বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ প্রতিষ্ঠার পরে ১২ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নিজেদের কোনো সাবেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চাকরির ক্ষেত্রে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীরা অবহেলিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
বশেমুরবিপ্রবি সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক-কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করলেও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের শিক্ষার্থীদের ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নূর হাসান মাহমুদ শাহিন বলেন, ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পর একজন আবেদনকারীর যে ধরনের আচরণ পাওয়ার কথা আমি সে ধরনের আচরণ পাইনি। ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত ব্যক্তিদের আচরণে মনে হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণেই আমাকে অবহেলা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিজেদের শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত আমাদের মূল্যায়ন করেনি। এই বিষয়গুলোর অবসান ঘটা জরুরি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রথম সারির বেসরকারিসহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমরা কম যোগ্যতাসম্পন্ন, এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ইনিস্টিটিউট অব সায়েন্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির সাবেক প্রভাষক ফাহিম সিকদার বলেন, প্রভাষক পদের জন্য আমার ভাইভা খুব ভালো হয়েছিল এবং আশাবাদীও ছিলাম। কিন্তু আমাদের মধ্য থেকে কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাদের নিয়োগ না দিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। নিজের ভাইভা অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রেজোয়ান হোসেন বলেন, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার চাকরির জন্য ভাইভা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল যেখানে আমিই ছিলাম একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং অধিক যোগ্য প্রার্থী। ভাইভা বোর্ডে ঢোকার পরে তাদের আচরণ দেখে আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম চাকরিটা আমার হচ্ছে না।
এছাড়া সাবেক শিক্ষার্থীদের আরও অনেকে জানান, তাদের প্রায় সকলেই ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পর অবজ্ঞাসূচক আচরণ পেয়েছেন। অনেকসময় ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত পরীক্ষকরা প্রার্থীর প্রশংসা করলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি হয় না। অনেকের উচ্চতর ডিগ্রি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থাকলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্নকারী এবং অনভিজ্ঞদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নজির রয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আমি আমার শিক্ষার্থীকে সহকর্মী হিসেবে পেলে সেটি আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হবে। তাছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ বেশি থাকে। যখন আমাদের শিক্ষার্থীরাই এখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবে তখন বিশ্ববিদ্যালয় আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। তাই আমি প্রত্যাশা করি মেধা ও যোগ্যতা থাকলে অবশ্যই আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে আমরা কিছুটা অগ্রাধিকার দিতে পারি। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা এবং যোগ্যতায় কম্প্রোমাইজ (ছাড় দেওয়া) করা যাবে না। তবে যদি এমন হয় যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমযোগ্যতার, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা আমাদের শিক্ষার্থীকে সুপারিশ করবো।