আবু হাসনাত তুহিন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি: ১৪ মার্চ এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী দিবস। এই দিবস উপলক্ষে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ সেজেছে নতুন এক সজ্জায়। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, আলপনা এবং বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন কাজ প্রদর্শনের মাধ্যমে এই বিষয়ের অবদান এবং কাজ সকলের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। গৃহপালিত বিভিন্ন পশু পাখি পালন করতে গিয়ে মুখোমুখি বিভিন্ন সমস্যার বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমাধান এবং রোগ প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তার একটি দিকনির্দেশনা সকলের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
পশুপালন তথা এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী নামটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অনেকটা অজানা থাকলেও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী। মূলত বিভিন্ন ধরণের পশু পাখি অথবা গবাদি পশুর বৈজ্ঞানিক উপায়ে পালন, তাদের বৈজ্ঞানিক উপায়ে জাত(Breed) উন্নয়ন এবং যথাযথ খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে তাদের মোটাজাতকরণ হলো পশুপালনের মুখ্য উদ্দেশ্য।
এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী ডিগ্রির যাত্রা শুরু হয় ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে এই ডিগ্রির চাহিদা অনুধাবন করে ২০১২ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশুপালন ডিসিপ্লিনের উপর অনার্স ডিগ্রি চালু করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এই দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পশুপালন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছে ছিল একটি সোনার বাংলা গড়া। মাঠে সোনার ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তার ছিল বিশেষ পরিকল্পনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও উদ্যোগে ১৯৭৩ সালে গবাদিপশুতে যুগান্তকারী কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি প্রবর্তন ও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের মাধ্যমে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বহুমাত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দেশি গরুর উন্নয়ন ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম কৃষিবিদদের ক্লাস ওয়ান মর্যাদা দিয়েছিলেন। বর্তমানে তারই চিন্তার ফসল হিসাবে আজ আমরা আমিষের ঘাটতি থেকে বাড়তি অবস্থানে এসেছি। তিনি মিল্ক ভিটা প্রতিষ্ঠা করে ডেইরি সেক্টরের অগ্রযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি ডেইরি জোনকে লাভজনক করার জন্য সকল পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। তার এই স্বপ্নকে এখনো লালন করে প্রাণিসম্পদ কে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পশুপালনবিদরা।
পশুপালন বিষয়টিকে চেনা, এই বিষয়টির উপর ভালোবাসা জন্মানো, এই বিষয়টির গুরুত্ব এবং এই বিষয়টির কাজের হাতেখড়ি শুরু হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী বিষয়ে অধ্যয়নের মাধ্যমে। ১৪ মার্চ “এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী”বিষয়ে অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি ভালোবাসার প্রতীক।
এ্যানিমাল হাজবেন্ড্রী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে। এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পশুপালন অনুষদ, বাকৃবি। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন প্রফেসর ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন প্রাক্তন উপাচার্য, পবিপ্রবি, জনাব মশিউর রহমান, এমডি. প্যারাগন গ্রুপ, প্রফেসর ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার, বাকৃবি, প্রফেসর ড. মোঃ আহসানুর রেজা, ডিন, এএনএসভিএম অনুষদ, পবিপ্রবি। উক্ত আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন, প্রফেসর ড. তন্বী চন্দ্র।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, “যে কোন উন্নত দেশ প্রাণিসম্পদে উন্নত। একজন মানুষের কর্মক্ষমতা ও মেধার বিকাশ ঘটে শরীরের পুষ্টি থেকে আর এই পুষ্টির সিংহভাগ আসে প্রাণিজ খাদ্য থেকে। মেধা ও কর্মক্ষম ব্যক্তিবর্গ একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। আমাদের জাতীয় আয়ের ১.৭ ভাগ আসে প্রাণিসম্পদ থেকে। দেশের ২০ভাগ মানুষ প্রাণিসম্পদের সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে জড়িত। বর্তমান সরকারের দারিদ্রবিমোচন কর্মসূচিতে প্রাণিসম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এবং সুস্থ সবল জাতি গঠনে প্রাণিজ আমিষের বিপুল ঘাটতি নিরসনে এই সেক্টরের প্রতি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হবে।”