রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

সমাজ নাকি শিক্ষাব্যবস্থা, দোষটা কার?

  • আপডেট টাইম শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ১০.৩১ পিএম
সমাজ নাকি শিক্ষাব্যবস্থা, দোষটা কার?

মোঃ নজরুল ইসলাম: শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শিক্ষিত করছে ঠিকই তবে আমাদের চিন্তার বিকাশ কতটা ঘটিয়েছে তা ভাববার বিষয়। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আমরা সকল পেশার সুনাম লিখে GPA/CGPA বৃদ্ধি করতে সক্ষম হলেও আসলেও বাস্তবতা ঠেকেছে আমলাতে গিয়ে।

আমরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়েও পেশাকে সমান চোখে দেখতে বা সম্মান করতে শিখি নাই। যদিও এক্ষেত্রে শিখি নাই বললেও ভুল হবে শিখতে দেয়নি শব্দটা উপযুক্ত। স্কুল থেকে কলেজ গণ্ডিতে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারেই আটকে ছিলাম আমরা স্নাতক গণ্ডিতে আমলা নামক শব্দকে আপন করে নিতে শিখিয়েছে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ আমাদের চারপাশ।

যে শিশু স্কুল ড্রেস পড়তে পড়তে মায়ের মুখে শুনেছে ছেলে বড় হয়ে গাড়িতে চড়বে সে ছেলে গ্রাজুয়েট হয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ফিরে আসবে এটা কল্পনা করাও বোকামি। সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ধাপে পরিবার ই অনেকাংশে দায়ী ভুল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টায়। সেই চেপে দেওয়া স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শত শত শিক্ষার্থী আজ হতাশায় জর্জরিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বড় আমলা না হলে সমাজ কটাক্ষ করতে ভোলে না তবে না খেয়ে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ালেও সমাজ দৃষ্টিপাত করেনা। এক্ষেত্রে সমালোচনা করাই যেনো সমাজের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আমেরিকা পাড়ি জমালেও সমাজ কটাক্ষ করতে ভুলেনা আবার ছোট কোনো কাজ করলেও সমাজ চুপ করে থাকেনা।

শিক্ষিত হয়ে কাজকে শ্রেণী বিভাগ করতে শেখায় যে সমাজ তার ভয়ে মরে গেলে মায়াকান্না ছাড়া সমাজ কিছু ই করবেনা। গ্রাজুয়েট হয়ে কেনো বিসিএস ক্যাডারই হতে হবে রাস্তায় দাড়িয়ে চা বিক্রি করলে কি অপরাধ? কৃষি কাজ করলে কি অপরাধ? সমাজ আমাকে এক বেলা খাওয়াবেনা সুতরাং যেকোনো কাজ করতে সমাজের ভয়ে ঘরকোনে বেকার অপবাদ নিয়ে বসে না থেকে বরং রাস্তায় দাড়িয়ে চা বিক্রি করে উপার্জন করা অনেক সম্মানের।

“তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।” আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। তাদের মতো বাংলাদেশে ১০.৭ শতাংশ বেকার রয়েছে। অপরদিকে প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট বেকার ২৭ লাখ।

এতো বড় একটা জনগোষ্ঠী বেকার কেনো? এর উত্তর খুঁজতে গেলেও সমাজ চলে আসবে। এরা আসলে সমাজের ভয়ে বেকার নতুবা সমাজের দেখানো পথে চলতে গিয়ে বেকার। যেখানে উন্নত দেশ গুলোতে কাজকে ছোট বড় হিসেবে না দেখিয়ে সকল কাজকে সমান সম্মানের দেখানো হয় সেখানে আমাদের সমাজের চিত্র ভিন্ন। তাই আমরা না পারি ছোট কিছু করতে না পাই বড় কোনো স্থানে যেতে, শুরু হয় হতাশা পরিণাম সুইসাইড! গত এক বছরে ১৪০০০ সুইসাইড করলে দেখা যায় তার ভিতর বড় একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা হতাশা থেকেই সুইসাইডের পথ বেছে নেয়।

দিন শেষে আমরা সমাজকে বাদ দিতে পারিনা আমরা ও সমাজের অংশ। তবে সমাজের ভুল পথ গুলোকে যেমনি এড়িয়ে চলা উচিৎ ঠিক তেমনি সমাজের ভুলগুলোকে পরিমার্জন করে সুন্দর একটা সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখাও তরুণদের দায়িত্ব কর্তব্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ (১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today