অনলাইনে পাঠদান চলছে, এটা আমাদের বড় অর্জন: উপাচার্য

মঞ্জুরুল ইসলাম আকন্দ
বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি


মহামারি করোনার প্রভাবে স্তব্ধ সারাবিশ্ব।আর সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন শিক্ষা কার্যক্রমের কোন ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

জামালপুরে অবস্থিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (বশেফমুবিপ্রবি) শুরু হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের মতামত (বশেফমুবিপ্রবি)দ্যা ক্যাম্পাস টুডে কে বলেছেন।

এর মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ‘অরূপ রায়’ দ্য ক্যাম্পাস টুডে কে বলেন , ”বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাণঘাতী ভাইরাস COVID-19 এর কারণে সমগ্র বিশ্ব এখন ভয়াবহতার স্বীকার। পর্যাপ্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না হলে ভাইরাসটি দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। তার জন্য এখন এই দুঃসময়ে মানুষের সাধারণ কর্মজীবন ও শিক্ষাজীবনের ঘটছে প্রচুর অবনতি।

কিন্তু এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার যে গুণগত মান তা ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। তাই আগামীর ভবিষ্যৎ হিসেবে আামাদের শিক্ষা প্রদানের কার্য অব্যাহত রাখার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ অনলাইনে জুম অ্যাপ্লিকেশনের এর মাধ্যমে আমাদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া শুরু করেছেন।

ফলে আমরা যথাসময়ে আমাদের কোর্স গুলো সঠিকভাবে শেষ করতে পারছি, পাশাপাশি স্যারদের সাথে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে পরস্পারিক আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত তারা আমাদের ক্লাস গুলো পরিচালনা করে যাচ্ছেন । আমরা এই উদ্যোগের দ্বারা খুবই উপকৃত হচ্ছি।

আমার মতে, শিক্ষা ব্যবস্থার মান ঠিক রাখতে করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন অনলাইনের মাধ্যমে পাঠ প্রদানের ধারাবাহিকতা বিরাজমান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ‘মারিয়া তাবাচ্ছুম পিংকী’ দ্য ক্যাম্পাস টুডে কে বলেন, “বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাস এক আতঙ্কের নাম। এ মহামারি সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে । বাংলাদেশেও করোনা মহামারির তীব্রতা প্রতিনিয়ত’ই বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই সংকটকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ।

ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য মতে বিশ্বের ১৩০টি দেশের ও অধিক দেশ তাদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে । ইউনেস্কোর মতে করোনার কারণে বিশ্বের ১৪০ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে । আমাদের এই অপূরণীয় ক্ষতির কথা চিন্তা করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ স্যার লকডাউনের কিছুদিন পর থেকেই অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য সম্মানিত শিক্ষকদের পরামর্শ দেন।

তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের শিক্ষকগণ আন্তরিকতার সাথে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। ক্লাসের ধারাবাহিকতা সঠিকভাবে চলায় আমাদের প্রায় সকল বিষয়ের তত্ত্বীয় অংশ দিকে। ক্লাস ও পড়াশোনা সঠিকভাবে অব্যাহত থাকায় আমরা মানসিক অবসাদেও ভুগছি কম ।

এছাড়া এই ক্রান্তিকালীন সময়ে আমাদের কী করা উচিত ও অনুচিত তার পরামর্শ ও আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি । সব ভালো দিকের মধ্যেও কিছুটা সীমাবদ্ধতা থেকেই যায় । অনেক শিক্ষার্থী’ই নেটওয়ার্ক সমস্যা ও ইন্টারনেটের খরচ বহনের সামর্থ্য না থাকায় অনলাইন ক্লাসে আসতে পারে না ।

সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট খরচ সর্বনিম্ন করে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি ।”

সমাজকর্ম বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ‘তাদ্রিশা তন্দ্রা’ দ্য ক্যাম্পাস টুডে কে বলেন,“বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রার্দুভাবের কারণে মার্চের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ আছে আমাদের দেশের শিক্ষা-কার্যক্রম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষনা করেছেন বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কিন্তু প্রতিনিয়ত যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে সেপ্টেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা খুবই কম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সহ দেশের সকল স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম আটকে আছে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যেনো সম্পূর্ণ শিথিল না হয়ে পড়ে তার জন্য সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস অনলাইনে নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।

এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগেই চলছে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম। বিশ্বায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে এটি একটি যুগোপযোগী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।

অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বেশি সময় ধরে ক্লাস এবং পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে সেশনজট কিছুটা হলেও কমানো যাবে বলে আমার ধারণা। তবে দেশের সর্বত্র নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভালো না হওয়া, ইন্টারনেট সেবার দাম বৃদ্ধি অনলাইন ক্লাসের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত দেশে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মান উন্নয়ন এবং সল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা করে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি বৃদ্ধি করা।”

সম্প্রতি অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে (বশেফমুবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, “আজকে আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। প্রত্যেকের মনে আতঙ্ক এবং অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের মধ্যে পার করছি। আজ সব কিছু স্থবির হয়ে গেছে বাংলাদেশের। আর এ স্থবিরতা বিরাজ করছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও।

মহামারি করোনার প্রভাবে আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার যেন কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় এর জন্য আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি বিভাগেই অনলাইনে পাঠদান চলছে। এটা আমাদের বড় অর্জন।

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা যেন একটা পড়াশোনার পরিবেশে থাকতে পারে এবং তারা যেন মোটিভেটেট হয়। আমার শিক্ষকগণ নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর রাখছেন। তারা শুধু এখন কোর্সের তত্ত্বীয় অংশ গুলোর উপর ক্লাস নিচ্ছেন।

ছুটির পর যাতে শুধু সেমিস্টার পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে করোনার ছুটির প্রভাব তাদের শিক্ষাজীবনে পড়বে না। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

আর তা পূরণ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শিক্ষকদের আন্তরিকতা আর শিক্ষার্থীদের আগ্রহের ফলে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

Leave a Comment