেরে স্বাদ পায় নানীর এই দোকানে। পঙ্গুত্ব ও করোনা মহামারি আজও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে৷
পান মুখে বড় বড় চোখের চাহনি। কথা বার্তা স্বচ্ছ ছোয়া। হবে না কেন? জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার পথ হিসেবে সামর্থ্য অনুযায়ী চায়ের দোকান তৈরি করেন মমতাজ বেগম।
আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যায় তাঁর। সঠিক চিকিৎসার অভাবে সঙ্গী হয় পঙ্গুত্ব। চেহারায় বয়সের ছাপ, চামড়ার ভাঁজ ও চুলে পাক ধরেছে। ক্র্যাচে ভর দিয়ে ঠুক ঠুক করেই তাঁর চলাচল।
তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডে চাকরি করেছেন। এখন তা অতীত। স্বামী মারা গেছে অনেক আগেই। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাঁর চা বিক্রি শুরু।
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমান্তে মমতাজ বেগমের এই দোকান। সারি করে রাখা আছে কাঠের বেঞ্চি। টিনের চালে রোদের উত্তাপের সাথে দমকা বাতাস যে-কারও মন ভোলায়।
দোকান সাজিয়েছেন রুটি, কলা, কেক, চিপস, চকলেট, আচার সহ অনেক মনিহারি খাবার-দাবার দিয়ে। যা দলবেঁধে আসা শিক্ষার্থীদের গল্পের জ্বালানীর যোগান দেয়। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই চলে তাঁর দোকানের বেচা কেনা।
করোনাযুদ্ধে লুটিয়ে পড়েননি এই নানী। ক্রেতা বলতে এখন আশেপাশের অল্পকিছু স্থানীয় বাসিন্দা।
তিনি বলেন, এসময়ে দোকানে নিত্য সামগ্রী তুলেছি। লকডাউনে যা পেরেছি তাই বিক্রি করেছি। এখন আমার ছেলেও দোকানে বসে। ছেলে চাকরি করতো, ছেড়ে দিছে। আমি তো একা চাল, ডাল, আটা বেচতে পারি না৷
৬০ বছরেও মমতাজ নানীর স্মৃতি ধারাল। ৭১ সনের মুক্তিবাহিনীদের গল্প শোনান সুযোগ পেলেই। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন আমার বয়স আছিল ১০ বা ১২। আমাগো বাড়ি কত্তো মানুষ আইসা লুকিয়ে থাকতো। নবীনগরে সারাদিন বোমা ফেলতো। চারদিক সাদা আর সাদা হয়ে যাইতো। মানষে গর্তে উপরে তালপাতা দিয়ে লুকিয়ে থাকতো। ঐসময়ে যারা রাজাকারে নাম দিছিলো, মুক্তিবাহিনী ওগরে মারে নদীতে ভাসে দিছে৷’