ইভটিজিং নারী জীবনে অভিশাপ

মুহম্মদ সজীব প্রধান


বিশ্বজুড়ে ১৩ জুন ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয় প্রতি বছর। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবসে আমরা ইভটিজিং কতটা প্রতিরোধ করতে পেরেছি সেখানেই রয়ে যায় বড় একটি প্রশ্ন।ইভটিজিং প্রতিরোধে আমাদের অক্ষমতা দেখে মনে হয় ইভটিজিং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেয়েও কঠিন কাজ।

ইভটিজিং নারী জীবনে একটি ভয়ানক অধ্যায় যা নারীকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং নারীর স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করে। ইভটিজিং এর ভয়াল থাবায় মেয়েশিশু, কিশোরী ও তরুণীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা, স্কুল, কলেজে আসা-যাওয়ার পথে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ইভটিজিং এর স্বীকার হন। এমনকি অনেক মেয়ে জীবন ও সম্মানের হুমকিতে পড়েন যা তাদের মনে শঙ্কা সৃষ্টি করে। বর্তমান সমাজে ধর্ষকরা যে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে তার সূত্রপাতও ঘটে এই ইভটিজিং থেকে।

এছাড়াও, তরুণীরা বখাটেদের প্রস্তাব না মানলে তাদেরকে এসিড নিক্ষেপ সহ হত্যাও করা হয়। সাম্প্রতিক কালে ইভটিজিং সমস্যার হিংস্র থাবায় ক্ষত-বিক্ষত ও অপমানের দহনে জ্বলতে থাকা বহু কিশোরী ও তরুণীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আর এমন দৃষ্টান্ত অহরহ। এমতাবস্থায় অধিকাংশ মেয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এমনকি বাবা-মাও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের বাল্য বিবাহ দেন। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাড়তি বয়সি এসব মেয়েরা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।

প্রকৃতপক্ষে, শহর, উপশহর, গ্রাম-গঞ্জে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে ইভটিজিং আর এর পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে- পারিবারিক ও সামাজিক ধ্বজভঙ্গ অবকাঠামো, সামাজিকভাবে মেয়েদের ছোট করে দেখা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতা, আইনের যথাযথ শাসন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধীকতা, পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করা, মেয়েদের উগ্র পোশাক পরে অবাধ চলাফেরা, স্যাটেলাইট টিভিতে অসামাজিক প্রদর্শনী এবং সমাজে সর্বোপরি সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার অভাব।

কিন্তু ইভটিজিং নামক সামাজিক ক্যান্সারকে প্রতিহত করতে আমাদেরকে অবশ্যই এসব সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোতে আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন যেখানে মেয়েশিশুদের মাঝে সাহসী ও প্রতিবাদী চেতনা জাগ্রত করা হবে এবং ছেলে শিশুদেরকে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হবে।

শুধু তাই নয় ইভটিজিং সমস্যাকে নির্মূল করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। তাহলেই ইভটিজিং নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে কিশোরী ও তরুণীরা।


লেখকঃ শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *