আপনি চিনেন এই ভাষা প্রেমীদের, আপনি চিনলেই তাঁরা সফল

ক্যাম্পাস টুডে ডেস্ক


ডিজিটাল যুগের ভাষা সৈনিকদের চিনুন। আপনি চিনলেই তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে যাবেন। কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মানের প্রয়োজন হবে না। ছবির একজন এন্ড্রয়েড আর আইওএস প্ল্যাটফর্মের ভাষা সৈনিক, আরেকজন উইন্ডোজ আর ম্যাক। হ্যাঁ, ভাষা সৈনিক বলাটা অত্যুক্তি হয়েছে বলে মনে করি না, ওরা একবিংশ শতাব্দীর ভাষা সৈনিক। তুমি যদি অনলাইনে এন্ড্রয়েডে বাংলা লিখে থাকো, পিসিতে বাংলায় লিখে থাকো তবে এদের তোমার চেনা উচিৎ।

তুমি যদি অভ্র কীবোর্ডের নাম শুনে থাকো, তুমি যদি রিদমিক কীবোর্ডের নাম শুনে থাকো, তোমার জানা উচিৎ। এই দুইজনের কল্যাণে আজ অনালাইনে লিখে শান্তি পাই, অনলাইনে প্রাণের ভাষা পড়তে পেরে শান্তি পাই, আর এর পুরো ক্রেডিট এই দুইজনের।



ডাঃ মেহেদী হাসান খান, ময়মনসিংহ মেডিকেলের ম-৪১ ব্যাচের ডাক্তার, আমার এক বছরের সিনিয়র। ফার্স্ট ইয়ারে যখন ভর্তি হই তখনই শুনেছিলাম একটা কীবোর্ড আসছে, তুমি ইংলিশে বানান লিখবা, সেটা বাংলা বানানে অটোমেটিক কনভার্ট হয়ে যাবে, হোস্টেলের ওয়েস্ট ব্লক থেকে বেরোতে দেখতাম, ভাবিই নাই এই সেই অভ্র জিনিয়াস। বিলিভ মি, সেই সময়ে মার্ক জাকারবার্গের ফেইসবুক ছিল মাত্র একটা সফটওয়ার প্রোটোটাইপ। হ্যাঁ, সেই সময়ের কথা । তোমার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে তোমার বাংলা নামটা দেখ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার লেখাটা দেখ, ওটা অভ্র দিয়ে লেখা। ইউনিকোড ফন্টে বাংলা টাইপিং বাংলাদেশে মেহদি ভাইই সর্বপ্রথম নিয়ে আসলেন।



মোঃ শামীম হাসনাত, বুয়েটে সিএসইর স্টুডেন্ট। মজার বিষয় হল, গত বছর ওর সাথে চ্যাট করছিলাম তখন বলল আপনি রিফাত, রুহুলকে চিনেন? বললাম, ওরা ম-৪৩ ব্যাচের, আমি ওদের এক ব্যাচ সিনিয়র। এরপরই বোমা ফাটাল, আমার বড় ভাই ওদের ব্যাচের, মোর্শেদ আলম। মনে পড়ল এনাটমি বিল্ডিংয়ে থাকত মোর্শেদ, এখন সে এক অভাগা সরকারি ডাক্তার । মনে মনে ভাবছিলাম, ছোট ভাই? এই পিচ্চি রিদমিক বানায়ে ফেলল? নিজেকে তখন মাকাল ফল মনে হচ্ছিল।

মায়াবী কীবোর্ডের ইউজারও আছে প্রচুর, মায়াবীর ডেভেলপার কে এখনও জানি না, কেউ জানলে জানাবেন, রিদমিক যখন ততটা ইউজার ফ্রেন্ডলি ছিল না, মায়াবী সেই স্থানটা পূরণ করত, তবে রিদমিক পরে এগিয়ে গেছে অনেক। তবে রিদমিককে ফোকাস করেছি কারণ অভ্রের সাথে সাথে রিদমিক ছিল বিজয় কীবোর্ডের মোস্তফা জব্বারের পয়েন্ট অব জেলাসি। মায়াবীতেও ইউনিজয় আছে, কিন্তু জব্বার সাহেব গুগলে কপিরাইটের হাইকোর্ট দেখিয়ে প্লে স্টোর থেকে মুছিয়েছিলেন অভ্র আর রিদমিক।



ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বাংলা লেখার পাইয়োনিয়ার হয়েও সেই সম্মানের স্থান খুইয়েছেন মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বাড়াবাড়িতে। দুঃখটা ছিল বাংলাদেশ সরকার ন্যাশনাল আইডিতে তার বিজয় ইউজ করেনি, নাহলে উনার পাঁচ কোটি টাকা ইনকাম হত কপি রাইট থেকে। বাংলাদেশ সরকার পাঁচ কোটি টাকা বাঁচিয়েছে ফ্রী অভ্র ইউজ করে। রিদমিকেও কিন্তু অভ্র আছে, মেহেদী ভাই কোন কপি রাইটের হাই কোর্ট দেখান নাই, বরং হাসনাতকে সহযোগিতা করেছেন রিদমিকের আপগ্রেডিংয়ে। মোস্তফা জব্বার সাহেবের এগুলো থেকে শেখা উচিৎ, ভাষাকে কিভাবে উন্মুক্ত করতে হয়।

স্বচ্ছ বাংলায় স্ট্যাটাস লিখি এটা আমার অহংকার, যেমন একুশ আমার অহংকার। মেহেদী ভাইকে একুশে পদকে ভূষিত করার উদ্যোগ নিয়ে এর আগেও লিখেছি, অনেকেই লিখেছে। আফসোস এটাই, আমরা বাঙালীরা জিনিয়াসদের বেঁচে থাকতে কদর করি না। আর এটা নিয়ে লিখবো না। অবশেষে বুঝতে পেরেছি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কাদের জন্য। আপনারা এই তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করুন।

আজকে সন্ধ্যায় মাকে মেহেদী ভাইয়ের ছবিটা দেখিয়ে বলছিলাম, “উনি আমার মেডিকেলের, আমার এক ব্যাচ সিনয়র।” তখন স্ট্যাটাস টা লিখছিলাম। অভ্রের টপ বারটা দেখিয়ে বললাম, “এই বাঙলা টাইপিংয়ের সফটয়ার উনার বানানো, আমাদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড উনার অভ্রতে করা।”

মা বললেন, “মেহেদীকে সরকার এজন্য কিছু দেয় নাই ? কোন অনুদান, সম্মাননা?” বললাম, “নাহ্ ।” মা অবাক হয়ে বললেন, “এত বড় আবিষ্কার, অথচ কিছুই দিল না?”মনে মনে ভাবলাম, আমার মা-ও এটা বুঝল, অথচ বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট এন্টায়ার নেশনের ন্যাশনাল আইডি কার্ড বানিয়ে ফেলার পরও এটা বুঝল না।



কৃতজ্ঞতাঃ যুবায়ের আহমেদ



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *