কোভিড-১৯ ও আত্মহত্যার অতিকথন

মো. মজনুর রশিদ


বর্তমানে বিশ্বব্যাপি চলছে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। প্রত্যেক জীবের বেঁচে থাকার বৈশিষ্টের প্রবণতা প্রাকৃতিক। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীবের বেঁচে থাকাটা অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে গৃহ পালিত প্রাণী মানুষের প্রয়োজনে খাদ্য হিসেবে যখন তখন ব্যবহৃত হয়। আবার শাক-সবজি, গাছ-পালা ও অন্যন্য প্রাণীকূল মানুষের প্রয়োজনে যে কোনো সময় প্রয়োজন পূরণ করে। অর্থাৎ এসবের জীবনকাল অনেক সময় মানুষ বা অন্যকিছুর উপর নির্ভরশীল।

ব্যতিক্রম কেবলি পৃথিবীর শ্রেষ্ট জীব মানুষের ক্ষেত্রে। মানব জাতির বেঁচে থাকার আকুতি চিরন্তন ও নিয়মতান্ত্রিক। অপঘাত, দূর্ঘটনা, হত্যা ও আত্মহত্যা (আইনের দৃষ্টিতে এগুলো শাস্তি যোগ্য অপরাধ) ছাড়া মানুষের জীবন তাঁর জীবন চক্রের মাধ্যমে প্রাকৃতিক নিয়মে মৃত্যুবরণ করে। জীবন ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে মানুষের স্ব স্ব ধর্মের বিশ্বাস প্রবল। সেখানে ধর্মের অনুশাসনসমূহ মেনে চলা হয়। মানুষ, সমাজের শ্রেষ্ট জীব হিসেবে বেঁচে থাকার প্রতি রয়েছে তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্ট। জীবনের মূল্য কোনো কিছুর দ্বারা পরিমাপ করা যায় না।

জীবনের প্রতি যত্ন ও সম্মান তাই সবার উপরে। কেবলি প্রচেষ্টই নয়, মানব জীবন সুখ, ঐশ্বর্য, প্রতিপত্তি, আধুনিকতা, সৌখিনতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নিয়ে উন্নত জীবনের শিখরে পৌছাতে চাই মানুষ। উন্নত বিশ্বের জীবন-যাপনের চিত্র তারই ইঙ্গিত বহন করে। অনুন্নত দেশসমূহ উন্নত দেশের মতো চলতে যেয়ে উন্নয়ন তত্ত্ব চক্রের আবত্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বদা সত্য বলে আমরা জানি- জন্মালেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। জন্ম- মৃত্যুর এই খুশি ও বিষাদের জায়গা থেকে জীবনে বেঁচে থাকার সৌন্দর্যই শ্রেষ্ট হয়ে ওঠে। ধর্মের শিষ্টাচারে রয়েছে জীব হত্যা মহা পাপ, আবার বলা হচ্ছে ব্যক্তির জীবননাশের হুমকী থাকলে আত্ম রক্ষার জন্য ব্যক্তি যেকাউকে বিনাশ করতে পারে! দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বলা হয়, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

এভাবেই মানুষের জীবনের মূল্যকে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- টাইম ইজ মানি, মানি আর্ন মানি। ওয়ার্ক ইজ মানি, মানি ইজ গড। এমন চিন্তার সমাজ ব্যবস্থায় জীবন হয়ে পড়েছে ভোগ বিত্তের বিরাম ও লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো। ব্যক্তি কেন্দ্রিক অর্জনের পরিসীমা আকাশচুম্বী। তবুও মানুষ বিত্তের পিছনে ছুটে চলেছে নিরন্তর। অপর দিকে পৃথিবীর বহু মানুষ অনাহার ও দারিদ্রতার মধ্যে থেকে জীবন যাপন করছে। জীবনের মূল্য ও সংজ্ঞা দু’ই তাঁদের নিকট অন্যরকম। বেঁচে থাকার সংগ্রামই সেখানে মূখ্য ও মূল্যবান। পাশ্চাতের উন্নত সমাজে নগরায়ন, শিল্পায়ন, বাণিজিকিকরণ, প্রাইভেটাইজেশন, আমলাতান্ত্রিকতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ, উচ্চ মাত্রার ভোগ বিলাসিতা, প্রযুক্তির আসক্তি, চরম শ্রমবিভাজন, অঢেল অর্থ প্রাপ্তির নেশা বিশ্বব্যপী মানুষের জীবনের মূল্যের স্তরায়ন সৃষ্টি করেছে। সৃষ্ট এই স্তরায়নের মধ্যে স্পষ্টতই বিদ্যমান রয়েছে সামাজিক অসমতা (ইমাম আলি, ২০১১)।

অসম সামাজিক অসমতা আত্মহত্যার প্রবনতাকে বৃদ্ধি করে। মানব সমাজের পারস্পারিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে সৃষ্টি করে বিভেদের দেয়াল। মানুষ তার মনো জগতের ভিতরে সৃষ্টি করে রেখেছে একান্ত নিজের বসবাসের একাকিত্বের আতুর ঘর। সে আতুর ঘরের বিশালতা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদকে সুখ প্রাপ্তির উন্মাদনাতে ভরে রাখে। সমাজ কাঠামোর বিরূপ পরিবর্তন ঘটলে সে ব্যক্তি বিলাসীতার জীবন-যাপনে ঘটে ছন্দ-পতন। একাকিত্ব জীবন মানুষকে পরিবার ও সমাজ থেকে কোনো এক সময় বিচ্ছন্ন করে দেয়। মানব বোধে জন্ম হয় সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধ। ব্যক্তির সমাজবিচ্যুত আচরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সামাজিক বিচ্ছৃঙ্খলা।

তখন সমাজে আত্নহত্যার হার বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তির নিকট যে জীবনের মূল্য সব থেকে বেশি সে জীবনকে সমাজে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সব থেকে অপাংতেও ভেবে ব্যক্তি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধির মুখোমুখি দাড়িয়ে পরে এবং আত্মহত্যাকে প্রলম্ভিত করে। বৈশ্বক নানা অস্থিতিশীল ঘটনাও আত্নহত্যার হারকে বৃদ্ধি করে। যেমন, মহামন্দা, যুদ্ধবিগ্রহ, দাঙ্গা, মরণব্যাধি ভাইরাস, মহামারি, খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ, বেকারত্ব প্রভৃতি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপি ব্যাপক হারে প্রাণহানির ঘটনা জন মানুষের মনে আতংক সৃষ্টি করেছে এবং জীবন শক্তির মনোবলকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে বৈশ্বিক আত্মহত্যার ঘটনা।

Asian Journal of Psychiatry তে সদ্য প্রকাশিত নিবন্ধন First COVID-19 suicide case in Bangladesh due to fear of COVID-19 and xenophobia : Passible suicide prevention strategies তে বলা হচ্ছে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পরা নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর মিছিলে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। মহামারির প্রকোপ অকল্পনীয়। যার প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষণ্নতা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, ভয় ও খতের চাপ। Suicide Awareness voice of Education, 2020 এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাসের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু শব্দগুচ্ছ।

Social Distance, Isolation, Quarantine, PPE (personal protection equipment), Mask, Ventilator এসকল নতুন শব্দগুলো মানুষের মনে ভয়ের উৎকন্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজ ও অর্থনীতিতে বন্দুকের ট্রিগার চেপে রয়েছে ব্যক্তির মনোস্তাত্ত্বিক ঘাড়ের ওপর। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তৈরি হচ্ছে- দুঃখ, কষ্ট, ভয়, আতঙ্ক, উদ্বিগ্নতা, রাগ, বিরক্তি, হতাশা, অপরাধবোধ, অনুপায়, একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা, স্নায়ুচাপ, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি। করোনা ভাইরাস প্রাদুরভাবের ক্ষেত্রে এমন মানসিক চাপ সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপি ৯০ শতাংশ আত্মহত্যা ঘটে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষন্বতার কারণে। ২০২০ সালের উক্ত প্রবন্ধের রিপোর্টে বলা হচ্ছে ২০০৩ সালে হংকং এ SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome) মহামারিতে বয়স্ক ব্যক্তির মাঝে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পায়।

সময় সংবাদ ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে জানাচ্ছে ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা ৩৬ বছরের এক যুবকের ঠান্ডা জ্বরের উপস্বর্গ দেখা দিলে সে আত্মাহত্যা করে। ১১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে সময় সংবাদ আরো জানায় ভারতের নিজাম উদ্দিন তবলিগি মারকাজের জামায়াতে যোগ দেওয়া এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করে। ভারতের অন্ধ্র, অরুণাচল, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, আসাম, মধ্য প্রদেশ ও চেন্নাই এ করোনা ভাইরাসের কারণে মানসিক দূর্বলার ফলে আত্মহত্যা ঘটনা ঘটে (তথ্যসূত্র, বিভিন্ন অন লাইন মিডিয়া ও পত্রিকা, মার্চ- এপ্রিল)। বিশ্বে যতো আত্মহত্যা ঘটে তার প্রতি ১০ জনের ৪ জনই ভারতীয়। ভারতের মধ্য প্রদেশসহ অন্যান্য প্রদেশে হাজার হাজার দরিদ্র কৃষকের আত্মহুতির রিপোর্ট প্রায়ই দৈনিক পত্রিকাতে দেখা যায়।

বাংলাদেশে অনেকেই করোনা উপস্বর্গে করেন্টাইন থেকে ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে। ঘরবন্দী হয়ে থাকতে অস্থির হয়ে পরছে অধিকাংশ মানুষ। ফলে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে মনোস্তাত্ত্বিক চাপ।স্নায়ুচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হতে পারে মানসিক বিকারগ্রস্থতা। যার পরিণতিতে ডেকে আনছে চরম দুঃখবোধের। দেশে প্রতি বছর আত্মহত্যার ঘটনা সংগঠিত হয় ১০ হাজার। ডবলিউএইচও এর জরিপে আত্মহত্যার তালিকাতে বাংলাদেশের স্থান দশম। সংস্থাটি আরো বলছে বছরে বিশ্বে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। ২০২০ সাল নাগাদ আত্মঘাতী হবে সারে ১৫ লাখের মতো মানুষ। বর্তমানে কভিড-১৯ এর প্রদুর্ভাবের সময়ে সে সংখ্যা যে আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। পুলিশের তথ্যমতে দেশের আত্মহত্যার ১০ শতাংশ নারী।

বাংলাদেশের কিছু জেলাতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। সে সব আত্মহত্যার কেস বিশ্লষণ করে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দারিদ্রতা, বেকারত্ব, শিক্ষার হার কম, যৌতুক, বাল্য বিবাহ, পারিবারিক কলহ, পারিবারিক ও সামাজিক নির্যাতন, মাদকাসক্ত, এনজাইটি, প্ররোচনা, প্রেমে ব্যর্থ, স্থানীক সামাজিক বাস্তবতা, স্পশকাতর অনুভূতিতে আঘাত, পরিবারে নারীর অবমূল্যায়ন, বৈশ্বিক ভোগ বিলাসিতা, যুব সমাজের উচ্চাভিলাসি আকাঙ্খা পূরণে অপূর্ণতা, সামিজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের অনুপস্থিতি, গ্রামীণ ভঙ্গুর সমাজ কাঠামো এসকল আত্মহত্যার মূল কারণ।

COVID-19 suicide in Pakistan, during off not COVID-19 fear but poverty? – The forthcoming challenges for a developing country প্রবন্ধে পাকিস্তানে মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ টির আত্মহত্যার রিপোর্ট পুলিশের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে ৭ টি সরাসরি করোনা ভাইরাসের কারণে বাকি ৪ টি পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের এক রিপোর্ট বলছে- মূদ্রাস্ফীতি ও মন্দার কারণে অর্থনৈতিক উৎপাদন কমে যাওয়ায় জিডিপির হার কমে গেছে এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালের আরেকটি রিপোর্ট উল্লখ করছে মানুষের মনে উদ্বিগ্নতা, ভয়, বিষণ্নতা, স্নায়ুচাপ বৃদ্ধি পেয়ে আত্মহত্যার হার বেরে যায়। করোনা ভাইরাস দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে নতুন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছরে ইউএনডিপি রিপোর্টে করোনা ভাইরাসে উন্নয়নশীল দেশসমূহে এখন পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে- অর্থনীতিকে বাঁচাতে লকডাউন কিছু অঙ্গরাজ্যে শীথিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তার ক’দিন পরে তিনি আরো বলেন অর্থনীতিতে আমেরিকার ক্ষতির পরিমাণ যেকোনো দেশের চাইতে ১০ গুণ বেশি। তিনি বলেন এভাবে চলতে থাকলে আমেরিকাতে আত্নহত্যার প্রবণতার হার বৃদ্ধি পাবে (তথ্যসূত্র, সময় সংবাদ)। এর বিপরীত রাষ্ট্রও রয়েছে যেখনে অতি কঠরভাবে জনগণকে ঘরে রেখে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বা হয়েছে। যেমন- চীন, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশ।

করোনা ভাইরাসেরর মহামারি পরবর্তী সময়ে সমাজ ও অর্থনীতিকে সামাল দিতে বিশ্বের প্রস্তুতি সামান্যই। করোনা ভাইারাস মোকাবেলায় ইউরোপের সমাজকাঠামো ও অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে তাতে ইউরোপজুরে চরম বিপর্য নেমে আসতে পারে। যে কারণে পুরো ইউরোপ জুড়ে আত্মহুতির প্রবনতা বহুগুণ বৃদ্ধি হবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পরবে পরিবারের ব্যক্তি জীবনের উপর। ব্যক্তির এমন অবস্থান থেকে তাঁর মনোস্তাত্ত্বিক শক্তি বৃদ্ধি করা জরুরি। ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে বৃটেন আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘মানসিক স্বাস্থ্য, বৈষম্য ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ করে ২০১৮ সালে। সিএনএন বলছে বৃটেনে প্রতি বছর চার হাজার ৫০০ জন আত্মহত্যা করে। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তির পরিমান। চ্যানেল টয়েন্টি ফোরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাসে মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরামর্শ চেয়ে ফোন করার হার অনেক বেশি।

সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তাঁর Suicide গ্রন্থে আত্মহত্যাকে সামাজিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন আত্মহত্যা ব্যক্তি নিজে করে না বরং এটি সামাজ কাঠামোর মধ্যে থেকে ঘটে। ব্যক্তি যখন বিদ্যমান সমাজ বব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তখন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি একটি সামাজিক সমস্যা। সামাজের বিভিন্ন প্রবঞ্চ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সম্পর্কগুলো দূর্বল হয়ে পরলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

আবার প্রযুক্তির আধুনিকতার সাথে সমাজস্থ মানুষের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন একই সাথে না ঘটলে সমাজকাঠামো ও সংস্কৃতির মধ্যে দুরুত্ব তৈরি হয়। তাকে সাংস্কৃতিক ব্যবধান বলে। অতিমাত্রার সাংস্কৃতিক ব্যবধানে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পায়। অনুন্নত ও স্বল্প শিক্ষার হারের দেশসমূহ এর উদাহরণ যেমন- জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, সার্বিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, ত্রিনিদাদ ও টোবাকো প্রভৃতি দেশ। অপর দিকে উন্নত দেশেও আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্কেন্ডিনেভিয়া অঞ্চল, বৃটেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি। অর্থাৎ আত্মহত্যার সংগঠিত হবার ধরনের মধ্যে প্রকারভেদ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিরূপে আত্মহত্যা সংগঠিত হয়।

ডুর্খেইম সমাজ ও মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করে চার (৪) ধরণের আত্মহত্যার কথা বলেছেন। ১ আত্মকেন্দ্রিক (Egoistic) ২. নৈরাজ্যমূলক (Anomic) ৩. পরার্থকেন্দ্রিক (Altruistic) এবং ৪. অদৃষ্টবাদী (Fatalistic)। প্রথমটিতে সমাজে যখন আদর্শ, ন্যায়-নীতি দুর্বল হয়ে পরে এবং ব্যক্তির মাঝে আদর্শই মূখ্য থাকে তখন ব্যক্তি সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে। গত ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখে করোনা ভাইরাসে কি করবে সেই দুশ্চিন্তার ভাবনার কূলকিনারা না করতে পারায় আদর্শচুত্যির ভয়ে অভিমান করে জার্মান সরকারের এক মন্ত্রী রেল লাইনে আত্মহত্যা করে (তথ্যসূত্র- বিভিন্ন অন লাইন মিডিয়া)। এটি আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার ধরণ।

দ্বিতীয়, বিচ্ছৃঙ্খল সমাজে সর্বত্র নৈরাজ্য বিরাজ করলে ব্যক্তি সে সমাজে বেঁচে থাকতে চাই না এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ঘরবন্দী জীবন-যাপন ও দেশের মানুষের মাঝে অস্থিতিরতার পরিবেশ দেখে সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় ভারতের দু’জন শ্রমিকের আত্মহত্যা (তথ্যসূত্র- bdeverything.com)। তৃতীয়ত, ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আত্মহুতির ভয় না পেয়ে নিজেকে যখন অন্যের কল্যাণে উৎস্বর্গ করে। যেমন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা দেশের জন্য নিজের প্রাণ উৎস্বর্গ করেছিলেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দেশের মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিশ্চিত মৃত্যু ভেবেও চিকিৎস্যা সেবা দিতে যেয়ে গত বৈশাখের দিত্বীয় দিনের সকালে (১৫ এপ্রিল) সিলেটের ডাক্তার মঈন উদ্দিন এর মৃত্যু এই স্তরের উদাহরণ।

পৃথিবীজুরে ডাক্তারদের করোনা চিকিৎসায় দ্যার্থহীনভাবে এগিয়ে আসা এবং অনেক ডাক্তারের মৃত্যুর ঘটনা এ পর্যায়ের উদাহরণ । চতুর্থ- জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ ও গোষ্ঠির প্রয়োজনকে বড় করে দেখে অন্যের জীবনকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেকে মৃত্যুর পথে নিপতিত করা। যেমন ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস মহমারিতে ব্যাপক মৃত্যুর মিছিলে হাসপাতাল সেবার অপ্রতুলতার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের চাইতে শিশু ও কম বয়সের ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাকে প্রধান্য দিতে যেয়ে বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়া। কারণ আগামী দিনের বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীর সব থেকে বেশি প্রয়োজন শিশু, নারী ও অল্প বয়স্ক মানুষের। ফলে উপায়ন্ত না পেয়ে অধিক বয়স্ক মানুষের চাইতে যুবকদের বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে। চিকিৎস্যা সংকটের এমন অবস্থায় অদৃষ্টবাদের উপর নির্ভর করে বয়স্কদের চিকিৎসার সুযোগ কম হচ্ছে এবং বয়স্কদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা জনিত মহামারিতে (তথ্যসূত্র- বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়া, মার্চ-এপ্রিল, ২০২০)। প্রথম দুটি ধরণে সমাজে সামাজিক সংহতির বন্ধন থাকে দুর্বল এবং শেষ দুটি ধরণে সমাজে সামাজিক সংহতির বন্ধন থাকে শক্তিশালী।

বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস সমাজকাঠামোকে বোঝাতে সমাজের দুটি ভিত্তির কথা বলেছেন। একটি মৌল কাঠামো যার ভিত্তি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং অপরটি উপরি কাঠামো। যা মৌল কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। অর্থাৎ সংস্কৃতি, আয়-ব্যয়, সরবরাহ- বন্টন, ভোগ, আচার- ব্যবহার, সামাজিক রীতি নীতি, আইন, আদালত, সংবিধান, শিল্প- কলা প্রভৃতি নির্ধারিত হয় সে দেশের অর্থনীতি কোন মানদন্ডে রয়েছে তার উপর। কভিড১৯ এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙ্গে পরার উপক্রম হলে বিশ্বের অন্যান্য ব্যবস্থার উপর তার দৃর্শ্যত প্রভাব পরবে। বিশ্বব্যাপি সব ধরণের উৎসব আয়োজনের বন্ধ থাকাটা তারই উদাহরণ।

করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বব্যাপি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভয়াবহ দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন গবেষাণা সংস্থা ও মিডিয়া। মার্কিন কিছু গবেষক তাঁদের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে বলছেন কভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী তার পূর্ব অবস্থানে আর নাও ফিরতে পারে। অর্থাৎ আধুনিকতার সর্বোচ্চ শিখরে থেকে ভোগ বিলাসিতার পৃথিবীকে ফিরে পেতে হলে বহু বছর সময় লাগবে। অন্য আর এক দল গবেষক বলছেন কভিড-১৯ প্রতি চার বছর পর পর আবার ফিরে আসতে পারে। একে মৌসুমী রোগে পরিণত হবার কথাও কোনো কোনো মার্কিন চিকিৎসক বলেছেন। কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব মুখোমখি হবে স্বরণকালের সব থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিতে দাড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব ।

গত ৫০ বছরে উন্নয়নশীল দেশে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ইতোমধ্যে ৩৮ টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে কৌশল গ্রহণ করেছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখের কাছাকাছি। বাংলাদেশে আক্রান্ত ৪৬৮৯ জন, মৃত্যু- ১৩১ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে- ১১২ জন (তথ্যসূত্র- সময় সংবাদ, ২৪ এপ্রিল)। এ সংখ্যা যতো দিন যাচ্ছে ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লকডাউন তুলে নিতে এবং অভিবাসন স্থগিতের সদ্য ঘোষণা দিয়েছেন। কভিড-১৯ এ বিশ্বের চলমান বিপর্যের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুশিয়ার করেছে। এবং লকডাউন তুলে নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (তথ্যসূত্র- বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়া ২০ ও ২১ এপ্রিল, ২০২০)।

সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত করোনায় মৃত্যুর এমন সংবাদে মানুষের মনে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপি সারে ৭০০ কোটি মানুষ একই সময়ে ঘরবন্দী রয়েছে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে। যা বৈশ্বিক আত্মহত্যার পরিসংখ্যানকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে অনুমান করা যায়।

নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন- “খাদ্যের অভাবে পৃথিবীতে কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি; হয়েছে সুষম বন্টনের অভাবে।” বিশ্ববাসিকে পেরেশান মুক্ত রাখতে হলে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের নিকট যার যা রয়েছে সেগুলোর সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরা কভিড-১৯ এর প্রকপ পরবর্তী বিশ্ব শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

কভিড -১৯ এর প্রভাবে মানসিক ও শারিরীকভাবে সুস্থ থাকতে কিছু পরামর্শও দিয়ে প্রচার করছে বিভিন্ন মিডিয়া। এগুলো মেনে চলতে পারলে অনেকেই সুস্থ থাকতে পারবে বলে আশা করা যায়।

আইইআরডিসি ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা যেমন- ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন; বারবার সাবান পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে দু’হাত ধুয়ে পরিস্কার করুন; হাঁচি- কাঁশির শিষ্টাচার মেনে চলা; প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাহির না হওয়া; বাহির হলে মাকস ব্যবহার করুন; ঠান্ডা জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ সেবন করা; মানুষের সাথে অন্তত তিন ফিট দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা; তাজা ফলমূল, রঙ্গিন শাকসবজি, পুষ্টিকর ও ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমানে খাওয়া প্রভৃতি। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন- কুসুম গরম পানি পান করা; লবন মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, আদা-চা খাওয়া; ঠান্ডা না লাগানো; সর্দী- জ্বর হলে ঔষধ সেবন করা এবং ঘরে অবস্থান করা প্রভৃতি।

কভিড-১৯ এর বিশ্বময় প্রাদুর্ভাবের হুমকি থেকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে কিছু করনীয়- ১. অসত্য কথা ও সংবাদে কান না দেওয়া। ২. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রফেশনাল ডাক্তারের পরামর্শের সুযোগ বৃদ্ধি করা। ৩. ব্যক্তির অসংলগ্ন আচারণের ক্ষেত্রে তাকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়া। ৪. মৌলিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা, যেমন খাদ্য, ঔষধ, নগদ অর্থ প্রভৃতি। ৫. লকডাউনের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের পথ সুগোম করা। ৬. পচন্দসই ভালো ভালো বই পড়া। ৭. ধর্মীয় এবাদতসমূহ ঘরে বসে পালন করা। ৮. পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ ও অন্য ধর্মের গ্রন্থসমূহ বেশি বেশি পড়া। ৯. হতের কাজের চর্চা করা যা পূর্বে সময় স্বল্পতার কারণে করা হয়নি।

১০. ঘরোয়া খেলা ও বিনোদনসমূহ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে আয়োজন করা। এছাড়াও ১. সবার জন্য একই ধরণের বা মাত্রার মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ২. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যথাযতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. সহজলভ্যে স্বাস্থ্য পরিসেবা নিশ্চিত করা। ৪. আক্রান্ত রুগী ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। ৫. স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখা। অধিকিন্তু শিশুদের জন্য ৩০ মিনিট এবং বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে দৈনিক ১ ঘন্টা শারিরীক ব্যয়াম করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুশাসনের চর্চা ও বিধি বিধানসমূহ মেনে চলতে পারার তৃপ্তি অনূভব করা।

আশার কথা মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য বাতায়ন ও অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা চালু করেছে। উন্মুক্ত করা হয়েছে নতুন স্বাস্থ্য পরিসেবার সুযোগ। মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য পরামর্শ। সরকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যে সরকার বিশেষ অর্থ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে সর্বক্ষণ পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

তাছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় আর্ত মানবতার সেবাই কাজ করে যাচ্ছে। যেমন রোভার স্কাউট। পাড়া, মহল্লা, ওয়র্ড, গ্রাম, শহর, নগর সব জাগাতে জনসাধারণকে বিভিন্ন সেবা মূলক তথ্য দিয়ে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনগুলোর সদস্যরা। এসকল তথ্য প্রাপ্তিতা নাগরিকদের মাঝে বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে আত্মোপলব্ধির। হ্রাস পাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুকির মাত্রা। যা আত্মহত্যা পতিরোধে সৃষ্টি করছে সচেতনতা।

কানাডার প্রধার মন্ত্রী ট্রুডো তাঁর দেশের সকল নাগরিকের আপদকালীন ব্যয়ভার সরকার প্রধান হয়ে নিজে গ্রহণ করে জন সাধারণকে ঘরে অবস্থানের আহবান জানিয়েছেন। মার্কিন সরকার মহামারি মোকাবেলায় সব ধরণের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সে দেশের জনগণকে। ইউরোপীয় দেশসমূহ করোনা মোকাবেলায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ জন সাধারণের মানসিক শক্তি ধরে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আফ্রিকা, ল্যটিন আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের সরকার ও রাষ্ট্র সমূহ করোনা মোকাবেলায় মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পরিধি বৃদ্ধিতে নানান কার্যক্রম পরিচালিত করছে।

এসব পপদক্ষেপ ভয়, আতঙ্ক, খাদ্যাভাবের চিন্তা, দুর্দশাগ্রস্থ, নিরাশা ও অনুপায়কে প্রশোমিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। একাকিত্বের বিষণ্নতাকে দূর করতে পারে বিভিন্ন সরকারের গৃহীত এসব পদক্ষেপসমূহ। এসকল দেশ ও রাষ্ট্রের গৃহীত কার্যক্রমসমূহ ব্যক্তির মনের মানসিক উৎকন্ঠা ও উদ্বেগের স্থানটি লাঘব করবে এবং আত্মহুতির মতো মারাক্তক বিপদজনক ঘটনাকে নিরুৎসাহিত করবে বলে সকলের প্রত্যাশা।

ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। নিজে সুস্থ থাকুন, অপরকে সুস্থ রাখুন। মানসিক চাপ কমিয়ে নিজের মনকে আনন্দে ভরে রেখে সুস্থ থাকুন। আত্মহত্যা মহাপাপ এ কথাটি উপলব্ধি করতে শিখুন, আত্মহুতির পরবর্তী বিপর্যয়ের তথ্য যেনে নিজেকে নিরাপদ রাখুন। সামাজিক নয়, শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে চলুন। লকডাউনের সময় পরিবারকে বেশি বেশি সময় দেবার সময় এসেছে এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলুন। পারিবারিক বন্ধনকে নতুন করে অনুভব করে সেই অনুভূতিকে উপভোগ করুন। জানতে ও উপলব্ধি করতে শিখুন জীবন কতো সুন্দর। অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেছেন- লকডাউন থেকে আরো উন্নত সমাজ তৈরি হতে পারে। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ একজোট হয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করে উদাহরণ সৃষ্টি করে।

এসবই আত্মহত্যাকে সমন্বিতভাবে নিরুৎসাহিত করার চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। ব্রিটেনের রানী বলেছেন- আমাদের আবার দেখা হবে, মনোবল অটুট রাখুন (তথ্যসূত্র- প্রথম আলো, ৬ এপ্রিল)। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- মনোবল ভাঙ্গবেন না, মনকে শক্ত করুন, আমরা রয়েছি জনগণের পাশে। বিশ্ব নেতৃত্ত্বের প্রাণশক্তির এসকল বাণীতে অসীম সাহস রয়েছে বরং স্থান নেই আত্মাহুতির কোনো উপস্বর্গের। জীবন যেমন, ব্যক্তি যেভাবে তাকে আলিঙ্গণ করে ঠিক তেমন। আত্মহত্যা নয়, আত্মউৎস্বর্গ ও আত্মউৎফুল্লের সুভাসের সৌরবে কভিড-১৯ পরবর্তী এ পৃথিবীর পরিবার, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্র প্রাণোচ্ছ্বাসের স্বয়ম্ভরতায় ভরে থাকবে এমন প্রত্যাশা বিশ্ব কোটি প্রাণে।


লেখকঃ চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ- ৮১০০। এবং সম্পাদক বাংলাদেশ স্কাউটস, গোপালগঞ্জ জেলা রোভার। rashid4256cu@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *