ক্যাম্পাস টুডে ডেস্কঃ উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এ হলো এমন এক প্রতিষ্ঠান- যেখানে বিদ্যা উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃজন হবে। পথচলা শুরু হয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। গবেষণায় মন দিয়েছেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, পাট, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনেক কিছু নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিয়েই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে । যা শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে বলে মনে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট ১৪-১৫ বছর বয়সী একটি মৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টস্থ বনবিলাস চিড়িয়াখানায় বার্ধক্য জনিত কারণে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা যায়। খুলনা প্রাণিসম্পদ অফিস এ তথ্য জানিয়েছে। খবরটি খুলনা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি জেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদুর রহমান খানকে জানানো হয় ।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, অ্যানিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি মেডিকেল টিম চিড়িয়াখানায় মৃত বাঘটিকে বুধবার দুপুরে পরিদর্শন করে। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তসলিম হোসেন, ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এমএ হান্নান, ডা. পাপিয়া খাতুন, ডা. জান্নাত হোসেন, ডা. স্বরূপ কুমার কুণ্ডু, ডা. শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ডা. শহীদুল্লাহ, ডা. শারমিন জামান, নাজমুল হক অপুসহ শিক্ষার্থীরা।
পরিদর্শন শেষে জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাঘটিকেখুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের নিকট হস্তান্তর করা হয় । পরবর্তীতে বাঘটি দৌলতপুরে অবস্থিত খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আনা হয় এবং বাঘটির চামড়া, কংকাল, ও অভ্যন্তরীন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহকে সংরক্ষণ করা হয়। যা ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ব্যবহারিক পাঠদানে ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মাহিরুল হল শিলং ও পিয়াল রায় বলেন, দেশের নবীনতম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা ও গবেষণার কাজে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া সত্যিই আনন্দদায়ক ও গর্বের। এই ধরণের অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খানকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান বলেন, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন একটি দ্বার উন্মোচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: শহীদুর রহমান খান স্যার এর প্রতি শিক্ষকরা চিরকৃতজ্ঞ। এই ধরনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে খুকৃবি উচ্চতর কৃষি শিক্ষার সকল স্তরে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণায় এই ধরনের নতুন নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
এছাড়া খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রস্তাবিত “এনাটমি মিউজিয়াম” বাস্তবায়িত হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পুরো দেহের কঙ্কালটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মোচন করা হবে। অধিকন্তু, মৃত বাঘটি হস্তান্তরের জন্য বন বিলাস চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শহীদুর রহমান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হবে। মৃত বাঘটির কংকাল ও অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষি শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।