মো: মোতাহার হোসেনঃ বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সীমিত না করে ভর্তি পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয়বার বা তার অধিকবার অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে নানাবিধ অযৌক্তিক শর্ত শিক্ষার্থীদের জন্য যাতে ভোগান্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। যদিও শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে হরহামেশাই লেখালেখি হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি এ নিয়ে কাজ করলেও এখনো ফলপ্রসূ হয়নি। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা উচিৎ বলে মনেকরি,পৃথিবীর কোন দেশে বাংলাদেশের মত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্যাটার্ন ও মান বন্টন নেই, এবং সেখানে স্টাডি গ্যাপ/গ্যাপ অফ স্টাডি স্নাতক পর্যায়ে কমপক্ষে ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে সেরকম কোন সুযোগ নেই।
যদিও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া আমার লেখার আলোচনার বিষয় নয়, তবুও স্টাডি গ্যাপ সংক্রান্ত আলোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আপনারা বিশ্বের ১০০০ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শর্তাবলী দেখুন কোন বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একবার ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এর শর্ত দিয়েছে। শুধু তাই নয়, QS World University Ranking এবং Times Higher Education যে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking করে সেই তালিকাভুক্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই শুধু একবার ভর্তি প্রক্রিয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে এমন তথ্য নেই। তাহলে বাংলাদেশ কেন আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে শিক্ষার্থীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে?
এবার বাংলাদেশের বৈষম্য মূলক শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আলোকপাত করা যাক। বাংলাদেশে বহুমুখী ও বহুধারার শিক্ষা ব্যবস্হা বিদ্যমান। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। যার ফলে অনেক মেধাবীরা তাদের কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনা। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক উদ্ভট ঘটনা ঘটেছে শুধু সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয় এর অভাবে।
পত্রিকা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৪র্থ-৫ম মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও ৭০-৭৫% আসন খালি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিলেকশন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ায় অনেক মেধাবী পরীক্ষায় বসার সুযোগ পায়নি। এটা কি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলোনা?
যদি কোন জরিপ চালানো হয় ২০২০-২০২১ সেশনে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত শতাংশ আসন খালি বা কত শতাংশ আসন পূর্ণ হয়েছে তাহলে আসল তথ্য জানা যাবে। শুধু তাই না, ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে কত শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনা বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে পড়ে তাও জানা জরুরী। আমি মনেকরি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে এ ধরনের জরিপ বা অনুসন্ধান করা উচিৎ।
এবার আসি বাংলাদেশে কেন দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ সময়ের দাবি-
১। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে (পারিবারিক, শারীরিক, আর্থিক ও যানজট) প্রথমবার বিশ্বিবদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনা তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও যোগ্যতা থাকার পরেও। এর মানে কি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে? এবার GST ভুক্ত ২০টি বিশ্বিবদ্যালয়ের পরীক্ষা একসাথে হয়েছে,উক্ত পরীক্ষায় উপরিউক্ত কারণে যেসব পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদের ভবিষ্যত কি?
২। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভালো ফলাফল করতে পারেনি, তাই বলে থাকে কি আবার ভালো করার সুযোগ দেয়া উচিৎ নয়? আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে যদি উদাহরণ হিসেবে বলি, আমাদের সময় সেকেন্ড টাইম পরীক্ষার সুযোগ ছিলো। আমার বিভাগ এবং ব্যাচ এ অনেকেই এখন বিসিএস থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে কর্মরত যারা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তাহলে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীও যদি দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে নিজেকে আলোকিত করতে পারে এবং দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে তাহলে কি বিশ্বিবদ্যালয়গুলোর ক্ষতি হয়ে যাবে?
৩। অনেক পরীক্ষার্থী ভর্তি হতে পারলেও তার কাঙ্খিত বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে পড়ালেখা চালিয়ে আশানুরূপ সাফল্য বয়ে আনতে পারেনা। স্বভাবতই চাপিয়ে দেওয়া এবং ভালোলাগা এক নয়! দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে হয়তো সে তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতো।
৪। মেডিকেল ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখনও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাহলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই নীতিমালা নয় কেন?
তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে মৃত্যুর পথ বেঁচে নেয়, অনেকেই হতাশাগ্রস্ত জীবনযাপন করে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন এবং ইউজিসি এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আমি আশাকরি বহির্বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্হার সাথে সঙ্গতি বজায় রেখে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিবে এবং সেকেন্ড টাইম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য ও বাঁধা দূর করে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন পূরণে শিক্ষিত জাতি তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতীতের ন্যায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
লেখকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে জনতা ব্যাংকে কর্মরত।