অধিকার বঞ্চিত গজারিয়া: খুঁজছে তাই নতুন ঠিকানা

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


আজকের মুন্সিগঞ্জ জেলা এক সময় বিক্রমপুরের নামে ভারতবর্ষে পরিচিত ছিল। এ বিক্রমপুর ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী।

রাজা বিক্রমাদিত্য অথবা বঙ্গরাজ চিত্রসেন বিক্রমপুর নগরীর স্থাপন করেন। এখন থেকে ১০০০ বছর আগে যে বঙ্গরাজ্য সভ্যতার সূচনা হয় সে বঙ্গরাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুর। প্রাচীনকালে বিক্রমপুর ছিল এক বিশাল এলাকার নাম। মুঘল যুগে বিক্রমপুরের আয়তন ছিল ৯০০ বর্গমাইল।

বৃটিশ শাসনামলে বিক্রমপুরকে আরো ছোট করা হয়। তখন বিক্রমপুরের আয়তন দাড়ায় ৪৮৬ বর্গ মাইল। সমগ্র মুন্সীগঞ্জ জেলা, মাদারীপুর জেলা, শরীয়তপুর জেলা, ফরিদপুরের পূর্বাংশ, নারায়ণগঞ্জ সদর, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ বিক্রমপুরের অন্তর্গত ছিল।

১৮৪৫ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় রূপান্তরীত হয়। তখন মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, রাজবাড়ী ও মুলফতগঞ্জ এ চারটি থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালের মে মাসে মুন্সীগঞ্জকে বৃটিশ সরকার মহকুমায় উন্নীত করে।

১৮৪৫ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় রূপান্তরীত হয়। তখন মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, রাজবাড়ী ও মুলফতগঞ্জ এ চারটি থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালের মে মাসে মুন্সীগঞ্জকে বৃটিশ সরকার মহকুমায় উন্নীত করে। ১৮৬৯ সালে পদ্মার গতি পরিবর্তনে মুন্সীগঞ্জ ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৮৬৯ সালের আগে পদ্মা মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ১০০ মাইল পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হতো। পদ্মা মুন্সীগঞ্জের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজবাড়ী ও মুলফতগঞ্জ থানা মুন্সীগঞ্জ মহকুমা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাখেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। রাজাবাড়ী ও মলফতগঞ্জ থানায় ৪৫৮টি গ্রাম ছিল। পদ্মাই মুন্সীগঞ্জকে ছোট করে দেয়।

১৮৮২ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমা থেকে নারায়ণগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মুন্সীগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত ছিল। ১৯১৪-১৫ সালে বৃটিশ সরকার টঙ্গীবাড়ী, সিরাজদিখান ও লৌহজং থানা বৃদ্ধি করে। ফলে মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, লৌহজং, সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ী মিলে পাঁচটি থানা করা হয়। ১৯৪৮ সালে গজারিয়া থানাকে কুমিল্লা থেকে কেটে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় সংযুক্তি করা হয়। ফলে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় ছয়টি থানা নিয়ে পূণর্বিন্যাস হলো। অতঃপর এরশাদ সরকার ১৯৮৪ সালের ১মার্চ মুন্সীগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করেন। এই হলো মুন্সীগঞ্জের সরকারী দলীল পত্র। এর আগ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ ছিল ঢাকা জেলার একটি মহকুমা।

গজারিয়া উপজেলার আয়তন ১৩১ বর্গ কি.মি. বা ৫১ বর্গ মাইল। ইউনিয়নের সংখ্যা ০৮ টি এবং জনসংখ্যা প্রায় ১,৫৭,৯৮৮ জন। গজারিয়া উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা, দক্ষিণে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ও পুর্বে মেঘনা উপজেলা এবং দক্ষিণ পশ্চিমে চাঁদপুরের মতলব উপজেলা।

গজারিয়ার চারদিকে রয়েছে জালের মত বেষ্টন করে মেঘনা নদী। শীতলক্ষা ও বুড়িগঙ্গার মিলিত ধারা মেঘনা নদীর সাথে গজারিয়ার পশ্চিম পাশে মিশেছে। পরে সোজা দক্ষিন দিকে পদ্মার সহিত মিলিত হয়ে পুনরায় মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। উত্তর ও পূর্ব পাশে মেঘনা ও গোমতির জলধারা মিলিত হয়ে ষাটনলের নিকট মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাপান সেতু-১(মেঘনা সেতু) উত্তরে নারায়নগঞ্জ জেলা এবং বাংলাদেশ-জাপান ২য় সেতু (মেঘনা-গোমতি সেতু) দাউদকান্দির সাথে মিলন বন্ধন সৃষ্টি করে দুই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে ভ্রাতৃত্বের মহা মিলন।

সেদিন কথা হচ্ছিল গজারিয়া উপজেলা শিক্ষা ব্যব্স্থা নিয়ে সেখানে কিছু শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের। মান সম্মত শিক্ষার বিষয়ে কথা বলার এক ফাঁকে সবাই বলছে আমাদের থানাটি কুমিল্লার দাউদকান্দির পাশে । তাদের ভৌগোলিক, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঔতিহ্য তাইতো ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী জেলা কুমিল্লার প্রভাব রয়েছে। এমনকি তাদের সকল আত্নীয় স্বজন দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস ও মতলব-উত্তর এর আশে পাশে।

গজারিয়া উপজেলা মূলত চরঅঞ্চল ও নদী প্রকৃতির। নৌ পথে মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে গজারিয়ার দূরত্ব মাত্র ৭কিমি দূরে হলেও সরাসরি কোন ফেরি সার্ভিস না হওয়ায় সড়ক পথে মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে নারায়নগঞ্জ- সোনার গাঁও হয়ে ঘুরতে হয় ৭০ কি.মি.।

মুন্সিগঞ্জ শহর থেকে গজারিয়া প্রায় বিচ্ছিন্ন। অথচ আমাদের কোট কাচারি বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ কর্মের জন্য সড়ক পথে মুন্সিগঞ্জ সদরে যেতে হয় যা আমাদের সাধারন জনগনের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল । ১৯৪৮ সালে গজারিয়া থানাকে কুমিল্লা থেকে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় অর্ন্তভুক্ত করা করার সিদ্ধান্ত যে ঠিক হয়নি সাধারন সচেতন নাগরিকগন সেটা শুরু থেকে হারে হারে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এমনকি সেটি স্বীকার করেছেন এলাকার সচেতন গন্যমান ব্যক্তিবর্গসহ গজারিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামও।

গত ২০১৮ সালের শেষার্ধে তারা সকলে মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাথে তারা সাক্ষাত করেছেন এবং তারা পজিটিভ ফিডব্যাক পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য যে, জনাব হাফিজ আহমেদ ১৯৬৯ সালে গজারিয়ায় সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এবং ছাত্র লীগের সভাপতিও ছিলেন। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে তারা শহীদ পরিবারের সন্তান। দেশে-বিদেশে জেলাটি এতিহ্যবাহী বিক্রমপুর নামে পরিচিত । তিনি বলেন গজারিয়া বিক্রমপুরের অংশ না হলেও তারা চান জেলাটি বিক্রমপুর নামে নামকরন হোক। বিক্রমপুরের প্রতি তাদের শুভকামনা রয়েছে এবং তৎকালীন বিক্রমপুরের এতিহ্যবাহী এলাকা দোহারকে বিক্রমপুর জেলায় অর্ন্তভুক্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন তাদের সাথে অন্য কোন উপজেলার সাথে কোন সংঘর্ষ নাই এবং শুধু এলাকার নাগরিকদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা চিন্তা করে গজারিয়াকে নতুন জেলায় অর্ন্তভুক্ত করার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী আমাদের কমিটির মাধ্যমে।

তিনি আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেঘমতী জেলা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *