মাজেদুল ইসলাম
করোনা ভাইরাস একবিংশ শতাব্দীর জনজীবনে নেমে আসা এক আতংকের নাম। করোনা ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে মানুষের নিত্যনৈমত্তিক রুটিন।
ঘরের সাথে যে মানুষটার শুধুমাত্র খাওয়া আর ঘুমের সম্পর্ক বা অনেক সময় খাওয়াই হইতো না, সে মানুষটা আজ সারাদিন ঘরে অবস্থান করছে। সারাবিশ্ব আজ লকডাউন। বৃদ্ধি পাচ্ছে জনজীবনে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা এবং গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির আজ বেহাল অবস্থা!
স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। তবে বাংলাদেশের মতো ৩য় বিশ্বের দেশগুলিতে, যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরণে জীবন যায় যায়! সেখানে লকডাউন বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
তাই সরকার করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে সাধারণ ছুটি বাতিল করে শুধুমাত্র শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রেখেছে। কেননা, আজকের শিশুরা আগামীর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে,যেটাকে সাধুবাদ জানাই।
যদিও অনেক স্কুল,কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অনলাইন কার্যক্রম চালু রেখেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ছাত্রছাত্রীরা সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রামীণ ও গরীব পরিবারের হওয়ায় তাদের নিজেদের খরচে অনলাইন ক্লাসের কথা চিন্তা করা আর বালির বাঁধ বাধার কথা চিন্তা করা একই কথা!!
তবে বাংলাদেশের অনেক গ্রামে করোনা ভাইরাস তেমনটা প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় এসব বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুকছে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বী হচ্ছে যা বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে অনেকখানি এগিয়ে নিতে সম্ভবপর বলে মনে করি।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে জানতে পারি-
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের
৭৭ ব্যাচের রমজান ও নাসিম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের আলমগীর তার নিজ এলাকা নওগা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর বিখ্যাত আমগুলো প্রথমবারের মতো সারাদেশে কুরিয়ারযোগে মানুষের দোরগোড়ায় পাঠিয়ে একইসাথে মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সেই সাথে আমগুলো নষ্ট হওয়ার হাত রক্ষা পেতে এবং খামারীদের পাশে দাড়ানোর মতো সাহসী পদক্ষেপ দেশ তথা জাতির ভাগ্য উন্নয়নে অনেকটাই সহায়ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭-১৮ সেশনের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র শফিকুল খান প্রায় ৩০ শতাংশের একটা পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ ও হাস পালন শুরু করেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৪ ব্যাচের ছাত্রী শাকিলা গরুপালন, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯-২০ সেসনে ছাত্রী রাফিয়া জান্না রত্না তার এলাকায় ফ্রি স্টুডেন্ট পড়িয়ে এবং এলাকাবাসীর মধ্য শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এছাড়াও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্রী সুমি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ বর্ষের শাহরিয়ার তার নিজ এলাকা দিনাজপুরের লিচু সারাদেশে সাপ্লাই করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ তাদের পতিত জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছের সাথে ঘাস,হাস পালন ও সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করছে।
একইভাবে,তিতুমীর কলেজের সোয়াইব খান এলাকায় ছাগল পালন,ধান ও ভুট্টার স্টক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
শেকৃবির এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্টের ১৭-১৮ সেশনের ছাত্র আসিফ নেওয়াজ শুরু করেছে তার অর্গানিক ফুডের অনলাইন বিজনেস।
শেকৃবির ৭৫ ব্যাচের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মমিন সরকার শুরু করেছে কৃষি সেবা। করোনায় ঘরে বন্দী সময়কে কাজে লাগাতে নিজের অর্জিত জ্ঞান ও ইন্টারনেটকে কাজে লাগানোর ভাবনা থেকে কৃষি বিষয়ক অনলাইন গ্রুপ চালু করেছে।
যেখানে কৃষি সংশ্লিষ্টদের ফসলের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নিজে যেমন শিখছে, অন্যরাও উপকৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে কৃষক ও কৃষির ফলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা করোনার দরুন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় উদ্যোক্তামূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে যা বেকার সমস্যা লাঘবে অনেকটাই সহায়ক।
ফলে ছাত্রছাত্রীদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগিয়ে বাস্তবমুখী শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে আগামির অর্থনীতিকে সচল করতে অনেকটাই ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী।
লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ,
৭৭ ব্যাচ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।