মঞ্জুরুল ইসলাম আকন্দ
‘মৃত্যুর কোনো দেশ তো লাগে না কাঁটাতার ছিঁড়ে যায় নগর থাকলে নাগরিক!’ নচিকেতার এই লেখার মতো’ই সত্যি হয়ে যাচ্ছে যেন সব কিছু। সারা বিশ্ব আজ করোনা নামক মহামারিতে স্তব্ধ। আর এর সাথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বন্ধ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে ঘরবদ্ধ জীবন কাটছে শিক্ষার্থীদের।
করোনা ভাইরাসের সংকটময় মুহূর্ত কিভাবে কাটছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের, তা জানাচ্ছেন বশেফমুবিপ্রবির মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সৌরভ- “করোনা ভাইরাস আমাদের জন্যে বিশাল এক শিক্ষা। অতিক্ষুদ্র এই ভাইরাস একাই পুরো পৃথিবীকে স্থবির করে দিয়েছে।মানুষ অনেক ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতার কথা জানতে পেরেছে।সব খারাপের যেমন একটা ভালো দিক থাকে, এই করোনা ভাইরাসেরও কিন্তু একটা ভালো দিক আছে।সেটা হলো প্রকৃতি তার আগের রূপ ফিরে পাচ্ছে।
এই করোনার সময়ে আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট।আমরা অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস করছি, এতে করে আমরা একেবারে অলস না হয়ে গিয়ে শিক্ষার মাঝে থাকতে পারছি।আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ আমাদের নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। এতে করে আমরা সেশনজটের সময়টা কমিয়ে ফেলতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত গাইডলাইনও দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের কিভাবে কি করা উচিৎ। এর পাশাপাশি আমাদের সহপাঠীদের মাঝে কারো অর্থনৈতিক সমস্যা আছে কিনা সে বিষয়েও খোঁজ খবর রাখছেন।
আমাদের স্বাস্থ্যের নিয়মিত খবর রাখছেন। কিন্তু এত সব ভালোর মাঝেও কিছু সমস্যা রয়ে যায়।অনেকের অনলাইন ক্লাসে যোগদানের জন্য ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন নেই,আবার অনেকের ক্ষেত্রে এত টাকা খরচ ইন্টারনেট ক্রয় করা কঠিন হয়ে যায়।আবার অনেকে গ্রামে থাকে সেখানে ইন্টারনেট স্পিড অনেক স্লো।তাদের জন্যে অনলাইনে ক্লাস করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে । গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো করোনা পরবর্তী সময়ে কর্পোরেট জবের সু্যোগ আগের থেকে অনেক কমে যাবে।
এজন্যে আমরা যারা যুবসমাজ আছি তাদের উচিত কর্পোরেট জবের পিছনে না দৌড়িয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যে আমরা আমাদের শ্রম এবং মেধা ব্যবহার করি।আমাদের মেধা যেন ভালো কোন কাজে নিয়োজিত করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।এতে করে নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশে জন্যেও ভালো কিছু করতে পারবো। সর্বোপরি, সংকটময় এই সময়ে সবার সুস্থতা কামনা করছি।”
সমাজ কর্ম বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিহা সুলতানা রিমা জানান- “করোনাকালীন এই সময়ে আমাদের মূল হাতিয়ার হলো সচেতনতা।একমাত্র সচেতনতায় পারে করোনা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করতে।সামাজিক দূরত্ব,হাত পরিষ্কার রাখা,সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ না আসা। এসব আমরা নিজে মেনে চলব এবং অন্য-কেউ মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করবো।
খুব প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হবো না।আপনার আশে-পাশে কারও করোনা লক্ষণ দেখা দিলে তা ধামাচাপা না দিয়ে অথবা আতঙ্কিত না হয়ে আইইডিসিআর হটলাইনে যোগাযোগ করুন। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য এ ভাইরাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
“একদিন এই ঝড় থেমে যাবে,
নিস্তব্ধ পৃথিবী প্রাণ ফিরে পাবে”
আপনি আমি চাইলেই সেই দিন খুব শীঘ্রই চলে আসবে।সুতরাং সবাই ঘরে থাকুন। এই সংকটময় মুহূর্তে পিছিয়ে নেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।অনলাইনে চলছে একাডেমিক কার্যক্রম।আমাদের শ্রদ্ধেয় ভিসি স্যার সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেন। তাঁর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে।
সম্প্রতি তিনি আরও জানান করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে অনলাইনেই সেমিস্টার ফাইনাল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।তাঁর এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছি।”
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান– “দেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর ৬৬ হাজার মতো(মোট আক্রান্ত ৬৫৭৬৯জন) মোট মৃতের সংখ্যা ৮৮৮জন। এই করোনার সময়ে দেশের সবজায়গাতেই চলছে লকডাউন, লকডাউনের জন্যে থেমে রয়েছে দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি নিজেও রয়েছি স্বাভাবিকভাবে এই নিয়মের বাহিরে। অন্তরায় ঘটছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানে।
লাকডাউনের জন্যে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সমস্যার সমাধানে লক্ষে চলছে লকডাউনের মধ্যে আমাদের অনলাইন ক্লাস। মোটামুটি সিংহভাগ সিলেবাস শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের সম্মানিত শিক্ষকগণ। আর অনলাইন ক্লাসের সুবাদে আমরাও ঘরে বসে আমাদের সেমিস্টারের পড়াশোনা করতে পারছি আমাদের মতো করে। আমাদের মাননীয় উপাচার্যের বিচক্ষণ পরিকল্পনা ছাড়া হয়তো এটা সম্ভব হতো না।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দেশের এই মহামারীর করুন মুহূর্তে সুষ্ঠু ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরে আমি আমাদের মাননীয় উপাচার্য স্যারের কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। পরিশেষে করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন নিয়ে এই কথাই বলবো,এটা সঠিক যে করোনা রোগটি দ্রুত সংক্রামিত হয়, কিন্তু করোনা হলেই যে মৃত্যু এমনটা কিন্তু না।শারীরিক উপযুক্ততা ও অন্য কোন ফুসফুস ও হার্ট জনিত সমস্যা না থাকলে করোনা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায় ।
সুতরাং, আমরা সবাই নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবো। পরস্পরের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করবো। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাহির হবো না। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোবো । যথাসম্ভব গরম পানির ভাপ নিবো এবং গরম পানি পান করবো।”