রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনে মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের ঘটনায় সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তা তদন্ত করে পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে বিভাগের সভাপতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল-মামুন চৌধুরীর স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও পছন্দের শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্যই এমন ফল বিপর্যয় ঘটেছে।’
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পেছনে আমতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। এর আগে ৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ১২ ডিসেম্বর উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা। এসময় তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন পদেক্ষেপ নেয়নি এমন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ না নিলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ও আবুল হাসান সজীব বলেন, ‘গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে বিভাগের ২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনার্সে ১১ জনের ৩.৫০ এর ওপরে ফলাফল থাকলেও মাস্টার্সে শুধু ৩ জন শিক্ষার্থীই ৩.৫০ এর ওপর পেয়েছেন।
এদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মুন্নার অনার্সে ৩.৩০ পেয়ে ২১তম হলেও মাস্টার্সে ৩.৫৩ পেয়ে হয়েছেন প্রথম। তবে অনার্সে ৩.৮২ পেয়ে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী মোস্তাকিম খান এবং ৩.৭৬ পেয়ে অনার্সে দ্বিতীয় হয়ে ইউজিসি বৃত্তি অর্জনকারী শিক্ষার্থী সুলতান কবীরের মাস্টার্সে ফলাফল ৩.৫০ এর নিচে।’
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও উল্লেখ করেন, ‘আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক না হয়েও মাস্টার্সের ৮টি কোর্সের মধ্যে ৫টি কোর্সেই পরীক্ষক ছিলেন ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এগুলোর মধ্যে ২টি কোর্সের একটিতে মাত্র ৩টি ক্লাস এবং আরেকটিতে একটিও ক্লাস নেননি। ৪টি কোর্সের ২০ নম্বরের ইনকোর্স নেয়ার নিয়ম থাকলেও পরীক্ষা ছাড়াই এতে নম্বর বসানো হয়েছে। এছাড়া বিভাগের অন্য শিক্ষকরা থাকতেও মাস্টার্সের সবগুলো থিসিসের সুপারভাইজার হয়েছিলেন এবং পরে খেয়ালখুশি মতো থিসিস পরীক্ষণে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদের নিজের মতামত অনুযায়ী নম্বর দিতে বলেন। এই কারণে দুজন শিক্ষক থিসিস পরীক্ষণে অস্বীকৃতি জানান।’
বিভাগে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেন এমনটাই অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে পছন্দের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মুন্না ও শারমিন আক্তার জ্যোতিকে প্রতিনিধি করে দেন। এই দুজনের সহযোগিতায় ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিভাগের শিক্ষার্থীদের চাপ প্রদান ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজের গড়া সংগঠন ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’র অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতেন।’ এছাড়া থিসিসের কাজে কক্সবাজার গেলে নিজের পরিবার, শ্যালক, শ্যালিকার ভ্রমণের টাকা ব্যয় করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে জানতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল-মামুন চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।