শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

১৭ তে লালমাটির কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

  • আপডেট টাইম শনিবার, ২৮ মে, ২০২২, ১১.২১ পিএম

কুবি প্রতিনিধিঃ লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে ময়নামতির কোলঘেষে লালমাটির ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা চট্টগ্রামের মাঝামাঝি কুমিল্লা শহর থেকে ১১ কি.মি. দক্ষিণে সদর দক্ষিণ থানায় অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজ গাছ গাছালি, ছোট বড় টিলা আর উঁচু নিচু লাল মাটির ঢিবি দিয়ে ঘেরা ক্যাম্পাস। আজ ২৮ মে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। হাটি হাটি পা পা করে পার করে ১৭ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

১৭ বছরে পদার্পণের এ গল্পটা এতটাও সহজ ছিলোনা। এককালে সমৃদ্ধ জনপদ সমতট রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র লালমাই-ময়নামতি এলাকা। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেবের হাতে শালবন (আনন্দ) বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। শালবন বিহার ছিল এশিয় জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বিদ্যাপীঠ। ওই বিহারকে তৎকালীন পণ্ডিতেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদায় অভিহিত করেন। তখন পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ এ বিহারে জ্ঞান অন্বেষণে আসতেন।

৬৩৮ সালে বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং শালবন বিহারে আসেন। তখন বিহারে চার হাজার ভিক্ষু (ছাত্র) দেখতে পান তিনি। হিউয়েন সাং ময়নামতি অঞ্চলে ৩৫টি বিহার (শিক্ষাকেন্দ্র) দেখেছেন বলে তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন। তিনি তৎকালীন সমতটবাসীকে (বর্তমানে কুমিল্লাবাসী) শিক্ষানুরাগী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

একই বছরের ৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০০৭ সালের ২৮ মে প্রথম ব্যাচে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগে ৭ হাজার ৫৫ জন শিক্ষার্থী ও ২৫২ জন শিক্ষক, ৯১ জন কর্মকর্তা ও ১৭৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধায় রয়েছে ৫টি আবাসিক হল।

জাতির পিতার নামানুসারে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল”, জাতীয় কবির নামে “কাজী নজরুল ইসলাম হল”, কুমিল্লার সন্তান ও ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথের নামে “শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল”, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা জমিদার নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর নামে “নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল”, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে “শেখ হাসিনা হল” (নির্মাণাধীন)। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার্তে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন ৮টি বাস এবং ১২টি ভাড়ায় চালিত বাস।

২০২০ সালের ২৭শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন এ প্রতিষ্ঠানটিকে দেয় ভিন্নমাত্রা। রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন ২ হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষার্থী। ১ম ব্যাচ থেকে ৮ম ব্যাচ পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা সকল শিক্ষার্থীর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর সম্বলিত সনদ পাওয়ার জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে এ সমাবর্তনে।

অনেক চড়াই উতরাই পার করে এতদূর আসলেও প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার জায়গা থেকে ফারাক থেকেই যায়। অডিটরয়াম, পর্যাপ্ত ক্লাস রুম, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, রিসার্চ সেন্টার, টিএসসি, মিডিয়া ল্যাব সহ বিভিন্ন কিছুর অপ্রতুলতা রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে শিক্ষার্থীদের সকল আশা প্রত্যাশা অতি শীগ্রই বাস্তবে রূপদান হতে চলছে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পে।

আয়তনে ৫০ একরের ছোট্ট কুবিকে ২৫০ একরের বড় কুবিতে রুপান্তরের দৃশ্যমান কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ কাজ সম্পাদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এ কাজের আওতায় নির্মিত হয়েছে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রধান ফটক। গেল বছরের ২৪ মে ১৯৮ দশমিক ৮৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিকট ৪৭১ কোটি ১১ লক্ষ ২২ হাজার ৫৫ টাকার চেক হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, গত ১০ই এপ্রিল জেলাপ্রশাসন কতৃক বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০ একর ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামীদিনে কেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে চান এ বিষয়ে উপচার্য এফ এম আব্দুল মঈন বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ এম আব্দুল মঈন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের কাজ হচ্ছে একাড়েমিক ও গবেষণা মূলক কাজ করা। অমুকের চামড়া তুলে নিবো আমরা এসবের পিছনে সময় নষ্ট না করে সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে। আমাদের কাজ হবে কিভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়াতে পারি এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।

The Campus Today YouTube Channel

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_creativenews_II7
All rights reserved © 2019-20 The Campus Today