শিক্ষার্থীদের জন্য মেস/বাসা ভাড়া অর্ধেক মওকুফের দাবি

| ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক | Avatar

ক্যাটাগরি : ,

পোমেল বড়ুয়া


ত্রাণের উপাদান, করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যু-সুস্থ হওয়ার সংখ্যা পরিমাপের পাশাপাশি যদি মানসিক চাপ পরিমাপের কোন যন্ত্র থাকতো, তবে শিক্ষার্থীরাও বেশ উপকৃত হতো। বিগত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্নজন ফোন দিচ্ছে এবং অনেকেই ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু বেশিরভাগই সরাসরি বলে ফেলছে “দাদা মেসের মালিক ভাড়া চাচ্ছে। বাসার অবস্থা ভালো না, আব্বুর ইনকাম নাই। কোনরকম খেয়ে বেঁচে আছি আর টিউশনিটাও বন্ধ। একটা উপায় বের করেন না!”

তারপর কখনো উত্তর দেওয়ার কৌশল খুঁজি, কখনো হতাশায় চুপ করে বসে থাকি, কখনোবা ফোন রেখে দেই। আর যারা পারছে না, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হলেও মনের ভাব প্রকাশ করছে। বিষয়টি সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাসস্থান আমাদের অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। করোনা মহামারী, ত্রাণ সহযোগিতা, জাতীয় তথা দেশি-বিদেশি ইস্যু- এসবের মাঝে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

আমরা যারা নিজ বাসস্থান ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছি। প্রত্যেকেরই মেস ভাড়া বা বাসা ভাড়ার নির্দিষ্ট খরচ আছে। একজন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্ট খাতেই প্রত্যেক মাসে সর্বনিম্ন ১০০০-২০০০ টাকা খরচ হলে বছরে সেটা ১২০০০-২৪০০০ টাকা হয়। স্থানভেদে সেটা ভিন্নও হতে পারে। আমরা কিন্তু মেসে বা ভাড়া বাসায় একাই থাকি না। নিশ্চয়ই সংখ্যাটি ১০,২০,৩০ থেকে শুরু করে শতাধিকও হতে পারে।

আমাদের শিক্ষা জীবনে মোট বছরের হিসাব করলে একটি মেস বা বাসার মালিককেই যে ভাড়া দিচ্ছি, তা লক্ষ টাকার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে। যেখানে আমাদের কাছে থেকেই মেস বা বাসার মালিক এতটাকা পাচ্ছেন, এই করোনা মহামারী-তে মাত্র দু-এক মাস আমাদের প্রতি তাদের বিশেষ মহানুভবতা প্রকাশ করতে পারেন আর করাটা খুবই জরুরি।

বাস্তবতায় হয়তো দেখা যাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবারের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। অনেক অভিভাবকের চাকরি আছে ঠিকই কিন্তু কাজ নাই, তাই বেতনও নাই অবস্থা। অনেকের পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারচেয়েও বড় কথা হলো টিউশনি করেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের ব্যয়ভার বহন করে থাকে। বর্তমানে প্রত্যেকেই নিরুপায় হয়ে বসে আছে। এমতাবস্থায় প্রত্যেক মেস বা বাসার মালিকদের মহানুভবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

আপনারা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সীমিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক লোনের কিস্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারলে আমরা কেন আপনাদের কাছে থেকে সামান্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারি না? ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মোয়াজ্জেম হোসেন অপু নামে একজন বাড়ির মালিক দুই মাসের বাসা ভাড়া মওকুফ করেছেন, এক মাসের অর্ধেক ভাড়া নিয়েছেন। শুরুটা নিজে থেকেও হতে পারে।

শুধু মালিক পক্ষকেই কেবল এগিয়ে আসলে হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীরা ছাত্র উন্নয়ন ফি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেয়। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রক্টর বা ছাত্র পরামর্শক বা বহিরাঙ্গন বিভাগ, প্রতিষ্ঠান কমিটি ছাড়াও অন্তত প্রতিষ্ঠান প্রধান রয়েছেন। তাদেরও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। সম্প্রতি দেখলাম হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

এ রকম ভাবে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। পরিবারসহ কোনরকম খেয়েদেয়ে বেঁচে থাকতেই অনেক পরিবার হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর মেস বা বাসা ভাড়া সত্যিই অনেক চাপের। তাই প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সেটা অবশ্যই মেস বা বাসার মালিকদের সাথে সমন্বয় করে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পাশে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের অধিকার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারদের সাথে শিক্ষার্থীদের ভাল-মন্দ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ছাত্রনেতারা বিগত সময়েও বেশ সজাগ ছিল, বর্তমানেও আছে। আমরা বলছি না সম্পূর্ণ মওকুফ করেন। কোন কোন মালিক পক্ষের পরিবার হয়তো এসব ভাড়ার উপর নির্ভরশীল। তাদের দিকটিও আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। যদি করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক মেস বা বাসা ভাড়া অর্ধেক মওকুফ করা হয়, তবে অন্তত শিক্ষার্থীরা বেশ উপকৃত হবে। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে হয়তো।

ইতিহাস বলছে দেশের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। আজ না হয় ছাত্রসমাজের জন্য অল্প কিছু করেন! বাসায় থাকুন, নিরাপদে থাকুন।


লেখকঃ সভাপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet