ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের এক যুবক বিজনেস ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েছিলেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করেছে। সেই চাহাউসের আয় শুনলে মাথা ঘুরে যাবে। চায়ের দোকান খোলার পর মুনাফা প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি। এখন, যুবকটি একটি চা হাউস থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আয় করে।
নেল্লোর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের এক নামজাদা কলেজে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সঞ্জিৎ। তবে স্নাতকস্তরের সেই কোর্স শেষ করেননি তিনি। তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সঞ্জিৎ।
সাহসে ভর করেই সুদূর মেলবোর্নে নিজের স্টার্টআপ খুলে বসেন সঞ্জিৎ। শহরের খোলা রাস্তায় একটি চায়ের দোকান খোলেন তিনি।
মেলবোর্নের সেন্ট্রাল বিজ়নেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি)-এর এলিজ়াবেথ স্ট্রিটের ব্যস্ত রাস্তায় সঞ্জিতের চায়ের দোকানে আজকাল ভিড় উপচে পড়ছে। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়রা তো বটেই, ভিড় জমাচ্ছেন অজ়িরাও। সঞ্জিতের দোকানে গিয়ে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন গুটি কয়েক লাতিন আমেরিকানও।
নিজের দোকানের গালভরা নামও রেখেছেন স়ঞ্জিৎ— ‘ড্রপআউট চায়েওয়ালা’। এলিজ়াবেথ স্ট্রিটে ঘুরতে এসে পর্যটকেরাও সেখানে উঁকিঝুকি মারছেন। সেখানকার ভারতীয়দের প্রিয় আড্ডাখানা হিসাবেও নাম কামাচ্ছে সঞ্জিতের চায়ের দোকান।
সব ছেড়েছুড়ে হঠাৎ চায়ের দোকান দিতে গেলেন কেন? তার মা-বাবাই বা এ খবর শুনে কী বলেছিলেন? সংবাদমাধ্যমের এ হেন প্রশ্নের জবাবে সঞ্জিৎ বলেছেন, ‘‘পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা জানতে পেরে গোড়ার দিকে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মা-বাবা। আমি যে নিজের ব্যবসা করার চেষ্টা করছি, তা জেনে কিছুটা চিন্তায়ও পড়েছিলেন।’’
আরও পডুনঃ বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ইলেকট্রিক বাস নিয়ে এলো ওয়ালটন
মেলবোর্নের রাস্তায় যে সঞ্জিৎ চায়ের দোকান খুলতে চান, তা জেনে আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। একে তো ওই শহর বেশি পরিচিত কফিপ্রেমীদের জন্য। তার উপর, সঞ্জিতের মতো আনকোরা তরুণের দেশীয় চায়ের স্বাদ চাখতে কত জন চাইবেন, তা নিয়েও চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরা। যদিও সঞ্জিৎ বলেন, ‘‘মেলবোর্ন কফি ক্যাপিটাল হলেও এখানেই চায়ের জয়েন্ট খোলার কথা ভেবে নিয়েছিলাম!’’
মেলবোর্নে এই চায়ের দোকান খোলার পিছনে যে পরোক্ষে হলেও তার মায়ের হাত রয়েছে, তা জানিয়েছেন সঞ্জিৎ। ওই শহরে তার কাছে ঘুরতে গিয়ে শত খুঁজেও নাকি ঘরের চায়ের স্বাদ পাননি সঞ্জিতের মা-বাবা। সে সময়ই ওই শহরের রাস্তায় একটা চায়ের দোকান খোলার কথা ভেবে নেন সঞ্জিৎ।
ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে সঞ্জিৎ বলেছেন, ‘‘মেলবোর্নে ঘুরতে এসে আমাদের ঘরের মতো চায়ের স্বাদ পেতে ঘাম ঝরে গিয়েছিল মা-বাবার। সে সময়ই এখানে চায়ের দোকান খোলার কথা মনে হয়েছিল।’’
চায়ের দোকানের এ হেন নাম কেন? সংবাদমাধ্যমের কাছে সঞ্জিৎ বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই চায়ের প্রতি টান ছিল। ফলে এই নাম দেওয়ার কথা মনে এসেছিল।’’ দোকানের নামের সঙ্গে যে তার পড়াশোনা ছাড়ার বিষয়টিও জড়িত রয়েছে!
সঞ্জিতের বিষয়ভাবনার উপর ভরসা রেখেছিলেন আসরার নামে এক অনাবাসী ভারতীয়। তাঁর দোকানের যাবতীয় খরচপাতি তিনিই জুগিয়েছেন। সে ভরসার ফসলও ফলেছে। সঞ্জিৎ বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, পরের মাসে আমাদের মুনাফা ৫.২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আয়কর এবং অন্যান্য খরচাপাতির পর হাতে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার মুনাফা থাকবে।’’
ডিগ্রিহীন চা ওয়ালার সাফল্যে যারপরনাই খুশি সঞ্জিতের মা-বাবা। সঞ্জিৎ বলেন, ‘‘যে ভাবে শুরু করেছিলাম আর এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, তাতে আমাকে নিয়ে মা-বাবা গর্বের অন্ত নেই।’’
সঞ্জিৎ জানিয়েছেন, তার চায়ের দোকানের ‘বম্বে কাটিং চা’ ভারতীয়দের মধ্যে সুপারহিট। বিদেশিরা আবার ‘মশলা চা’ বা পকোড়া বেশ তারিয়ে তারিয়ে খান। খদ্দের টানতে এ বার ‘চায়পুচিনো’ নামে এক পাঁচমেশালি চা তৈরি করছেন সঞ্জিৎ। এ যেন খানিকটা ক্যাপুচিনোর চায়ের সংস্করণ!
নিজের দোকানে কি তার মতো ডিগ্রিহীনদের কাজ দেবেন? সঞ্জিতের সাফ জবাব, ‘‘ডিগ্রি নয়, কাজের প্রতি টান রয়েছে এমন কঠোর পরিশ্রমীদেরই কাজে রাখতে চাই।’’ সঞ্জিতের স্বপ্ন, ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি শহরে তার অন্তত একটি চায়ের দোকান থাকবে। সেই সঙ্গে সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে ডিগ্রিও হাসিল করতে চান তিনি।