সমৃদ্ধ ইতিহাসের সলিল সমাধি

সমৃদ্ধ ইতিহাসের সলিল সমাধি

মাজেদুল ইসলাম


উত্তর জনপদের নদীবিধৌত এক জেলা কুড়িগ্রাম। ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৬ টি নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে এই জেলা দিয়ে। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে বাংলাদেশে যে পরিমাণ পানি প্রবেশ করে তার ৬০ ভাগ কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে। কিন্তু, এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এ জেলার মানুষের; প্রতিবছর বর্ষায় যে পরিমাণ বন্যা হয় তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় গৃহহীন।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এ প্যানডেমিক সিচুয়েশনে ‘স্টে হোম’ নামক যে স্লোগান প্রচলিত সেটি মানতে গেলে এখানকার মানুষকে ভেসে যেতে হবে অথৈজলে।

সারাদেশ এই জেলাকে যে শব্দটিতে চেনে সেটা কখনোই এ অঞ্চলের মানুষের কর্মফল নয়; এক নির্মম নিয়তি এই পরিস্থিতির কারণ।

দিনের পরে যেমন রাত হয় ঠিক তেমনি বন্যাকে এখানকার মানুষ নির্মম সত্যি হিসেবে মেনে নিয়েছে কিন্তু নদী ভাঙনের ক্ষতি টা মেনে নিতে না নিতেই আবার নদী ভাঙনের স্বীকার হয় ; এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম কেটে যাচ্ছে । উদাহরণস্বরুপ আজ বলব বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন এর ইতিকথা –
বিগত বছরগুলোতে বন্যায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের এ পর্যন্ত প্রায় দুই তৃতীয়াংশ তিস্তা নদীর গর্ভে চলে গেছে ।

একটু যদি পিছনে ফিরে তাকাই,তাহলে দেখতে পাবো এ অঞ্চলের অতীত ইতিহাস। বারোশ শতকের প্রথমদিকে রংপুরে সেন বংশের অভ্যুদয় ঘটে। এ বংশের রাজা ছিলেন নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বর। সেন বংশের শেষ রাজা ছিলেন নীলাম্বর। তার রাজধানী ছিল চতরা নামক স্থানে। চতরা ছিল বর্তমান রাজারহাট উপজেলার অন্তর্গত এই বিদ্যানন্দেই।এখানেই ছিল রাজা নীলাম্বরের দুর্গ। নীলাম্বর ছিলেন এক শক্তিশালী রাজা। পরবর্তীতে গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের কাছে তার পরাজয় হয়।বৃটিশ আমলের ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলনের বীজ বপিত হয়েছিল এই বিদ্যানন্দেই;সেটা সবারই জানা।

এ আন্দোলনই যে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণা ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর, ঐতিহ্যবাহী এ অঞ্চল আজ বিলুপ্ত প্রায়। আজ যদি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এদিকে থাকতো, তাহলে হয়তো বাংলার মানচিত্রে হারিয়ে যেত না একটি সমৃদ্ধ জনপদ।

বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল প্রশাসনের নেক নজরের কামনা করছি যাতে ঐতিহ্যবাহী কুড়িগ্রাম জেলা তার হারানো গৌরব ফিরে পায় এবং নদী ভাঙনের কবল থেকে স্হায়ী ভাবে রক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্হা করে।হয়তো বাংলার জনগণ সবচেয়ে গরীব জেলা হিসেবে কুড়িগ্রামকে চিনে কিন্তু আমরা মনে করি যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমাদের দিকে নেক দৃষ্টি দিয়ে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য আশু পদক্ষেপ নেয় তাহলে আগামী ১০ বছর পর কুড়িগ্রাম জেলা উন্নয়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশের জেলাগুলোর রোল মডেল হবে বলে আশা করছি।

আমরা কুড়িগ্রামবাসী ত্রাণ চাইনা আমরা আমাদের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *