ইবি তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ

ইবি তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ

ফয়সাল মাহমুদ নয়ন, ইবি


সকাল ৭ টায় টুংটাং এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম। সবাইকে ৮ টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সবাই এক হয়ে সকালের নাস্তা সেরে বাসে উঠে রওনা দিলাম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্য’র আনন্দ ভ্রমণ। গন্তব্য যশোরের ঝাপা বাওর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি ও মধুমেলা পরিদর্শন। বাস ছেড়ে দিয়েই সাউন্ড বক্সে বিভিন্ন গান শুরু হলো। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি খেজুর গাছকে অতিক্রম করে গানের তালে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে বাস।

দুপুর দেড়টার দিকে পৌঁছে গেলাম ঝাপা বাওরে। দুপুরের খাবার সেরে সবাই চললাম বাওর এর দিকে। নদীর মাঝখানে দিয়ে পানি ছুই ছুই এক সেতু, লোহার পাটাতন দিয়ে বানানো। জোরে হাটলে একটু হালকা দোলে। নদীর পাশ দিয়ে সারি সারি নারিকেল গাছ হাজার গুণে বাড়িয়ে তুলেছে নদীর সৌন্দর্য। নৌকা দিয়ে অনেক পর্যটক দুরে থেকে ঘুরে আসছে।

ঝাপা বাওর কে স্বাক্ষী রেখে ‘তারুণ্য’ টিম গ্রুপ ছবিতে আবদ্ধ হলাম। নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়ার জন্য ঝাপা বাওর থেকে প্রস্থান করতে হলো। পথিমধ্যে হঠাৎ গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলো। অগত্যা সবাইকে নেমে অপেক্ষা করতে হলো। পাশে একটা বাড়ি ছিলো তারা আমাদের দেখে যথেষ্ট সমাদর করল এবং দুই জগ খেজুরের রস খেতে দিলো।এমনকি তারা রাতে আমাদের খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে চাইল। অচেনা এতোগুলো মানুষকে কিছুটা সময়ের জন্য তারা এতোটা আপন করে নিতে পারে তা প্রত্যক্ষ না করে কাউকে ভালো বোঝানো সম্ভব না।

এই সুযোগে আমরা কুইজ পর্ব সেরে নিলাম এবং আমি সৌভাগ্যক্রমে ২য় স্থান অধিকার করলাম। পাশেই যশোরের মনিরামপুর বাজারে সবাই মিলে একটু ঘুরে আসলাম এবং নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম, কলা এখানে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে! এক কেজি ৪০ টাকা। কেজিতে ১৭-১৮ টা উঠছে। এর আগে কখনো এভাবে কলা কেনা হয়নি। প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা পর রাত ৮ টার দিকে আমরা দ্বিতীয় গাড়ির ব্যাবস্থা করে মধুমেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।

ফিরতে দেরি হবে সেই কথা চিন্তা করে আব্দুল গফুর গাজী স্যার (তারুণ্যের উপদেষ্টা) আমাদের ৩০ মিনিট সময় দিলেন মেলা ঘুরে যেন বাসের কাছে থাকি সবাই। আমরা প্রথমে মধুসূদন জাদুঘরে প্রবেশ করে মধুসূদনের জীবন বৃত্তান্ত দেখলাম। তার স্ত্রীর ছবি, পত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে বিলেতে থাকা অবস্থায় পাঠানো পত্র সহ অনেক ঐতিহাসিক জিনিসপত্র অবলোকন করলাম।

পরে মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম, বড় বড় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, কসমেটিকস, সার্কাস, গাড়ি খেলায় মগ্ন হয়ে গেলাম সবাই। দেরিতে যাওয়ায় গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মধুসূদন এর বাড়িতে ঢুকতে পারলাম না আমরা। মেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মধুসূদন দত্তের সেই চিরচেনা ‘কপোতাক্ষ নদ’। মনে পড়ে গেলো সেই বিখ্যাত লাইন, সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে!

ঠিক ১০ টায় আমরা মধুমেলা থেকে প্রস্থান করলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে বাসের ভিতরেই লটারি হলো, অনেকেই পুরষ্কার পেলো। আমি তারুণ্য লাইব্রেরির বুক রিভিউয়ে একটি পুরষ্কার এবং কুইজে ২য় স্থান অধিকার করায় আরেকটি পুরষ্কার অর্জন করলাম। ততক্ষণে আমরা ক্যাম্পাসের কাছাকাছি চলে এসেছি। সারাটাদিন যেন স্বপ্নের মত কেটে গেলো, স্মৃতির পাতায় স্মরনীয় হয়ে থাকার মত একটি দিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *