শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

সেকেন্ড টাইম ও ‘ঘ’ ইউনিট বাতিলসহ তিন সিদ্ধান্ত বিতর্ক বাড়িয়েছে

  • আপডেট টাইম সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ৮.৪৮ পিএম
সেকেন্ড টাইম

মোঃ মোতাহার হোসেন


১ জুলাই ২০২১ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষ পেরিয়েছে। ” শিক্ষাই আলো” স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের প্রথম স্বায়ত্তশাসিত গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়।প্রতিষ্ঠার শুরুতে সর্বক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড স্বীকৃতি পায়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ই ১৩জন রাষ্ট্রপতি, ৭জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রাণের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিতর্কিত একাডেমিক সিদ্ধান্তের কারণে দিন দিন তার মর্যাদা হারাচ্ছে। অতি সাম্প্রতিক তিনটি সিদ্ধান্ত বিতর্ক আরো বাড়িয়েছে। এর পিছনের যুক্তি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য কোন মহলেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

সিদ্ধান্ত গুলো হলো-
১। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করা।
২। মানোন্নয়নের নামে আসন সংখ্যা কমানো।
৩। বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট ” ঘ ইউনিট ” বাতিল।

সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন উপরের তিনটি সিদ্ধান্ত কি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণাটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? আন্তর্জাতিক বিশ্বে বিশ্বায়নের যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকার সংকোচনে আদৌও কি মানোন্নয়ন ঘটবে? দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধে শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটুকু হয়েছে? অগ্রহণযোগ্য অজুহাতে বিভাগ ও আসন সংখ্যা কমিয়ে ‘ ঘ ইউনিট ‘ বাতিল করলে শিক্ষার মানোন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক মহোদয়?

তিনটি বিষয় নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে, তাই আমি লেখার কলেবর না বাড়ানোর স্বার্থে শুধু এটাই বলবো তিনটি সিদ্ধান্তই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বিনষ্টের মাধ্যমে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। কেননা পৃথিবীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ ও আসন সংখ্যা কমানোর নজির নেই। বরং যুগোপযোগী বিভাগ চালু করে শিক্ষাদানের মাধ্যমে বিশ্বমানের Best products and Best minds উপহার দেয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে Wide range of discipline রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই ১০০ থেকে ৪০০+ বিষয়ের তালিকা নজরে পড়ে। বাহিরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিষয় গুলো পড়ানো হয় তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। যেমন ডাটা সায়েন্স, এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাংলাদেশে নেই। আমি বিশ্বাস করি আমার শিক্ষকবৃন্দ পিএইচডি করতে বিদেশে গেলেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক চিত্র অবলোকন করেন। কিন্তু নীতি নির্ধারনে তারা কি আদৌও এর প্রতিফলন ঘটান?

সর্বশেষ যে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীলতা ও মননশীলতাকে আঘাত করেছে তা হলো ‘ ঘ ইউনিট ‘ বাতিল। কারণ, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো STEM ( Science, Technology, Engineering, Mathematics) ভুক্ত বিষয়ে শুধু সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র ছাত্রীদের প্রবেশাধিকার আছে। কিন্তু অন্য কোন বিষয়ে আর্টস, কমার্স, সায়েন্স বাধাঁ নয়, একজন শিক্ষার্থী চাইলেই তার পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারে যদি সে একটি সন্তোষজনক SOP ( Statement of Purpose) লিখে ভর্তি কমিটিকে বুঝাতে পারে কেন সে এই বিষয়ে পড়তে ইচ্ছুক। কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীত।

যে সকল শিক্ষার্থী নিজের গ্রুপে উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় না এবং বিভাগ পরিবর্তন করতে চায়, সে উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের প্রশ্ন ধারা ও সিলেবাসের আলোকে প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ ঘ ইউনিট ‘ বাতিল করায় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেনা। ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় “সেকেন্ড টাইম” বাতিল করায় অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় (কিছু বাদে) সেকেন্ড টাইম বাতিল করেছে। এবারও যে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ” বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ” বন্ধ করবেনা তার নিশ্চয়তা কি?

তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর অনুরোধ জানাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত বলেই যেনো যেকোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার আগে শিক্ষার্থী বান্ধব ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুদৃষ্টি কামনা করছি ।

লেখকঃ সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্তমানে সরকারী ব্যাংকে কর্মরত।

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today