এসএসসি পরীক্ষার ফল-২০২০: মুন্সীগঞ্জে মানবিক বিভাগে মানবিক বিপর্যয়

আবু জাফর আহমেদ মুকুল


বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পরিবার থেকে শুরু করে সকলে জিজ্ঞেস করতে পছন্দ করে গনিত, ইংরেজী ও বিজ্ঞানের বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর। তাই অনেকের মধ্যে ছেলে বেলা থেকে ভয় কাজ করে গনিত, ইংরেজী ও বিজ্ঞানের বিষয়ের উপর, না জানি কত কঠিন বিষয় এগুলো। এক্ষেত্রে অনেক স্কুল শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

মুন্সিগঞ্জে বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ের ছাত্রের তুলনায় মানবিক বিভাগের ছাত্র কয়েকগুণ বেশি। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে জেলায় প্রত্যেকটি স্কুলে এতো মানবিকের ছাত্র নিয়ে রাষ্ট্র কী করবে এটাও ভাবার বিষয়। তাই স্বভাবত কারণে এ বছর জেলায় মানবিক বিভাগের ফলাফলে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক অনেক বেশি ফেল করেছে। এমনও হাই স্কুল রয়েছে যাদের পাসের হারের চেয়ে ফেল করার হার খুবই বেশি।

এ বছর প্রাপ্ত এসএসসি ফলাফলে বিশ্লেষণ করে নিম্নোক্ত চিত্র মুন্সিগঞ্জ জেলায় পাওয়া যায়।

যে হাই স্কুলগুলোতে পাসের হারের থেকে ফেল বেশিঃ মুন্সিগঞ্জ জেলায় যে হাই স্কুলগুলোতে মানবিক বিভাগে পাশের হারের থেকে ফেল বেশি সে সকল স্কুলগুলো হলোঃ শ্রীনগর উপজেলার শতবর্ষী স্কুল স্যার জেসি বোস ইনস্টিটিউশন যেখানে ৩৯ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৪৫ জন, কামারগাঁও আইডিয়াল হাই স্কুলে ১০ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩৮ জন, মজিদপুর দয়হাটা কে, সি, ইনষ্টিটিউশন ৩৭ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৫৫ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় খারশুর হাই স্কুলে ২৮ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২৯ জন।

রাজানগর সৈয়দপুর ইউনিয়ন হাই স্কুল ৪১ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৫৬ জন, বেতকা ইউনিয়ন হাই স্কুল ২৭ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩২ জন, জেলা সদরের মুন্সিগঞ্জ হাই স্কুলে ৫৪ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৫৭ জন এবং মুন্সিগঞ্জ কে কে গভঃ ইনস্টিটিউট ৪ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৯ জন।

অন্যদিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে শ্রীনগর উপজেলার কামারগাঁও আইডিয়াল হাই স্কুলে ১২ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৬ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় রাজানগর সৈয়দপুর ইউনিয়ন হাই স্কুলে ১২ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৬ জন এবং জাজিরা সৈয়দপুর আলহাজ্ব এম.এ কাশেম হাই স্কুলে ১২ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৪ জন। সকল মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপরোক্ত স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি যে সকল শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও সকলকে প্রায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করে।

যার ফলে তারা টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করার পাশাপাশি বোর্ড পরীক্ষায় ফেল করে। তবে অনেক সচেতনমহল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও সিরাজদিখানে স্কুলগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় ঢিলেঢালাভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে পাসের হার বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য যে, গজারিয়া ও ও সিরাজদিখানে উপজেলায় শিক্ষার্থীদের ফেলের হার তুলনামূলকভাবে কম। উপজেলা মাধ্যমিক অফিসারের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, এ বছর জেলায় এসএসসি-তে পাসের হার শ্রীনগর-৭৮%, লৌহজং-৭৮%, টঙ্গীবাড়ি-৭৯%, সদর-৮৩%, গজারিয়ায়-৮৯% ও সিরাজদিখানে-৯০%।

যে হাই স্কুলগুলোতে মানবিক বিভাগ হতে ফেল বেশি করেছেঃ মানবিক বিভাগ হতে শ্রীনগর উপজেলায় উপজেলার শতবর্ষী ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজ ৮৬ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৫৩ জন, ষোলঘর এ.কে.এস হাই স্কুলে ৭৬ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৪৫ জন, বাড়ৈখালী হাই স্কুলে ৪৪ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২৫ জন, আলহাজ্ব কাজী ফজলুল হক কলেজে ৩১ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২০ জন, লৌহজং উপজেলায় মেদেনীমন্ডল আনোয়ার চৌধুরি হাই স্কুলে ৪১ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৪০ জন।

কলমা লক্ষ্মীকান্ত হাই স্কুল এন্ড কলেজে ৬৫ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৫৫ জন, হলুদিয়া হাই স্কুলে ৪৯ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩০ জন, যশুলদিয়া হাই স্কুলে ৪৭ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২০ জন, নও পাড়া হাই স্কুলে ৬৩ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩৫ জন,সদর উপজেলার ফুলতলা মোহাম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয় ৪০ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২৫ জন, সদরের রামপাল এম বি এম হাই স্কুল ১০১ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩০ জন, বকুলতলা এইচ.এ.কে হাই স্কুলে ৪১ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২১ জন।

পঞ্চসার ইউনিয়ন হাই স্কুলে ৪৫ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৮ জন, মোঃ আমিরুল হক পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৩৭জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৩০ জন, সিরাজদিখানের খাসমহল বালুচর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪৩জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৮ জন, শেখনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ২৮ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৩ জন, খাসকান্ডী হাই স্কুলে ২০ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৬ জন, আলহাজ্ব মোহাম্মদ গাইজুদ্দিন হাই স্কল ২৫ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ১৬ জন।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় বালি গাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ১৫৩ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৮২ জন, বানারী হাই স্কুলে ৩৯ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২২ জন, ব্রাক্ষনভিটা ইউনিয়ন হাই স্কুলে ৩০ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২৯ জন, পুরা ডি.সি.উচ্চ বিদ্যালয় ৬৩ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ২৮ জন এবং সদর উপজেলার মীর কাদিম হাজী আমজাদ হাই স্কুল ৭২ জন শিক্ষার্থী পাস করার বিপরীতে ফেল করেছে ৪০ জন।

সদ্য প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে জেলার তিন সরকারি স্কুল হতে ফেল করেছে ১০২ জন এবং এ ধরনের ফলাফলের মানবিক বিপর্যয়ে হতাশ মুন্সীগঞ্জ বাসী। দুঃখজনক হলেও সত্যি তিন সরকারি স্কুলের কোনোটিতেই শতভাগ পাশ করেনি। এদিকে ফলাফলের ভিত্তিতে শতভাগ পাসসহ এবারো শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দীন স্কুল ও কলেজ। ইয়াজউদ্দীন এ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫ জন। অন্য দিকে সরকারি স্কুল তিনটির মধ্যে এভিজেএম এ ৩৫ জন, কে কে গভঃ স্কুলে ২৩ জন ও শ্রীনগর সুফিয়া গার্লস স্কুলে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের জেএসসি পরীক্ষায় এভিজেএম স্কুল থেকে ৬৭ জন ও কেকে স্কুলে ৫০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০১৭ সালের সেই ব্যাচই এবছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু ফলাফলে তেমন কোনো সফলতা দেখা যায়নি।

সুতরাং মানবিক বিভাগের মানবিক বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষক, অভিভাবক, সচেতন নাগরিক, শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্তৃপক্ষসহ সকলকে এক প্লাটফর্মে কাজ করা প্রয়োজন।

  • লেখকঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশ্লেষক ও ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *