বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের, উপাচার্য বন্ধের পক্ষে

মাইনুদ্দিন পাঠান, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি


সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে সনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের আক্রমন থেকে মুক্তি পেতে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি চেয়ে দাবী তুলেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করার দাবী তুলেন তারা।

চীনের উহানে প্রথমে শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাস বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশেও এই ভাইরাস চলে এসেছে। এ নিয়ে সকলের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করলেও নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম চলছে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। মোঃ মাহদী হাসান খান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে নোবিপ্রবি বন্ধের পক্ষে অবস্থান করছি। আমরা সবাই হল এবং মেসে প্রতি রুমে ৪-৬ জন অবস্থান করি। হলের ডাইনিং এ খাবার খাই ১০০ থেকে ১৫০ জন করে। বাসে গাদাগাদি করে আসা-যাওয়া করি সকলে। ক্লাসে উপস্থিত থাকি প্রায় সবাই।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবরক করোনা ভাইরাস নিয়ে খোলা চিঠি প্রকাশ করছে।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসের প্রায় প্রত্যেক জায়গায় আমরা অবস্থান করি। আমাদের সবারই জানা করোনা বাতাসের চেয়ে বেশি বেগে সংক্রামিত হয়। এবং এর ফলাফল কেমন হতে পারে তা আমরা প্রায় সবাই দেখেছি। ক্যাম্পাসের দুই-এক জনের এই সমস্যা হলে তা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না।প্রশাসন তখন বন্ধ ঘোষণা করলে তা আরও ভয়ানক হবে। কারন তখন তা ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ঘরে নিয়ে যাবে। তাই সময় থাকতে প্রশাসনের কাছে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য অাকুল আবেদন জানাচ্ছি।

মো নুর রাব্বি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হলেও আমরা উন্নত দেশ না। আমাদের ছোট্ট দেশটায় একবার ছড়ালে পুরা দেশই কবরস্থান এ পরিনত হবে। জনগনের সচেতনতার জন্য সরকার কাজ করলেও এর পাশাপাশি এখনই আরো উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। না হয় আমাদের পুরা দেশ কেই এর পরিনাম দিতে হবে ।

স্কুল,কলেজ, ভার্সিটি সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রেখে সেগুলো আইসুলেশন ক্যাম্প করা খুবই জরুরী হয়ে পরেছে। কারন আমরা কেউই জানিনা দেশে কতজন করোনার রোগি আছে এবং কতজনের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রাখাটাই ভাল। ইতিমধ্যে সিলেটের একজন মারা গেছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে।

এছাড়াও কিছু শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বন্ধ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদেরকেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার দাবী জানান।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলম বলেন, আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হোক। আজকে স্কুল, কলেজ বন্ধের বিষয়ে মিটিং বসেছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামীকাল মিটিংয়ে বসব। তবে সরকারি নির্দেশ আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা হবে।

সচেতনতার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে নোবিপ্রবি অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো ফয়সাল হোসাইন বলেন, অধিক ছড়ানোর আগেই আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ। এ জন্য সকলকে লোকসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এবং মুখ থেকে হাত সাধ্যানুযায়ী দূরে রাখার এবং সবসময় পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে বলেন।

তিনি আরো বলেন, এটি খুব দ্রুতগামী একটি ভাইরাস। যা অল্প সময়ে খুব বেশি ছড়ায়। তাই এ ভাইরাস ছড়ানোর আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধের ব্যাপারে সর্বোচ্চ মহলকে চিন্তা করতে হবে। কারণ একবার ছড়ানোর পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়ে নিজেদের সমাজে ছড়ার মাধ্যমে ব্যাপক আকার ধারণ করবে।

এবিষয়ে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে আনলে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাহত হতে হবে না।

বন্ধের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে নোবিপ্রবি প্রক্টর প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করা হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহ নোয়াখালীবাসীর মাঝে বিনামূল্যে অথবা সুলভ মূল্যে প্রদান করা হবে। আগামীকাল এ নিয়ে একটি মিটিং ডাকা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *