রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

মায়ের ভাষার অবক্ষয় নিয়ে তারুণ্য ভাবনা

  • আপডেট টাইম বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ১১.১৭ পিএম

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারসহ ভাষা শহীদদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ফিরে পেয়েছি। যার মাধ্যমে সাবলীল ভাবে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। এমনি হাজারো ভাবনা ও অনুভুতি থাকে বাংলা ভাষা-ভাষীদের মনে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের কিছু ভাবনা তুলে ধরেছেন আজাহার ইসলাম,ইবি।



কালের পরিক্রমায় শৈশবে বলা আমার সেই বাংলা ভাষার বর্ণমালা আজ কেমন আছে? তা আজ ভাববার সময় এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন জগা-খিচুড়ির ভাষায় রূপ নিয়েছে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে না বলা নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ভাষা আজ হুমকির মুখে। তাই ভাষার ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এই শঙ্কার অন্যতম কারণ সাহিত্যের প্রতি বিমুখতা। যে সময় তরুণ প্রজন্মের কবিতা, প্রবন্ধ পড়ার কথা, তখন তারা ইংরেজি সিনেমা, হিন্দি সিরিয়ালে মত্ত। বাংলা ভাষার মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নচেৎ কালের পরিক্রমায় আমাদের ভাষা হারিয়ে যাবে।


ওয়াহিদা খানম আশা, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইবি।



মাতৃভাষা দিবসে আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচনায় একুশের গান (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো….) শুনে আমরা ভাষা শহীদদের এবং মাতৃভাষাকে সম্মান দিতে শিখিয়েছে। ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভাষা একটি জাতির পরিচয় বহন করে। কিন্তু আজ মাতৃভাষা অর্জনের ৬৮ বছর পেরিয়েও ভাষা ব্যবহারে বিপন্নতা দেখে হতাশায় ডুবে যাই।

বর্তমান সময়ে অভিভাবকেরা পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষাকে তুচ্ছ হিসেবে তুলে ধরছে। ভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখতে অভিভাবকদের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সর্বপ্রথম অভিবাবকদের বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষার প্রতি অনুপ্রণিত করে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাতে হবে। তবেই আমাদের ভাষা তার যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে।


শৈবাল নন্দী হিমু, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ইবি



ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের মাস। শ্রদ্ধার আর অহংকারের মাস। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাঙালিরাই মাতৃভাষার জন্য রক্তে রঞ্জিত করেছিল রাজপথ। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলো দামাল ছেলেরা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মায়ের ভাষায় প্রাণ খুলে অনুভুতি প্রকাশ করতে পারি। ভাষা সভ্যতা সংস্কৃতি আত্নপরিচয় বহন করে। কিন্তু আজকের তরুণ প্রজন্মের পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা ভাষা তার যথাযথ মর্যাদা হারাতে বসেছে। বায়ান্নর চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন তরুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।


ফারহানা আফরিন অন্তি, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইবি



প্রত্যেক জাতির যেমন নিজস্ব একটি ভাষা থাকে। তেমনি বাঙালি জাতির ও একটি নিজস্ব একটি ভাষা আছে। হাজারো ত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা ছিনিয়ে এনেছে বাংলা ভাষা। একুশ শতকের এই সময়ে এসে আমরা ভাষার সঠিক মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ। দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিকৃত করে ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের মায়ের মুখের বুলি। বাংলা ভাষাকে সবোর্চ্চ গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা ও মনে লালন করাই হোক আমাদের ভাষা দিবসের অঙ্গীকার।


বায়েজিদ আহমেদ, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ইবি



কবির ভাষায় ‘আমার ছেলে খুব সিরিয়াস, কথায় কথায় হাসেনা,
জানেন দাদা আমার ছেলের বাংলা টা ঠিক আসেনা।’

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যেমন স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন। ঠিক তেমনি আমাদের ভাষার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমরা ভুলে গিয়েছি বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগ। মাতৃভাষা সকলেই জন্মসূত্রে পেলেও আমরা পেয়েছি সংগ্রামের মাধ্যমে। নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার মত স্বর্গীয় সুখ পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু আমরা বাংলা গান শুনতে অভ্যস্ত নয়। আমরা অভ্যস্ত হিন্দি, ইংলিশ গানে। ভাষার গুরুত্ব ও ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যেন শহীদের রক্তে পাওয়া এই ভাষার ইতিহাস কালের গর্ভে হারিয়ে না যায়।


জান্নাতুল ইসবা বিথী, শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা সাহিত্য বিভাগ, ইবি



 

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today