অভিজ্ঞতার শহর

ছেলেটির নাম রাশেদ,
নিম্নবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে
৩ বছর আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট পাশ করেছে।

বুকে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলো এ অভিজ্ঞতার শহরে,
মাকে বলেছিলো-
আর কষ্ট থাকবে নাহ,
আমি চাকরি পেলেই তোমাকে বড় ডাক্তার দেখাবো,
ছোটকির বিয়ে দিব
বাবাকেও আর রিকশা চালাতে হবে নাহ,
ছোটনকে বড় স্কুলে ভর্তি করাবো।

কিন্তু সে কিহ জানতো
এই অভিজ্ঞতার শহরে –
হাজারো রাশেদ প্রতিনিয়ত রাস্তায় ঘুরছে
একটু সচ্ছলতাকে কিনবে বলে ।

রাশেদ মেধাবী ছিল বটে
কিন্তু অভিজ্ঞ ছিল নাহ
এই শহরের সবচেয়ে বড় কোন এক প্রতিষ্ঠানে
রাশেদ গিয়েছিল,
সেদিন তাকে যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ দেয়নি,
শুধু জানতে চেয়েছিলো তার কত বছরের অভিজ্ঞতা আছে!!
একজন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া
মেধাবী রাশেদ সেদিন নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।

এরপরে রাশেদ ছুটেছে
শহরের প্রতিটা প্রান্তরে,
প্রতিটা পিচঢালা পথ রাশেদের পদধ্বনি চিনে গিয়েছিল,
চিনতে পারেনি টাকা লোভী মানুষ গুলো,
শহরের প্রতিটি দরজায় সে গিয়েছিল,
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি কিছুই,
কারন রাশেদ মেধাবী ছিল বটে
কিন্তু অভিজ্ঞ ছিল না।

দেড় বছর পর- সৃষ্টিকর্তা রাশেদের দিকে তাকিয়েছিলেন ,
স্বপ্নের ভার কমিয়ে দিয়েছিলেন বটে,
বিনা চিকিৎসায় ক্যান্সারে মারা যায়
রাশেদ এর মা
সেদিন হাউমাই করে কাদতে চেয়েও
রাশেদ কাদতে পারেনি
কারণ- সে পুরুষ
লোকে কিহ বলবে!!
সমাজ যে হাসবে
তাই সে পাষাণ হয়েছিল
অথচ ভেতরে চুরমার কষ্ট।
রাশেদ আবার ছুটে চললো
শহরের প্রতিটা প্রান্তরে
তপ্ত দুপুর,বৃষ্টি রাশেদ কে থামাতে পারেনি।

কিন্তু অভিজ্ঞতার এই নোংরা খেলায়
রাশেদ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
কেননা রাশেদ মেধাবী ছিল বটে কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল নাহ।

সৃষ্টিকর্তা রাশেদের ভাগ্য কে বুঝি করুন ভাবে লিখেছে,
রোড এক্সিডেন্ট এ পঙ্গু হলো রাশেদ এর বাবা,
সংসার চালাতে রাশেদ এর কিহ আপ্রাণ চেষ্টা!
শত চেষ্টার পরেও পুরণ করতে পারেনি নিম্নবিত্ত পরিবারের দেখা স্বপ্নগুলি,
শেষ বারের মতো কলম ধরেছিলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া সার্টিফিকেট এ –
রাশেদ লিখেছিলো
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে,
হারিয়ে যাচ্ছি অভিজ্ঞতার শহরে,

৩ বছর আগে গ্রাজুয়েট পাশ করা ছেলেটি আজ আত্মহত্যা করলো,
মরদেহটি ঝুলে আছে
কি স্থির দৃষ্টি!
যে দৃষ্টি অভিশাপ দিচ্ছে দেশের নিয়ম যারা তৈরি করেছে,
স্যাতেস্যাতে মেসের-
বামদিকের সর্বশেষ ঘরটি ছিল রাশেদের,
ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো-
জানালার পাশে টেবিল অপর প্রান্তে বিছানা ।

গ্লাসে অবশিষ্ট একটু পানি,
মনে হয় শেষবারের মতো তাই পান করেছে।
কিছু পুরনো কাপড় ঝুলছে ,
সারা ঘর জুড়ে যত্রতত্র বই
চোখ আটকে গেল টেবিলে জমানো কিছু কাগজের দিকে,
কাছেই যেতেই বুঝলাম
যেমন তেমন কাগজ নয়,
প্রতিদিনের চাকরির খবরের কাগজ।

কি সুন্দর যত্ন করে রাখা,
পুলিশ এসে রাশেদ এর লাশ নিয়ে চলে গেল,
রুমে তালা ঝুলিয়ে দিল,
সেদিনের পরথেকে রাশেদ কে কেউ আর ছুটতে দেখেনি।

লিখেছেন: তাজমিন রহমান
শিক্ষার্থী, লোকসাহিত্য বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *