শেখ হাসিনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ: ‘তাঁরা দেখেও দেখে না, বুঝেও বোঝে না’

| ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক | Avatar

ক্যাটাগরি :

সম্রাট বিশ্বাস


সাম্প্রতি দেশের তথা বিশ্বব্যাপি গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। এই সংকটপূর্ণ সময়ে বহুলালোচিত করোনা পরিস্থিতিকে পাশ কাটিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ঘটনা চায়ের কাপেও ঝড় তুলেছে তা হলো- “বঙ্গবন্ধুর খুনি, মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী আবদুল মাজেদ ঢাকাতে গ্রেপ্তার”।

পিতা হত্যার সাড়ে চার দশক পর, তার খুনিকে গ্রেপ্তার করাটা নি:সন্দেহে জাতির জন্য ভীষণ আনন্দের। কিন্তু যতটা পরিতৃপ্তির এই শাপমোচন তার চেয়ে অধিক বেদনাবিধুর সংবাদ হলো – এই পিতার খুনি মাজেদের নাতি (মুজিবুল্ল্যাহ্ ওরফে পলাশ, সাধারণ সম্পাদক, বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগ, ভোলা) পিতার নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দ্বায়িত্ব-শীল পদে অধিষ্ঠিত।

যে মহান নেতা ছাত্রলীগ জন্মদিলেন তার খুনের রক্ত লেগে আছে যে পরিবারের গায়ে, সেই পরিবারেই হাতেই যেন শোভা পাচ্ছে ছাত্রলীগের পতাকা! বিএনপি-জামাতের অনুপ্রবেশকারীদের পরে এবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘাতকরাও ছাত্রলীগে। শেখ হাসিনার জীবিত অবস্থায় এই ঘটনার সাক্ষী ও হতে হলো, ইতিহাসে এর চেয়ে মর্মান্তিক রাজনৈতিক উপাখ্যান আর রচিত হবে কিনা সন্দেহ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মী, আমরা যারা নিজেদেরকে শেখ হাসিনার ভ্যান-গার্ড হিসেবে পরিচয় দেই আজ। সেই ভ্যান-গার্ডের ভিতরেই ছদ্মবেশী ঘাতকরা অবস্থান নিয়েছে। তাহলে আমাদের আশার বাতিঘর দেশরত্ন শেখ হাসিনা কতটুকু নিরাপদ ? ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী সমস্যা কোন নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু এই সমস্যার পিছনে দলের অভ্যন্তরে কে বা কারা দায়ী এটাই কখনও চিহ্নিত করা হয়নি।

ছাত্রলীগের অতীত গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলোকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর একটি প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কৌশল হলো আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বাড়ানো। আওয়ামী রাজনীতির শৈশবকাল যেহেতু ছাত্রলীগ তাই টার্গেটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই সংগঠনটি। সেই সাথে দলের অভ্যন্তরীন স্বার্থন্বাসী মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের সাথে লিয়াজোঁ করে দীর্ঘায়িত করেছে নিজ দলের৷ অবমূল্যায়িতদের তালিকা। ঘরমুখো করতে বাধ্য হচ্ছে দুর্দিনে মুজিবাদর্শ জিয়িয়ে রাখা কর্মীগুলো।

এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী রাজনীতির ধ্বংস অনিবার্য। এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়েই সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে। তাই সময় এসেছে নীরবতা ভাঙ্গার, সোচ্চার হতে হবে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি কর্মীকে। ছাত্রলীগ বিশুদ্ধ হলেই আওয়ামীলীগ বাঁচবে। তাই অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে কঠোর অবস্থানে কার্যত ও দৃশ্যত পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ নেতৃত্বের সমন্বয়ে প্রতি বিভাগে “অনুপ্রবেশকারী নির্ধারন ও প্রতিরোধ” করার জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করতে হবে। যারা দেশব্যাপী ছাত্রলীগের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা, কলেজ, উপজেলা, পৌর ইউনিট গুলো হতে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে অভিযোগ ও প্রমানসহ তালিকা তৈরী করে চুড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে প্রমানিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নিবে।

ভবিষ্যতে যেনো কেউ দলে ঢুকতে না পারে তার জন্য প্রতিটি ইউনিটে কমিটি করার সময় প্রতিটি প্রার্থীর স্থানীয় ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভীর ভাবে খোজ-খবর নিয়ে তারপর তাকে কমিটির জন্য বিবেচনা করতে হবে। কোন প্রার্থী সম্পর্কে সকল অভিযোগের সত্যতা জানার পরে- দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা, বুঝেও না বোঝা মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। যে সকল নেতৃবৃন্দ এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

সর্বোপরি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে শিক্ষিত, যোগ্য, সৎ ব্যাক্তিকে নেতা বানাতে হবে। একমাত্র তখনই আমরা অনুপ্রবেশকারী মুক্ত ছাত্রলীগ গঠন করে, ছাত্রলীগের অতীত গৌরব পুনোরুদ্ধারের মাধ্যমে পারবো জননেত্রী শেখ হাসিনার হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ রোধ করতে ।


লেখক- সম্রাট বিশ্বাস, ছাত্রনেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।



প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। দ্য ক্যাম্পাস টুডে এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য দ্য ক্যাম্পাস টুডে কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।



সংবাদটি শেয়ার করুন
fb-share-icon
Tweet