আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১৫ ২০ ২৫ পয়েন্ট SSC HSC

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১৫ ২০ ২৫ পয়েন্ট SSC HSC – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা: গর্বের ইতিহাস ও তাৎপর্য- মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ – মাতৃভাষা দিবস রচনা – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা: গর্বের ইতিহাস ও তাৎপর্য

ভূমিকা: একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য একটি চেতনা, প্রেরণা এবং গভীর শ্রদ্ধার দিন। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধা জানাই তাদের, যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। একুশের আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় পরিচয় গঠনের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হয়ে আছে। ১৯৫২ সালে এই দিনটি ছিল ভাষার জন্য আন্দোলনের, আর আজ এটি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষার মর্যাদা আজ সারা বিশ্বের গর্ব।

মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। পাকিস্তান গঠনের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হলেও তাদের ভাষাকে অবহেলা করা হয়েছিল। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানান। এরপর থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবিতে পূর্ববাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১৫ ২০ ২৫ পয়েন্ট SSC HSC

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতা এই দাবি আদায়ে সংগ্রাম চালায়, এবং পাকিস্তানি শাসকরা এই আন্দোলনে গুলি চালায়, যেখানে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেন। তাদের ত্যাগের ফলে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সরকার বাধ্য হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম নামের দুই প্রবাসী বাঙালির ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এরপর বাংলাদেশের সরকারের সহায়তায় ইউনেস্কোর কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। শেষ পর্যন্ত, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫২ সালের এই দিনটির বাঙালি জাতির মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো হয়। ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। আজ, এই দিনটি বিশ্বজুড়ে নানা ভাষাভাষী মানুষের জন্য মাতৃভাষার মর্যাদা প্রদানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১৫ ২০ ২৫ পয়েন্ট SSC HSC

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
ভাষা একটি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে ভাষা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রতিটি মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়া এবং ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই দায়িত্বকে তুলে ধরে। এই দিবসটি কেবল ভাষাভাষী মানুষের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সমস্ত ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদানের এক প্রেরণা হয়ে উঠেছে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মাতৃভাষা কেবল একটি ভাষা নয়, বরং তা একটি জাতির পরিচয় এবং অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

একুশের শিক্ষা
একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা আমাদের শেখায় যে মাতৃভাষার জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা একটি জাতির স্বাধীনতার মূল। ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম কেবল বাঙালির নয়, বরং এটি পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। এটি আমাদের শেখায় যে স্বজাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ইতিহাস রক্ষার জন্য নিজেদের মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হবে। একুশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভাষার জন্য ভালোবাসা একটি জাতির মূল ভিত্তি, যা জাতীয় ঐক্য এবং শক্তির ভিত্তি গঠন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা ১৫ ২০ ২৫ পয়েন্ট SSC HSC

উপসংহার
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির গৌরবের দিন। এই দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ একটি জাতীয় সাফল্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই দিনটি বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের মাঝে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি, তা হচ্ছে যে মাতৃভাষা কেবল একটি ভাষা নয়; বরং তা একটি জাতির আত্মপরিচয় এবং গর্বের প্রতীক। আজ সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে সবাই তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

Scroll to Top