১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিই রাজনীতিবিদ। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) পদে নিয়োগ পাওয়া সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ভিসি জেলা ও থানা আওয়ামী লীগের নেতা। এসব তথ্য পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তাদের জীবনবৃত্তান্ত থেকে।
দেশের জাতীয় পত্রিকা দেশ রুপান্তর এ ‘১৩ ভিসিই রাজনীতিবিদ‘ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন।
দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) পদে নিয়োগ পাওয়া সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন ভিসি জেলা ও থানা আওয়ামী লীগের নেতা। এসব তথ্য পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তাদের জীবনবৃত্তান্ত থেকে।
অবশ্য তাদের মধ্যে একজন ব্যতিক্রম, তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক শিক্ষক রাজনীতিতে যোগ দেন।
শাসক দল করার কারণেই তারা ভিসি হতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন শিক্ষাবিদ।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট তিনজনের একটি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচিত করে এবং ওই প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেন আচার্য অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই দশক ধরে কোনো উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ম লঙ্ঘন করেই প্রায়ই সরকার মনোনীত ব্যক্তিকে সরাসরি ভিসি পদে নিয়োগ দেওয়ার নজির আছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল নির্বাচনে দুবার সিনেটের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রথমবার সামরিক স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়। সেবার রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাকে নিয়োগ না দিয়ে সিনেটের ভোটে যিনি তৃতীয় হয়েছিলেন তাকে নিয়োগ দেন। আর দ্বিতীয়বার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিজেই ভিসি হতে চাননি।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদটি স্বৈরাচার এরশাদের আমল থেকেই ব্যাপকহারে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে। সেখানে যোগ্যতা হিসেবে সরকারি দলের নেতা ও আনুগত্য দেখা হয়। ভিসি পদের জন্য ওই ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, আন্তর্জাতিক পিয়ার রিভিউতে প্রকাশিত জার্নাল ইত্যাদি তেমন বিবেচনা করা হয় না। আর সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের দাবিগুলোর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান ভিসিরা। তিনি মূলত সরকারের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদের মোকাবিলা করেন।
সম্প্রতি এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘দেশের উচ্চশিক্ষাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ করতেন সেটিও অনুসরণ করা হয়নি। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ধারেকাছেও নেই বর্তমান সরকারের শিক্ষাসংক্রান্ত কর্মকা-। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে প্রখ্যাত ব্যক্তিদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতেন। আর এখন উপাচার্য পদ লাভের জন্য যারা উপযাচক হয় তারাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কারণ এখন কেবল রাজনৈতিক আনুগত্যের বিবেচনায় গুণে-মানে-যোগ্যতায় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোনোদিন তেমন পরিচিত নন, গ্রহণযোগ্য নন।’
ব্যতিক্রম ফরিদ : দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, নিয়োগ পাওয়া ভিসিদের অতীত জীবনে সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ফরিদ উদ্দিন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সাদা দল করতেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়া চেয়ার করার প্রস্তাবক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীপন্থি নীল দলে যোগ দেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হন, শিক্ষক সমিতির সভাপতিও হন। ২০১৭ সালে শাহজালালের ভিসি হন। ২০২১ সালে তার প্রথম মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রায় দেড় মাস আগে তাকে আবার দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি নিয়োগ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, ফরিদ উদ্দিন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসে মনোযোগী ছিলেন না। মূলত তিনি গার্মেন্টস ব্যবসা করতেন। এমনকি মালয়েশিয়ায় পিএইচডি করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। পিএইচডি না করে দেশে ফিরেছেন। ভিসি হিসেবে তিনিই ব্যতিক্রম। কারণ তিনি শুধু আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি করা ভিসিই নন, একমাত্র তারই পিএইচডি ডিগ্রি নেই।
সম্প্রতি ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আমরণ অনশন শুরু করেন। ওই সময় এই বিশ^বিদ্যালয় প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা নিয়োগকৃত। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি সাদা দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেন। সমস্যাটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, শিক্ষকদের মধ্যে। এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক’ নিয়োগ হয় না, ‘ভোটার’ নিয়োগ হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রচুর লেখা আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, চারটি প্রথম শ্রেণির প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকর্মী কিংবা সরকারের রাজনৈতিক অনুসারী অযোগ্য প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি যেমন নেই তেমনি কোনো অ্যাকাডেমিক প্রকাশনাও নেই। কিন্তু নিয়মে বলা আছে, অধ্যাপক হতে গেলে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা মানসম্মত জার্নালে অন্তত ১৫টি প্রকাশনা থাকতে হবে। তাহলে তিনি অধ্যাপক হলেন কীভাবে? আর উপাচার্যই বা হলেন কীভাবে?
১২ জনই সরকারি দলের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম ভিসি হিসেবে মো. আখতারুজ্জামানকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, আখতারুজ্জামান তিন দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে তিনি নির্বাচিত হন। এছাড়া সহসভাপতি ছিলেন দুবার।
আখতারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনরা বলেছেন, বিএনপি আমলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে সরকার দুই দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করেছিলেন। দেশের রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় প্রভাব রয়েছে। ঠিক এ কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে দলীয় লোককে নিয়োগ দেওয়ার ইতিহাসের শুরু এরশাদের আমল থেকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ভিসি হিসেবে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট নিয়োগ পান ডা. গোলাম কিবরিয়া। এর আগে তিনি ২০০৪-০৯ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ সমর্থিত হলুদ প্যানেল থেকে তিনি শিক্ষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তিনবার প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন। সেনাসমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেন তিনি।
২০১৯ সালের নভেম্বরে অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পান। তিনিই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি কক্সবাজার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত বছর মার্চে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের মার্চে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়োগ পান। ২০১৮ সালে তাকে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তখন তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও পদত্যাগ করেনি। তবে ওই দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২১ সালের মে মাসে অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনকে চার বছর মেয়াদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ভিসি নিয়োগ করা হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রাজনীতি রয়েছে। এখানকার শিক্ষকরা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ জাতীয় রাজনীতির অংশ হিসেবেই শিক্ষক রাজনীতি করেন। মাহমুদ হোসেন ভিসি হওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেনের একমাত্র ছেলে। মোজাম্মেল হোসেন ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাগেরহাট-৪ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি মারা যান এই সংসদ সদস্য। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানকে ২০১৯ সালের মে মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ভিসি হিসেবে ২০২১ সালের জুনে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইমদাদুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ছিলেন ২০১৮ সালে।
অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে ২০২১ সালের মে মাসে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করা হয়। এর আগে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে পটুয়াখালী কৃষি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং নীল দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হল শাখার ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন তিনি।
গত বছর ডিসেম্বরে ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে। তিনি একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন (আরেফিন মাতিন)। তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সদস্য, ২০০৪ সালে কোষাধ্যক্ষ এবং ২০১১ সালে মহাসচিব নির্বাচিত হোন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও ২০১১ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পান ২০১৭ সালের মে মাসে। দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে ভিসি করা হয় গত বছর মে মাসে। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্য ছিলেন।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জেডএম পারভেজ সাজ্জাদকে কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে ভিসি নিয়োগ হতো। সে সময় বঙ্গবন্ধু নিজে অধ্যাপকদের ফোন করে অনুরোধ করতেন, যাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আর এখন ভিসি হতে গেলে তাকে দলীয় রাজনীতি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন ভিসি হতে হলে তিনটি গুণ থাকতে হয়। এক, তিনি কথা বলবেন না। দুই, তিনি সরকারি ছাত্র সংগঠনের অনুগত থাকবেন। তিন, সরকারি দলের সমন্বয়ের রাজনীতি করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে এ নীতি মেনে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, ‘সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে গত ১০ বছরে যারা অধ্যাপক হয়েছেন তারা তেমন কিছু লেখেননি, তাদের উল্লেখযোগ্য গবেষণাও নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, তাদের লেখাপত্র দেখা হোক, সেগুলো কোনোভাবেই একজন অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতায় উন্নীত হয় না। অধ্যাপক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আবার রাজনীতিকের বাসায় গিয়ে বসে থাকছেন ভিসি হতে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফল আগামীতে আরও খারাপ হবে।’