শহর ছাড়ছে মানুষ, তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতি কি আরো বেগবান হবে?
আলমগীর হোসেন
কবিতায় গ্রামকে বলা হয়েছে ‘ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়’। তবে সেই ছায়া ও শান্তি এখনও অনেক গ্রামেই নেই। ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনে ছায়া পলায়নরত।
আর্থিক অনটন ও বঞ্চনার কারণে শান্তি অনেকটা তিরোহিত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত মাঠে কাজ করে গ্রামের মানুষ। অনেকে গরু পালে, মাছ ধরে, ধান ভানে ও নৌকা বায়।
সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে উন্নত জীবনের আশায়, সমৃদ্ধির আশায়- যে জীবন তারা দেখে শহরে, যে সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হয় শহুরে মানুষের মধ্যে। দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে। শহরে বাস করে বাকি ২৪ শতাংশ।
কিন্তু জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ-আয়েশ, ভোগবিলাস শহরে বেশি। কারণ শহরের মানুষের আয় বেশি। ঘর-দুয়ার, রাস্তাঘাট শহরে ভালো। খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার মান শহরে উন্নত। অন্যদিকে শিল্পজাত পণ্যের দাম গ্রামে বেশি। তাই গ্রাম থেকে মানুষের অভিগমন হয় শহরে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়মটি অনিয়ম হয়ে গেছে। উল্টো দিকে ঘটছে অভিগমনের বিষয়টা। শহর থেকে মানুষ ফিরে আসছে গ্রামের পরিবেশ। শহরের কর্মব্যস্ত মানুষ যখন গ্রামের পরিবেশ ফিরে আসছে তখন জীবনের তাগিদে শহর ছেড়ে আসা মানুষ গুলো বিভিন্ন কাজে লেগে যাচ্ছে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতি বেগবান হতে চলেছে।
শহর ছেড়ে আসা মানুষ গুলো গ্রামে এসে যদি তারা ব্যবসায়ী হিসেবে একেকজন উদ্যোক্তা হয়। তাহলে গ্রামের অর্থনীতি অনেকাংশে বেগবান হবে শহর থেকে আসা দক্ষ উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এই করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে আসা মানুষ গুলো এইবার আমের মৌসুমে যেভাবে অনলাইনে এবং অফলাইনে আমের ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেছে তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এতে করে অনেক লাভবান হচ্ছে সেই সাথে সাথে গ্রামীণ অর্থনীতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের একজন শ্রমিক বা উদ্যোক্তা এর সাথে গ্রামের একজন শ্রমিক বা উদ্যোক্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
কৃষি নির্ভর এই দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বর্ণ বলা যেতে পারে গ্রামকে। তাই এই স্বর্ণকে ফসলে রূপান্তরিত করতে হলে একজন দক্ষ শ্রমিক বা পরিচালকের প্রয়োজন।
বর্তমানে শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা মানুষ গুলো গ্রামের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে। তাই বলা যায়, শহর ছেড়ে মানুষ গ্রামে ফিরে আসলে গ্রামীণ অর্থনীতি প্রতিনিয়ত বেগবান হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।