অনলাইন ক্লাস শিক্ষা বৈষম্যর প্রতিফলন

অনলাইন ক্লাস শিক্ষা বৈষম্যর প্রতিফলন

সামিয়া খাতুন

জবি প্রতিনিধি


সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস পদ্ধতি শুরু হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি  হার ৫০-৫৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। অনলাইন  ক্লাসে ৩৫-৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকা সও্বেও ইন্টারনেট সংযোগের  অভাব,প্রয়োজনীয় ডিভাইস সল্পতা,ইন্টারনেট ক্রয়ের অক্ষমতা ইত্যাদি কারনে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না।

ফলে তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও শুধু তাদের নিজস্ব কিছু প্রতিবন্ধকতার ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। যদিও শিক্ষকবৃন্দরা অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির উপর কোনো নম্বর যুক্ত হবে কিনা তা জিজ্ঞেস করা হলে তারা শিক্ষার্থীদের এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে মানা করেন , তারা আরও বলেন এই সকল বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন বৈষম্যের শিকার না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনা করে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া যে সকল শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ গ্রহণ করতে পারছে না তাদের জন্য শিক্ষকবৃন্দরা স্লাইড আকারে,পিডিএফ আকারে,ভিডিও  আপলোডের মাধ্যমে তাদের নিকট পড়ানো বিষয় গুলো  দিবে বলে বলেছেন।

শিক্ষকদের নিকট হতে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সাহায্যসুলভ ব্যবহার পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে অনলাইন ক্লাস সকল শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা ক্ষেত্রে কিছুটা সফলতা বয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।  অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের জন্য কি আসেই  সফলতা বয়ে আনবে?  এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে  সরেজমিনে কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সামিহা রহমান।

শাহজালাল জামাল
১০ম ব্যাচ
ইংরেজি বিভাগ

আমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছি অনলাইন ক্লাসের ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যোগ হয়েছে। কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে অনলাইন ক্লাসের।কিন্তু অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা নজড় কারার মত না হলে ও কম নয়।এই ব্যাপারটায় দুশ্চিন্তা থেকেই যায় যে যারা ক্লাস করতে পারছে না তারা পরবর্তীতে কিভাবে সামাল দিবে।”অনেকে মনে করেন করোনার এই সময়ে মেগাবাইট কিনে ক্লাস করাটা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে”।

অনেকের স্মার্ট ফোন নাই।আমাদের গ্রাম গুলোতো নেট অনেক দুর্বল ভাবে কাজ করে আর এখন গ্রামের প্রায় সব সব ছাত্রছাত্রী গ্রামে অবস্থান করতেছে।এদের মধ্যে যারা ক্লাস করতে পারছে না তারা কিভাবে ক্লাস করবে এটাও আমাদের উদ্বিগ্ন  করছে।অনলাইন ক্লাস সফলতা নিয়ে আসলেও এর অনেক ব্যর্থতা থেকে যাবে। অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির বিষয় টা কি হবে এখনো উপসংহার টানা যায় নি।পরীক্ষা কিভাবে হবে তাও বলা হয় নি।তবে এই মুহূর্তে অনলাইন ক্লাস আমাদের কাছে আল্লাদ্দিনের চেরাগ এটা বলতেই হবে।অনলাইন ক্লাসের সফলতা নির্ভর করবে শিক্ষকের ও ছাত্রছাত্রী দের আগ্রহ ও দক্ষতার উপর। আমরা একটা জিনিস ভুললে চলবে না প্রান্তিক চাষির ছেলে মেয়েদের জন্য এই মুহূর্তে স্মার্ট ফোন কেনাটাও গরিবের গোড়ারোগ অনেকে মনে করেন।যার ফলে মেগাবাইটের জন্য বরাদ্দের দিকে ঝুকেছে ছাত্রছাত্রীরা।

মহিমা সরকার মিম
১৪ তম ব্যাচ
ইংরেজি বিভাগ

বর্তমানে আমরা সবাই একটি কঠিন সময়ের দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থায় মারাত্মক রকমের ব্যাঘাত ঘটেছে। করোনার এই প্রভাব সকল ক্ষেত্রে পড়ার পাশাপাশি পড়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের গতানুগতিক পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে গেছে অনেকটা। বন্ধ রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এমতাবস্থায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনলাইন ক্লাসের,যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সিলেবাস শেষ করতে পারে এবং পড়াশোনা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়।

এটি একটি ভালো উদ্যোগ অবশ্যই। তবে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি এতে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। কারণ,বাংলাদেশে এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে নেট সংযোগের অবস্থা নাজেহাল ; নেই বললেই চলে।সামান্য সংযোগের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয়। আবার এমন অনেক পরিবার আছে যাদের এই মহামারির ফলে দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় নেট কিনে ক্লাস করা তাদের জন্য নিছক দুঃস্বপ্ন। ক্লাস করার জন্য যেই মানসিক প্রস্তুতির দরকার তা এখন অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই নেই।যার ফলে ক্লাসে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে খুবই নগণ্য। এভাবে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চলতে থাকলে দেখা যাবে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে না পারার কারণে অনেক পিছিয়ে যাবে।যার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে সে ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে আর যার নেই সে পাচ্ছে না।ফলে উপস্থিতিও কমছে। বিষয়টা কিছুটা শ্রেণি বৈষম্যের মতো হয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি।

ফারহান আহমেদ রাফি
১৪ তম ব্যাচ,
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ

“করোনা “বর্তমানে  সারাবিশ্বের প্রধান সমস্যা। এই সমস্যার জন্য থমকে  আছে সারাবিশ্বের শিক্ষা ব্যাবস্থা। বাংলাদেশেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তবে করোনা কালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিকল্প হিসেবে  অনলাইন শিক্ষা ব্যাবস্থা বেছে নিচ্ছে । বাংলাদেশেও অনেক প্রাইভেট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই অনলাইন ক্লাস চলছে । তবে উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে ইন্টারনেট কানেকশন উন্নত নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ই  করোনার জন্য গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রামে ইন্টারনেট কানেকশন খুবই দূর্বল , এমন ও অনেক জায়গা আছে যেখানে একবারেই ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম । যারাও উপস্থিত হচ্ছে তাদের মধ্যেও অনেকে ঠিক ভাবে ক্লাস করতে পারছে না। একটা ক্লাসের কমপক্ষে ৫০% শিক্ষার্থী  ক্লাস করতে পারছে না পর্যাপ্ত ইন্টারনেট এবং ডিভাইস না থাকার কারণে।
সর্বোপরি বলা যায় অনলাইন ক্লাস কখনো ই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হতে পারে না।

দীপংকর সিংহ দীপ
১৫ তম ব্যাচ
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা শুরু করে। অধিকাংশ বিভাগেই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে অতি সাম্প্রতিক সময়ে । এই পথে শুরুর দিক থেকেই আছে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ।লক্ষ্যনীয় বিষয় গুলো হলো-
১. এখন পর্যন্ত আগ্রহ রয়েছে । তবে অবকাঠামোগত অসুবিধার জন্য পারস্পরিক অংশগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে ।
২. সকালের দিকের ক্লাসগুলোতে প্রায় ৭০-৮০% উপস্থিতি পাওয়া যায় । তবে ইন্টারনেট খরচ ও নেটওয়ার্কের কারণে প্রথমে অনেকে ভিডিও ও অডিও সহ অংশ নিলেও তার পরিমাণ কমছে।
৩. কতটুকু বহন করতে পারবে খরচ সেটা নিয়ে সকলেই সন্দিহান । কারণ ক্লাসের সংখ্যা ও সময়ের ওপর নির্ভর করে ডেটা খরচ । অনেকে শুরুতে আগ্রহ করলেও ইদানীং প্রায় ৩০% এর মত স্টুডেন্ট সমস্যা প্রকট হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *