সুপর্না রহমান, গবি প্রতিনিধি : মানুষকে চেনায় প্রাণরসায়ন আর আনবিক পর্যায়ে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে অনুপ্রাণ বিজ্ঞান। ইংরেজিতে যাকে বলে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি। মানুষের কাছে বিজ্ঞানের এই বিভাগ এখনও অজানা। রহস্যময় এই বিষয় যেন আশ্চর্য গোলকধাঁধা।
কে আমি, কি আমার পরিচয়, কিভাবে রোগে আক্রান্ত হই, কিভাবে সেগুলো ধ্বংস করতে পারি, কিভাবে ইচ্ছামত ডিজাইন করে একটি প্রাণী সৃষ্টি করা যায়। প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে চলছে নতুন গবেষণা। তাই একবিংশ শতাব্দীকে নিঃসন্দেহে বলা হয় প্রাণরসায়ন আর অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের।
বাংলাদেশে কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি পড়ানো হয়। জীববিজ্ঞানের দক্ষতার পাশাপাশি হতে হবে ধৈর্য্যশীল। খুবই অভূতপূর্ব চিন্তাবিদ, মানবিক গুণসম্পন্ন এবং কঠোর পরিশ্রমীরাই এই বিষয়ে ভালো করে। কিন্তু কোথায় আছে এই বিষয়ে চাকরি? মানুষ কেমন মূল্য দেবে আমায়? দিন শেষে আসে নিজের অগ্নি পরীক্ষার পালা। তবে ক্যারিয়ার গড়ায় সুনামের সাথে চমৎকার সব সু্যোগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য স্কলারশিপের সুবিধা।
দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বায়োকেমিস্টরা বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষকতা, বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানি, বায়োটেকনোলজি কোম্পানি, ক্যামিক্যাল ইন্ড্রাস্টি, ফুড ইন্ড্রাস্টি, ফরেনসিক ল্যাব, মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, ডায়াগনোস্টিক ল্যাব, কসমেটিক ইন্ড্রাস্টি ইত্যাদিতে কাজ করতে পারেন। এছাড়া বায়োকেমিস্ট্রতে ডিগ্রিধারীদের জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যবসা ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।
একজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট একাধারে একজন বায়োকেমিস্ট, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। সে একজন অর্গানিক কেমিস্ট কারণ নিজের আবিষ্কৃত ওষুধের মলিকুলার গঠন তাকে বের করতে হয়। একজন পরিসংখ্যানবিদ এবং কম্পিউটার প্রকৌশলীও বটে। কারণ বিশাল ডিএনএ এনালাইসিসের জন্য তাকে সফট ওয়ার ডিজাইনও করতে হয়।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারীরা সাধারনত বিসিএসআইআর, আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন, ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউড অব বায়োটেকনোলজি, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বারডেম, বিসিআইসি , বিএসএমএমইউ (পিজি), বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস আস্যোশিয়েশন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশন্যাল ফরেনসিক ডিএন এ প্রোফাইল ল্যাবরেটরীর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএসটিআই ও বাংলাদেশ এ্যাক্রোডিটেশন বোর্ড এর পরীক্ষক, ওয়াসার সহকারি রসায়নবিদ ও সহকারি জীবানুবিদ, বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের অধীন সহকারি রসায়নবিদ ও প্রানরসায়নবিদ, শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের পেটেন্ট ডিজাইনার(প্রানরসায়ন), স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীন ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার, ড্রাগ ইন্সপেক্টর, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,শিশু হাসপাতালের অধীন সি এইচ আর এফ এর রির্সাচ অফিসার, বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ প্রভৃতি সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে চালু হয় বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ। কম খরচে স্নাতক সম্পন্ন করা যায়। যা দেশে অদ্বিতীয়। বিভাগের প্রধান ড. ফুয়াদ হোসেন ক্যাম্পাস টু ডে’কে জানান, গবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বানানো হয়েছে। আমরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি বায়োকেমিস্ট্রি গ্রাজুয়েটকে গবেষক হিসেবে তৈরি করি। আমাদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতে তারা যেন কর্মক্ষেত্রে সফল ভাবে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে।